মানুষ হিসেবে রেজিস্ট্রেশন
বাবা-মা গর্বে কাঁপেন,
প্রতিবেশী চিৎকার, তোয়াজে মত্ত।
সমাজ হাততালি দেয় লম্বা করে,
যেন এই মুহূর্তে জন্মেছে এক মহামানব।
আসলে জন্মেছিল ৩৭ বছর আগে,
কিন্তু ইদানিং তাঁকে রেজিস্টার করা হল “মানুষ” হিসেবে।

মানুষঃ যখন সুবর্ণযুগ
রাস্তা দিয়ে হাঁটলে মনে হয়,
কোনও ফেরারি ধুলো তুলছে।
অথবা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে এক মার্বেল প্রাসাদ।
দৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়,
হ্যাঁ, পৃথিবীতে আবার নেমে এসেছে “সুবর্ণ যুগ।”
সেন বাড়ির ছেলেটা আজ “মানুষ” হয়েছে।
পাশে বিশ্বঃ বড়লোক হলে
কতজন কত কিছু দিতে চায়।
দিতে চায় ভালোবাসা, সম্মান, ভক্তি।
যেন ঈশ্বরের দূত নেমে এসেছে ধরার বুকে।
যেন তাঁরা ছেলেটার পাশে দাঁড়াতে চাইছে।
বলে– “পাশে আছি!”
আসলে দাঁড় করাতে চাইছে নিজেদের স্বার্থ,
একটু অন্যভাবে।
ভাইফোঁটার রাজনীতিঃ স্নেহের বাজেট
পাশের বাড়ির টুসি,
এ বছর ভাইফোঁটায় সাজিয়েছে ১১ রকমের মিষ্টির ডালা।
সাথে বাগদা, ইলিশ আর কচি পাঁঠা।
যেন বাকি দোকানগুলো আত্মগোপন করেছে লজ্জায়।
এটা না দেখলে মনে হবে,
পৃথিবীর সবকিছু আজ সেন বাড়ির ছেলেটার অনুগত।
বিয়ে হলেও, টুসি কিন্তু কর্তব্যে অবিচল।
সেন বাড়ির ছেলেটা আজ “মানুষ” হয়েছে।
মানুষ হওয়ার প্রথম সরকারি প্রমাণ
কোনো উচ্চবাচ্য নেই, নেই অশান্তি,
কি ভীষণ সংযত ভাষা, নম্র, কর্মনিষ্ঠ।
গত বছর আর একটা বাংলো কিনেছে কাশ্মীরে,
যেন “মানুষ” হয়ে ওঠার প্রথম সরকারি প্রমাণ।
সেন বাড়ির ছেলেটা আজ সতিই “মানুষ” হয়েছে।
( সেই যে মানুষ নিজেকে ভেবেছে সর্বশ্রেষ্ঠ,
সে ভুল ধারণাই আজও তাঁদের গর্বের কারণ…
পড়ুন– Click: দাউ দাউ করে জ্বলছে বিবেক! )
মানুষ হওয়ার আনন্দ
কোনো সামাজিক বিষয়ে সময় পান না,
১৫ই আগস্টেও ডুবে থাকেন, ট্যাক্স ফাইলিং, স্ট্র্যাটেজির গভীরে।
নিজের ফার্মটা এবারে শিফট (Shift) করবেন কোলকাতায়।
কারণ– অযথা ভাড়া দেওয়াটা নিছক নির্বোধের কাজ।
ইনস্টাগ্রামে বাংলোর ভিডিও ছাড়েন,
ক্যাপশনে লেখেন, “মানুষ” হওয়ার আনন্দ, সকাল ৭.২০.”
ফলোয়ার্সদের ভালোবাসেন,
প্রশ্ন রাখেন, “কি বন্ধুরা, বাড়িটা কেমন হয়েছে?”
যেন আরও প্রশংসা শুনে, ব্যাকুলতা কমানোর এ এক মহৌষধ।
পাশাপাশি বোঝানোও হল,
আরও তোয়াজ চাই, বেশি বেশি।
জুকারবার্গ যখন অপরাধী
পাশের বাড়ির টুসি, খুশিতে আত্মহারা।
পারলে গণ্ডাখানেক লাইকের উপড়ে হুমড়ি খায়,
কারণ শাড়িটার দাম ছিল– ৬০০০ টাকা।
আর অপরাধী তো জুকারবার্গ,
সে তো ভালোবাসতেই চায়।
মানুষ, কিন্তু “বিশেষ”
সেন বাড়ির ছেলেটার কণ্ঠে ধোঁয়াশা নেই,
সব কিছু নিয়মমাফিক, হিসেব মত, নিখুঁত।
ফোন বাজলে, মুহূর্তে সাড়া দেন,
যেন গোটা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর সব তাঁর মুঠোয়।
ব্র্যান্ড, স্টাইল, বিলাসিতা, সব নিয়ন্ত্রিত।
শিল্পকলা, বই, গান, সবার উপরে পরিমিত।
তাই দেখলেই বোঝ যায়, তিনি “মানুষ,” কিন্তু বিশেষ।
মানবতা শূন্য, কিন্তু সমাজ উজ্জ্বল
হয়তো একদিন তাঁর নাম উঠবে ইতিহাসের পাতায়,
কিন্তু আজ শুধু হাতে হাততালি, চোখে চোখ ভরা।
এভাবেই সেন বাড়ির ছেলেটা,
আজকের পৃথিবীর রাজপথে হয়ে উঠল পুরো “মানুষ।”
আর পৃথিবী ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে মানবতা-শূন্য।
সেন বাড়ির ছেলেটা,
আজ মুখ উজ্জ্বল করেছে সমাজের, বংশের।
( সাধারণ মানুষ ছিল সে।
চা খেত, খবর পড়ত।
এরপর একদিন রাতের রাস্তায় হঠাৎ তাঁর মগজে হেঁচকি ওঠে,
আর বেরিয়ে আসে সেই ভেতরের দার্শনিক….
পড়ুন– Click: সম্মানীয় ধর্ষকের দর্শনঃ যখন রাজনীতিতে! )
Articlesবাংলা Bangla Articles, Quotes & Prose-Poetry / বাংলা প্রবন্ধ, উক্তি ও গদ্য-কবিতা।

