বিকেলের আলোয় এক বৃদ্ধ দম্পতির নিবিড় ভালোবাসার মুহূর্ত।
বিকেলের শেষ আলোটা,
আজও জানালার কার্নিশে এসে বসেছে,
সূর্যটা প্রতিদিন খোঁজ নেয়–
আর খোঁজ নেয় দু’জন দু’জনের।
বৃদ্ধ স্বামীর হাতটা স্ত্রীর চিবুকে।
চামড়া গুটিয়েছে, তাতে কি?
ছোঁয়া তো সেই একই আছে।
দুজনেই জানে, সময় আর বেশি নেই।
এ পৃথিবী আজ তাঁদের অতিথিশালা।
অথচ মন এখনো ঘরের মেঝেকে জড়িয়ে,
আর জড়িয়ে দুজনের মায়াকে।
( হাঁড়ির জলে সিদ্ধ হয় শূন্য, কিন্তু জ্বালিয়ে রাখতে হয় আগুন,
কারণ খিদেকে যেন বোঝানো যায়, দেখো চেষ্টা করছি।
পড়ুন– Click: ওরা কি জানে ওরাও মানুষ? )
কত হাসি, কত অভিমান, হৈ-হুল্লোর।
আজ সব থেমে গেছে,
সময় যেন গুটিয়ে নিয়েছে হাত।
যেন নিঃশব্দে কেউ বলে গেল–
“সময়ের বৃদ্ধ আঙুল ঠেকেছে কাঁধে,
চলো এবারে ফিরতে হবে।”
স্বামীর হাত জলে ভেজে।
ভারী মনে স্ত্রী জানায়–
“তুমি চিঠি লেখো তাঁকে,
যে আমাদের নিয়ে যাবে।
লেখো– আর ক’টা দিন যেন দেয়।”
“এই তো সেদিন–
লাল বেনারসীতে, আগুন সাক্ষী রাখলাম।
প্রতিশ্রুতি কি এক জীবনেরই ছিল?
আজকাল বহু কিছু ভুলে যাই,
যেমন ভুলে যাই বিদায় নেওয়ার কথা।”
এবার বুঝি নিভে যেতে বসেছে আগুনটা।
তবু তাতে রয়ে যাবে আলো,
ভালোবাসার শেষ ধোঁয়া।
“কত বছর কেটে গেল, কে জানে?
দিন, মাস, বছর–
সব যেন মিশে গেছে অন্তর্লীন অন্ধকারে।”
“সময়টা কে যেন চুরি করে নিয়ে গেল,
অথচ চোরকে ধরার কোনো উপায় নেই।
হ্যাঁ গো–
পরের জন্ম বলে কিছু আছে?”
স্ত্রীর চোখে যেন শিশুর মত আশার আলো।
“আমার যা কিছু আছে,
সব আজ খেলনা মনে হয়।
মনে হয়, কিছুই ছিল না তোমার মত অমূল্য।
আমি ভয় পাই জানো?
ভয় পাই, যদি আগে-পরে হয়?”
“এ ঘর, এ চৌকি, এ চশমা, এ কাপ–
সবই সাক্ষী থাকবে একজীবনের,
আর সাক্ষী থাকবে সূর্য।”
বাইরে হাওয়া দোলাচ্ছে তালপাতার ফাঁকে,
যেন সময়ও কেঁপে উঠবে।
হঠাৎ দুজনেই পাথর,
যেন পৃথিবীর শেষ দু’জন মানুষ।
আর মৃত্যুকে ভয় নেই,
শুধু হারানোর ভয়, যন্ত্রণা।
চোখে জল, মৃদু হেসে স্বামী জানায়–
“আমি আগে গেলেও,
তোমার চায়ের কাপে রেখে যাব উষ্ণতা।”
“বলোতো–
ভালোবাসা কি মরণের পরও থাকে?”
স্ত্রীর প্রশ্ন যেন ঝুলে রইল বাতাসে।
মিনিট খানেক, স্বামী বলে–
“থাকে থাকে,
কারণ ভালোবাসাই তো মৃত্যুকে ছোট করে দেয়।”
“আগামী সূর্য, তার আলো নিয়ে,
জানালায় খোঁজ নিতে আসবে?
আগামীকাল বলে দেব–
আমার স্বামীর দেওয়া বেনারসীটা যত্নে রেখে দিও।”
তবু মন বলে আরও একদিন,
আরও এক বিকেল।
আরও এক কাপ চা, দুজনে মিলে।
এ জীবনের যত অভিমান, অভিযোগ,
আজ গলে যাচ্ছে এক পরম স্নেহে, ভালোবাসায়।
হয়তো এই ভালোবাসাই ভগবানের আসল চিঠি,
যা প্রতিটা মানুষের কপালে লেখা হয়,
যাওয়ার আগে।
ফিসফিসিয়ে ওঠে স্ত্রী–
যেন কেউ শুনে নেবে,
কোনো গোপন খাজানার সন্ধান।
“তুমি আমায় ভুলে যেও না।”
“ভুলতে পারলে তো মানুষ হতাম।”
স্বামীর উত্তরে চোখে জ্বলে ওঠে এক পৃথিবী খুশি।
বাইরেটা এখন অন্ধকার,
কিন্তু ঘরের ভিতরে আলো আছে।
মোমবাতির নয়, মন থেকে আসা।
জীবন ফুরিয়ে গেলেও,
গল্পটা কিন্তু শেষ নয়,
শুধু অধ্যায় বদল।
“হয়তো পরের জন্মে দেখা হবে,
নতুন দেহে, নতুন পোশাকে।
চোখে চোখ রেখে বলবো–
চলো, এবারেও থাকি একসাথে।”
স্ত্রীর চোখে লজ্জা ভেসে ওঠে শুভদৃষ্টির মত।
( তুই আকাশ চেয়েছিলি , বৃষ্টি , ঝড়-বিদ্যুৎকে মাথায় করে নিয়ে,
বুকের ঠিক মাঝখানে আকাশ পেতে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম ঘন্টার পর ঘন্টা।
আমার অলিন্দে যে পালঙ্কটা পেতেছিলাম,
তা শুধু তোর জন্যে, তুই মাথা রাখিসনি।
পড়ুন– Click: একটা রক্তাক্ত বিষুবরেখা! )
মানবতার মন্দিরে ধর্ম এক সুর সে মানুষ হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, কিংবা হোক বৌদ্ধ, জৈন…
হারানো সভ্যতার নিঃশ্বাস ঘন জঙ্গলের বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন পাথরের দেয়াল; লতা-গুল্ম যেন সময়ের…
রাজনীতি এখন ধর্ম নয়, রক্তচাপ মানুষ এখন শুধু ভোটে রাজনীতি করে না– রাগে, ভালোবাসায়, ঘুমে,…
ঈশ্বর আছেন, না নেই?– ন্যায়ের খাঁড়ায় বিশ্বাস ও অস্থিরতা মানুষের মন বহুবার একই জায়গায় এসে…
পৃথিবীঃ এক ঘূর্ণনশীল অবিরাম রহস্যের জন্মভূমি পৃথিবী আমাদের জন্মভূমি, এক অবিরাম রহস্যের ঘূর্ণায়মান গ্রহ। আমরা…