Articles

পুরুষতন্ত্রে নারীর জীবন!

পুরুষতন্ত্র ও নারীর চলাফেরাঃ

অদৃশ্য বিচার ও সীমাবদ্ধতা

পুরুষতন্ত্রের দাপটে সমাজ আজও নারীর চলাফেরা, পোশাক, হাসি-কান্না
ও দৈনন্দিন স্বাভাবিকতাকে অদৃশ্য বিচার হিসেবে ব্যবহার করে।
নিয়ন্ত্রণের পুঁজি হিসেবেই সেগুলোকে কাজে লাগায়।

রাস্তা, অফিস, বাস, ট্রেন– যেখানে নারীরা, মেয়েরা নিরাপদে চলতে চায়,
সেখানেই লুকিয়ে থাকে চোখে চোখে নজরদারি।
ধর্ষকের হাত থেকে নারীর নিরাপত্তা এ সমাজে আজও প্রশ্নবিদ্ধ,
ফলে অপরাধী পায় মুক্ত অক্সিজেনের পুরোটাই, পায় অফুরন্ত মনোবল।
আর ভুক্তভোগী, তাঁর পরিবার ও অন্যান্য মেয়েরা শেখে মাথা নিচু করে বাঁচতে।
শ্বশুরবাড়ি ও সামাজিক উৎসবে মেয়েদের স্বাধীনতা সীমিত,
প্রতিটা পদক্ষেপ পরীক্ষা-অনুমতির উপরে নির্ভরশীল।

রাস্তায় স্বাধীনতার স্বপ্ন ও ভয়

হাফপ্যান্ট আর টি-শার্ট পরে, রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা একজন কাকু,
সুখ-চুমুক লাগাচ্ছেন ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে।
চা পান করে, বাজার-টাজার সেরে,
নির্দ্বিধায়, নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে দিব্যি ফিরে এলেন বাড়িতে।
বিষয়টা একদম স্বাভাবিক, গতানুগতিক, সোজা-সাপ্টা।

কিন্তু কাকুর জায়গায় যদি হত একটা যুবতী মেয়ে,
সেটা হত অস্বাভাবিক, অ-গতানুগতিক, সোজা-সাপ্টা না হওয়া এক বিষয়।
অপরাধের মতন।

আপামর পুরুষ সে সময়ে হয়ে উঠত বিচারক।
অভিযোগগুলো এক একটা পাথর হয়ে আছড়ে পড়ত মেয়েটার গোটা দেহে।
পাশাপাশি– ওই চা খাওয়ার মুহূর্তে,
মেয়েটার চোখের কোণায় লেগে থাকত সতর্কতা, মাথায় চলত ভয়।
আর শরীরের প্রতিটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হালকা কাঁপত সঙ্কোচে।

অথচ বাড়িতে এসে স্ক্যানারে দেখা যেত–
মেয়েটার পায়ের খোলা অংশে ইতিমধ্যে পড়ে গেছে অসংখ্য কালো দৃষ্টির দাগ।
যেন মারাত্মক চর্মরোগে লাল ও ক্ষত হয়ে, মুহূর্তেই ভরে উঠল মেয়েটার খোলা পা টা।

( তোমাদের সিদ্ধান্ত রাজনীতি হতেই পারে, কৌশল হতে পারে,
হতে পারে প্রশংসার কারণ।
কিন্তু এর ফল– জীবন, মৃত্যু আর প্রজন্মের ভাগ্য হতে পারে না।
পড়ুন– Click: মানবতার খনিতে আজও ইউরেনিয়ামের গন্ধ! )

সমাজের নজরদারি ও সমালোচনা

এরপর শুরু হল সমালোচনা, গুঞ্জন, নেতিবাচক মন্তব্যের কালবৈশাখি।
“কাদের বাড়ির মেয়ে?
ছিঃ আজকাল সব মর্ডান হচ্ছে, মর্ডান।
মা-বাবার শিক্ষা নেই, সংস্কৃতি একেবারে গোল্লায় গেল,” ইত্যাদি।

প্রত্যেকটা দিন সমাজে মেয়েদের আজও চলতে হয় এসব মাথায় রেখে।
তবুও তাঁরা মেশে সবার সাথে, মিশতে চায়, হাসতে চায়।
প্রকাশ করতে চায় তাঁদের অনুভূতি।
জীবন কাটাতে চায় স্বাভাবিকভাবেই।

গণতন্ত্রের মুখোশের আড়ালে যে লুকিয়ে থাকে পুরুষতন্ত্রের শাসন,
তা নিয়ে তাঁরা কোনো আন্দোলন, প্রতিবাদও আজ পর্যন্ত করেনি।
তাঁরা বলেনি–
“এ তন্ত্র আমাদের জীবনে সমতা নয়, বরং যন্ত্রণা ঢুকিয়ে দেয় প্রতিদিন।
তাঁরা বলেনি–
“একবার অন্তত ১০ বছরের জন্যে চালু হোক নারীতন্ত্র,
তখন দেখি তোমাদের কেমন লাগে?”

রাতের সমাজে নারীর জীবন

গভীর রাতের খোলা সমাজ– এখনও মেয়েদের জন্যে এক অভিশপ্ত পৃথিবী।
পুরুষের খেলা-ধুলা হয় মুক্ত আকাশের তলে, কিন্তু মেয়েদের জন্যে মাঠ মানে সীমারেখা।
কাজের অফিস ঘরগুলো নারীসুলভ নয়, বারবার সংরক্ষিত নিয়মে সীমাবদ্ধ।
সামাজিক উৎসব ও মেলা মেয়েদের জন্যে পূর্ণ আনন্দের নয়,
বরং অদৃশ্য নজরদারির স্থান।
বাসে-ট্রামে, ট্রেনে মেয়েদের সিট সংরক্ষিত।
কিন্তু তা যাত্রী হিসেবে, মানুষ হিসেবে নয়।
এ কেমন সমতা?

শ্বশুরবাড়ি ও নিয়ন্ত্রণের জাল

বিষয়টা যদি হয় শ্বশুরবাড়ির–
তো মাকড়সার জালের মত বৌমাকে জড়িয়ে ধরে থাকে নীতি, নিয়ম।
প্রতিটা পদক্ষেপ যেন সেখান থেকে বলে ওঠে–
“নিয়ন্ত্রণ রাখো।”
শ্বশুরবাড়ির নিয়ম আর শিষ্টাচারের বাঁধন কেবল শারীরিক সীমাবদ্ধতায় নয়।
বরং মানসিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের এক অপরিসীম জাল।
বৌমার হাতে যে ছোট্ট স্বাধীনতা থাকে,
তা যেন সর্বদাই পরীক্ষা আর অনুমতির উপরে নির্ভরশীল।
প্রায় সবই নির্ধারিত।

মানসিক চাপ ও দৈনন্দিন নিরাপত্তা

এ অবস্থায়–
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মেয়েদের উপরে চাপিয়ে রাখা এই ট্র্যাডিশনের পাহাড়,
একজন মেয়ে বা নারীর জীবনের উপরে কি পরিমাণে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে,
তা নিয়েও বিশেষ কোনো গবেষণা আজও হয়নি।
কোনো পরিসংখ্যান নেই, কোনো সামাজিক মূল্যায়ন নেই।
কোনো সংগঠিত প্রশ্ন নেই, কোনো প্রতিরোধ আজও নেই।

রাস্তায় হাঁটতে গেলে প্রথমে যেন পোশাক নয়, ভয়টা তাঁদের পরে নিতে হয়।
রাতে বাইরে বের হলে সাথে ব্যাগ নয়, থাকতে হয় আত্মরক্ষার অদৃশ্য পরিকল্পনা।
মেয়েরা ঘর থেকে বের হয় শুধু গন্তব্য ভেবে নয়।
ভাবতে থাকে–
“যদি কিছু হয়, তবে বাঁচবে কিভাবে?”

পুরুষদের উপরে এ হামলা কিন্তু মেয়েরা কোনোদিন করে নি, করে না।
অথচ পিটুইটারি উভয়ের শরীরেই আছে।
তবুও সহিংসতার পরিসংখ্যানের প্রায় সম্পূর্ণটাই পুরুষের দখলে।
মেয়েরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আজও বাঁশি বাজায়নি, টোন করেনি।
কোনোদিন বাসে-ট্রেনে উঠে হেলে পড়েনি কোনো পুরুষের গায়ে।
কোনোদিন রাত্তিরে দল বেঁধে, মদ খেয়ে কোনো পুরুষের শরীর খুঁজে বেড়ায়নি।

( যে ডাকাতি শুধু সম্পদ নয়, ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ভারতবাসীর মর্যাদাও!
পড়ুন– Click: কোহিনূর থেকে ধানক্ষেত– ঔপনিবেশিক ডাকাতদের সেই প্রায় ১৯০ বছর! )

পুরুষতন্ত্র ও নারীর, মানুষের অধিকার

এখন প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়–
তবে যে লিঙ্গ এত সহনশীল, এত ডিসিপ্লিনড, সেই কেন এত দুর্বল নাম পায়?
আর যে লিঙ্গ সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক, হিংস্র, অশালীন,
সে-ই কেন নামে শক্তিশালী?

আদতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কি নারীকে অন্তরের চোখ দিয়ে দেখে?
মানুষ হিসেবে আদৌ দেখে?
না দেখে এক সামাজিক বস্তু হিসেবে।
যাদের জীবন পুরুষ আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে অসংখ্য অলিখিত নিয়মে?
শরীর তাঁদের, কিন্তু এর ব্যবহার, চলাফেরা, হাসি-কান্না,
সব যেন পুরুষতন্ত্রের অনুমোদনের উপর নির্ভরশীল।

যেন নারী মানে কেবল এক অস্থায়ী ভোগ্যবস্তু–
সময় হলেই ব্যবহার করা যাবে।
আবার সময় ফুরোলেই, ফেলে রাখা যাবে উপেক্ষার ঝুড়িতে।

মেয়েদের কখনো শেখানো হয়নি– “পুরুষ দেখলেই সাবধান থাকবে।”
কিন্তু পুরুষদের এখনও শেখাতে হয়– “মেয়ে মানে মানুষ।”
কবে বদলাবে এই অসম মানদণ্ড?
কখন শেষ হবে এই অদৃশ্য বিচারসভা?
একটা মেয়ে যখন রাস্তার মোড়ে চা খাবে, তখন লোকে তাকাবে “মানুষ” হিসেবে–
লোলুপ দৃষ্টিতে নয়।
কবে জন্মাবে এ মনোভাব?

অথচ পরিবর্তনটা খুব কঠিন নয়, শুধু এতটুকুই।
মেয়েদের “নিজেদের সম্পত্তি” নয়,
দেখতে শিখতে হবে “স্বাধীন সত্তা” হিসেবে।
নারীর পোশাক নয়, পুরো পাল্টাতে হবে দৃষ্টিভঙ্গি।
মেয়েদের শরীর নয়, পরিষ্কার করতে হবে মানসিকতা।
ভাবতে শিখতে হবে, পোশাকি স্বাধীনতা শুধু পুরুষ নয়, মেয়েদেরও থাকা উচিৎ।
মেয়ে বা নারীরা কখনই সমতার ভিক্ষেও চায়নি,
চেয়েছে শুধু তাঁদের পুরষের মত “মানুষ” হিসেবে দেখার অধিকার।

চোখের বিচার বনাম নারীর স্বাধীনতা

আজও কোনো মেয়ে যদি নিজের দেহকে সাজাতে চায় নিজের মনের মত করে,
প্রশ্ন, টিটকিরি, সমালোচনা, উপহাস-এর বাণ যেন বিদ্যুৎ গতিতে এসে বিদ্ধ করে তাঁকে।
কেউ পোশাক নিয়ে, কেউ মেক-আপ নিয়ে।
কেউ চেহারা নিয়ে, রং নিয়ে, কেউ রূপ নিয়ে।
যেন সেই মেয়েরা একেকজন পুরুষ সমাজের ফ্রি এক্সহিবিশন
কেউ ভুলেও ভাবে না, জানতে চায় না– তাঁদের মতামত কি?
তাঁদের ইচ্ছে-অনিচ্ছে কি?

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর ঠোঁটের লিপস্টিকের রং দেখে আপত্তি জানায়,
কিন্তু পুরুষের মন্তব্যের কটু গন্ধ শুঁকেও দিব্যি জীবন কাটায়।
নারীর পোশাকের সাইজ মাপতে পুরুষের আগ্রহ সীমাহীন,
কিন্তু নিজেদের মানসিকতার সাইজ মাপতে কেউ রাজি নয়।

লজ্জা নারীর ভূষণঃ এক প্রাচীন ধাঁধা

“লজ্জা নারীর ভূষণ”– বাক্যটা শুনলেই মনে হয়,
নারীর জীবনে লজ্জা একধরণের আবশ্যিক অলঙ্কার।
এক সামাজিক নীতি।
ইতিহাস, সাহিত্য, কাব্য, নাটক, উপাখ্যান, এমনকি পুরাতন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রথার আড়ালেও,
এই ধারণা প্রচলিত হয়েছে বহু আগে থেকেই।
এবং আজও সমাজ মর্যাদার সাথে তা মান্যতা দেয়।
মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই শিখছে– শান্ত থাকতে হবে।
শালীন থাকতে হবে, কারুর চোখে পড়া যাবে না।
কথা বলতে হবে সংযমে।

এরপর সমাজ এই ধারণা ভিতরে গেঁথে দেয়–
“লজ্জাই হল নারীর শোভা, ভদ্রতা এবং চরিত্রের মানদণ্ড।”

লজ্জা আসলে এক সামাজিক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার

কিন্তু সত্যিই কি লজ্জা নারীর ভূষণ?
না, লজ্জা হল সামাজিক নিয়ন্ত্রণের এক হাতিয়ার মাত্র।
লজ্জা বোধকে মূলত ব্যবহার করা হয় নারীর স্বাভাবিক স্বাধীনতা আটকাতে।
বলা হয়–
“এটা করলে লজ্জার চিহ্ন পড়বে।”

কিন্তু বাস্তবে, লজ্জা কোনো চরিত্র নয়।
এটা পুরুষতন্ত্রের সুকৌশলে তৈরি এক শৃঙ্খল।
যা নারীর স্বাধীনতাকে স্বচ্ছন্দে পিছনে ঠেলে দেয়।
যত লজ্জা যেন নারী বা মেয়েতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ, পুরুষে নয়।
লজ্জা তো পুরুষেরও ভূষণ হতে পারে?

লজ্জা জন্মায় ভয় ও আত্মসংকোচ

যখন বলা হয়– “লজ্জা তোমার সৌন্দর্য,” তখন নারীর মনে জন্ম নেয় ভীতি।
তাঁরা চলাফেরা সীমিত করে, কথা বলা সীমিত করে।
নিজের ইচ্ছে দমন করে, এই লজ্জা কোনো অলঙ্কার নয়।
এটা এক অদৃশ্য বাঁধন।

লজ্জা নয়, সাহসই নারীর আসল অলঙ্কার

যে নারী সাহসের সাথে বাঁচে,
নিজেকে প্রকাশ করে, নিজের মত করে কথা বলে–
প্রকৃত অর্থে সৌন্দর্য ও শোভা বহন করে সে-ই।
সে নিজের পথ বেছে নেয়, অন্যের অনুমোদনের অপেক্ষায় বসে থাকে না।
সে শব্দের বাঁধন ভাঙে, নিজের চিন্তা স্বাধীনভাবে প্রকাশ করে।
ভয়কে পিছনে ফেলে সে দাঁড়ায় সমাজের সমালোচনার মুখোমুখি।

তাঁর অস্ত্র লজ্জা নয়– সাহস।
তাঁর অলঙ্কার– আত্মবিশ্বাস।
লজ্জার চাপ নয়, বরং তাঁর প্রতিটা পদক্ষেপে জাগে গৌরব।

রাজনীতি, বিচার ও নারীর নিরাপত্তাঃ

ন্যায়বিচারের অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব

ধর্ষকদের শাস্তি ভারতে আজও বুঝিয়ে দেয়–
মেয়েদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা আজ ঠিক কোন স্তরে পড়ে আছে।
ধর্ষকদের শাস্তি ভারতে আজও অনেক সময় অসম্পূর্ণ ও দেরিতে হয়।
বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘ।
এছারা প্রায়শই আতঙ্কিত সাক্ষী ও দুর্বল তদন্তের কারণে ন্যায়প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।
পাশাপাশি চলে প্রমাণ বা সাক্ষী লোপাটের দুরন্ত প্রক্রিয়া।
রাজনীতিকরা বিষয়গুলোকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখেন,
মানুষ বা ন্যায়ের চোখে নয়।
নেতাদের কাছে অধিকাংশ ঘটনা ভোট ও জনপ্রিয়তার প্রেক্ষাপটে মূল্যায়িত হয়।
সাধারণ নাগরিক যখন ন্যায় প্রার্থনা করে,
তাঁদের অভিযোগ প্রায়শই তুচ্ছ ও অবহেলিত মনে হয়।

অনেক সময় সংবাদমাধ্যমের চাপে, নেতারা নাটকীয় প্রতিশ্রুতি দেন–
কিন্তু বাস্তবে কাজ হয় না বলাটাই শ্রেয়।
যদি এরূপ ঘটনা কোনো নেতা-মন্ত্রীর পরিবারের কারুর সাথে হত,
তাহলে বদলে যেত পদক্ষেপ।
নেতা-মন্ত্রীদের রাজনৈতিক স্বার্থ, পুলিশের আচরণ,
আদালতের ধীর গতি আর তদন্ত কমিটির অস্পষ্টতা–
সব মিলিয়ে ধর্ষকদের মনোবল আরও চাঙ্গা করে দেয়।
পাশাপাশি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় বাকি মেয়েদের মনোবল।
ফলাফল– অপরাধী মাথা উঁচু করে বাঁচে,
আর ভুক্তভোগী ও সমাজের অন্য মেয়েরা বাঁচতে শেখে মাথা নিচু করে।

এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো–
আজ মেয়েরা স্ব-মহিমায় উঠে আসছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বুকে নিজেদের লজ্জা ভুলে।

কি করা উচিৎ?

দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনঃ

নারীর স্বাধীনতাকে “সম্পত্তি” বা “বস্তু” হিসেবে না দেখে স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে দেখা উচিৎ।

শিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতাঃ

লজ্জা ও ভয়কে নারীর অস্ত্র না বলে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করা।

ন্যায়বিচারের দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থাঃ

অপরাধীদের শাস্তি যাতে সময়মত ও সম্পূর্ণ হয়,
এবং ভুক্তভোগী ও অন্যান্য মেয়েদের মনোবল ক্ষুণ্ণ না হয়।

মানসিক ও সামাজিক সমতাঃ

মেয়েরা যেন নিজের ইচ্ছে, পোশাক, চলাফেরা এবং হাসি-কান্না স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ করতে পারে।

সাহস ও আত্মবিশ্বাসকে উৎসাহ দেওয়া

নারীর স্বাধীনতা কেবল আইন নয়, বরং সাহস ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।

যদিও এর কোনোটাই আদৌ কোনোদিন সম্পূর্ণ হবে বলে মনে হয় না।
বিশেষত– ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
বর্তমান সমাজের চরিত্র ও রাজনীতিবিদদের যা আচরণ–
তা দেখে, জেনে, বুঝে বলতে হয়– শুধুমাত্র মনের শান্তির জন্যে যেন এই লেখা।
কারণ– আস্থা, আশা-ভরসা, বিশ্বাস সব আজ কোমায়।

 

 

Articles Bangla

Recent Posts

স্বামী বিবেকানন্দ– বিশ্বমঞ্চে আলোড়ন সৃষ্টির সেই মুহুর্ত!

মানবতার মন্দিরে ধর্ম এক সুর সে মানুষ হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, কিংবা হোক বৌদ্ধ, জৈন…

2 days ago

মায়ান রহস্য– হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার সন্ধানে!

হারানো সভ্যতার নিঃশ্বাস ঘন জঙ্গলের বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন পাথরের দেয়াল; লতা-গুল্ম যেন সময়ের…

3 days ago

ঈশ্বর এখন রাজনীতির প্রার্থী!

রাজনীতি এখন ধর্ম নয়, রক্তচাপ মানুষ এখন শুধু ভোটে রাজনীতি করে না– রাগে, ভালোবাসায়, ঘুমে,…

5 days ago

ঈশ্বর আছেন, না নেই?– ন্যায়ের পরীক্ষা!

ঈশ্বর আছেন, না নেই?– ন্যায়ের খাঁড়ায় বিশ্বাস ও অস্থিরতা মানুষের মন বহুবার একই জায়গায় এসে…

6 days ago

ডিজিটাল ভ্রমণ– রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা পৃথিবী!

পৃথিবীঃ এক ঘূর্ণনশীল অবিরাম রহস্যের জন্মভূমি পৃথিবী আমাদের জন্মভূমি, এক অবিরাম রহস্যের ঘূর্ণায়মান গ্রহ। আমরা…

6 days ago

ছায়ারও নিজস্ব সত্য আছে!

ছায়ারও নিজস্ব সত্য আছে, শুধু আলো বেশি পেলে– ওটা দেখা যায় না।  

1 week ago