পৃথিবীঃ আমরা যার উপরে নয়, ভিতরে বাস করি
আমরা ভাবি আমরা “পৃথিবীর উপরে” বাস করি।
কিন্তু সত্যিটা হল– আমরা আসলে পৃথিবীর এক পাতলা খোসার ভিতরে,
একটা জীবন্ত গোলকের সামান্য উপরের স্তরে ভেসে আছি।
আমাদের পায়ের নিচে এমন এক জগৎ আছে, যেখানে আলো প্রবেশের অনুমতি নেই।
সময়ের হিসেব হারিয়ে যায়, আর মাধ্যাকর্ষণের নীরব ডাক আমাদের দিকে টেনে নেয়,
যেন বলে– “তোমরা যত উপরে উঠছ, আমি তত গভীরে লুকোচ্ছি।”
পৃথিবীর গঠন
পৃথিবীর ব্যাস প্রায় ১২,৭৪২ কিলোমিটার,
আর আমরা বাস করি এর মাত্র ৩০-৪০ কিলোমিটার উপরের স্তরে।
এমন এক অতি সূক্ষ্ম পর্দায়,
যা পুরো পৃথিবীর তুলনায় একটা আপেলের খোসার মত পাতলা।
আমরা যে পাথরের উপরে হেঁটে-চলে বেড়াই, জীবন-জীবিকা নির্বাহ করি,
তা আসলে একসময় অগ্নিগর্ভ থাকা গ্রহের ঠান্ডা হয়ে আসা ক্ষতচিহ্ণ।
( কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি–
ইতিহাসের কাঁধে দাঁড়িয়ে আছে এক ভয়াল-ভয়ঙ্কর সকাল।
যেখানে শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে তাঁর বিশ্বরূপ দেখান,
এবং সমস্ত প্রাণ, ও জীবন-মৃত্যুর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাঁর হাতেই।
পড়ুন– Click: নরকের সেই সকালঃ হিরোশিমা ও নাগাসাকি থেকে শিক্ষা! )
স্তরগুলোর গল্পঃ মাটির নিচে এক মহাজাগতিক কাব্য
ভূ-পৃষ্ঠ (Crust)– আমাদের ক্ষণিকের রাজত্ব
এই স্তরেই মানুষের সমস্ত ইতিহাস, সভ্যতা, প্রেম, যুদ্ধ, মৃত্যু।
এখানেই গড়ে উঠেছে সব মন্দির, প্রাসাদ, কবর আর স্বপ্ন।
কিন্তু গভীরে নামলেই সেই পরিচিত পৃথিবী ধীরে ধীরে মুছে যাবে।
পাথর গলে যায়, জল বাষ্প হয়ে উড়ে যায়, আর শুরু হয় অন্য এক রাজ্যের কাহিনী।
ম্যান্টেল (Mantle)– উত্তপ্ত অন্ধকারের হৃদস্পন্দন
ম্যান্টেল হল পৃথিবীর হৃদয়ের ছন্দ।
প্রতি মুহূর্তে এখান থেকে উঠে আসছে অগ্নুৎপাত, সরে যাচ্ছে টেকটোনিক প্লেট,
আর আমরা এর উপরে দাঁড়িয়ে ভুলে আছি–
আমাদের প্রতিটা স্থিরতা আসলে এই অস্থিরতারই সন্তান।
এখানে তাপমাত্রা কয়েক হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
পাথরও এখানে তরল হয়ে ধীরে ধীরে স্রোতের মত বয়ে চলে, যেন আগুনের অত্যন্ত অনুগত।
বলা যায় আগুনের নদী–
যেখানে জীবন ও মৃত্যুর সীমারেখা গলে গিয়ে মিশে গেছে এক অন্তহীন শক্তিতে।
বাইরের কোর (Outer Core)– তরল ধাতুর মহাসমুদ্র
এই স্তর মূলত তরল ধাতুরূপে লোহা আর নিকেল দ্বারা গঠিত,
সাথে আছে– সালফার, অক্সিজেনের মত হালকা উপাদানও।
যখন এটা ঘূর্ণায়মান হয়, তখন তৈরি হয় পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র।
অদৃশ্য এক শক্তিশালী ঢাল,
যা সূর্যের প্রাণঘাতী কণা ও সৌরঝড়ের হাত থেকে রক্ষা করে আমাদের প্রত্যেকটা নিঃশ্বাস।
অর্থাৎ, আমাদের প্রতিদিনের আকাশ, আলোর সকাল–
এ সবই টিকে আছে, এক অন্ধকার, তরল ধাতুদের নিরন্তর নৃত্যের কারণে।
ভিতরের কোর (Inner Core)– কঠিন আগুনের নাভি
এটাই আমাদের পৃথিবীর কেন্দ্র– লোহা ও নিকেল দ্বারা সৃষ্ট এক কঠিন ধাতব বল,
যার তাপ সূর্যের পৃষ্ঠের সমান, ৬,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই কেন্দ্রের কম্পনেই আমরা টের পাই ভূমিকম্পের কাঁপন।
এই নীরব আগুনের হৃদয়ই রাখে গোটা পৃথিবীকে জীবন্ত।
যেন এক বিশাল জীব– আর আমরা এর ত্বকের উপরে ঘুরে বেড়ানো ক্ষুদ্র কোষমাত্র।
মানুষ কতটা গভীরে নামতে পেরেছে?
১৯৭০ সালে রাশিয়া শুরু করেছিল এক দুর্ধর্ষ প্রকল্প– “কোলা সুপারডিপ বোরহোল।”
তারা পৃথিবীর গভীরে ঢুকে জানতে চেয়েছিল, মাটির নিচে, গভীরে ঠিক কি আছে।
ফলাফল– ১২.২৬ কিলোমিটার পর্যন্ত গিয়ে থেমে যায় অভিযান।
কারণ ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় যন্ত্র গলে যাচ্ছিল,
ড্রিল ভেঙে পড়ছিল শুকনো কাঠের সরু লাঠির মত।
আর এর নিচে? শুধুই নীরবতা।
এই গভীরতা পৃথিবীর ব্যাসের মাত্র ০.৩%,
অর্থাৎ– মানুষ তখনও পৃথিবীর ত্বকেই আঁচড় দিতে পেরেছে।
তবুও সেই গর্ত থেকে উঠে এসেছিল হাজার বছরের গোপন শব্দ,
মৃত মাইক্রোফসিল, আর এক ভয়ঙ্কর উপলব্ধি।
আমরা যে পৃথিবীতে বাস করি, এর ভিতরটার ব্যাপারে আমরা প্রায় কিছুই জানি না।
কেন মানুষ নিচে নামতে পারে না
অসহনীয় তাপ ও চাপ
প্রতি কিলোমিটারে গড় তাপমাত্রা বাড়ে ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১২ কিলোমিটারে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তা হয় ২০০ ডিগ্রি।
চাপ এত ভয়ঙ্কর যে, একটা পাথরের ভিতরে দাঁড়ালে,
চোখে পাতার এক ক্লিকেই গোটা মানুষটা গুঁড়ো হয়ে যাবে।
প্রযুক্তির সীমা
মানবসভ্যতা চাঁদে পৌঁছেছে, মঙ্গলেও পাঠিয়েছে রোভার, ল্যান্ডার, অরবিটার।
কিন্তু নিজের পৃথিবীর ভিতরে পাঠাতে পারেনি একটাও কার্যকর যন্ত্র।
এ যেন এক দার্শনিক ব্যঙ্গ–
আমরা আকাশ জয়ে মত্ত, অথচ নিজের পায়ের তলায় গভীরে হারিয়ে যাই।
অর্থনৈতিক বাস্তবতা
প্রতি কিলোমিটারে খোঁড়ার খরচ কোটি কোটি ডলার।
আর এর প্রতিদান– অজানা বিপদ, ভয় ও এক অন্ধকারের দৌরাত্ম।
মানুষ এখনও অজানাকে সামলাতে মানসিকভাবে ঠিক প্রস্তুত নয়।
কি লুকিয়ে আছে নিচেঃ
জীবনের গভীরতম রহস্য
অদৃশ্য প্রাণের সাম্রাজ্য
বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন এমন সব জীবাণু, যারা বেঁচে থাকে ৫ কিলোমিটার নিচে,
আলোহীন অক্সিজেনহীন, তাপ ও চাপে।
এদের বলা হয়–
ডিপ বায়োস্ফিয়ার, যাদের সংখ্যা পৃথিবীর সমস্ত জীবের মোট সংখ্যার ৭০% পর্যন্ত হতে পারে।
অর্থাৎ, পৃথিবীর বেশিরভাগ জীবন লুকিয়ে আছে পৃথিবীর গভীরতাতেই।
অদ্ভুত শব্দ ও প্রতিধ্বনি
কোলা গর্তের গভীরে শোনা গিয়েছিল এক ভৌতিক শব্দ।
কেউ বলেছিল– “এ এক নরকের চিৎকার।”
বিজ্ঞানীরা পরবর্তীকালে ব্যাখ্যা দেন–
ওগুলো আসলে ভূস্তরের বিভিন্ন বিক্রিয়াজাত কম্পন ও প্রতিধ্বনি।
কিন্তু মানুষ সেই শব্দে শুনেছিল নিজের ভয়কে।
কারণ অন্ধকারে আমরা সবচয়ে স্পষ্ট শুনি নিজেদের মনকে।
অজানা খনিজ ও রসায়ন
গভীরে পাওয়া গেছে এমন খনিজ, যা কেবল ম্যান্টলের চাপে থাকতে পারে,
যেমন– Perovskite, যা পৃথিবীর বাইরে কোথাও দেখা যায়নি।
হয়তো আরও নিচে আছে এমন উপাদান,
যা আমাদের পদার্থবিজ্ঞানের সংজ্ঞাকেই বদলে দেবে।
পৃথিবীর গভীরতাঃ বিজ্ঞান নাকি দর্শনের দরজা
যখন আমি, আপনি মাটিতে দাঁড়াই, ভাবি–
আমাদের নিচে ৬ হাজার কিলোমিটার দূরে ফুটছে আগুন,
আর আমরা সেই আগুনের উপরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি শান্তিতে।
পৃথিবীর অন্তঃপুর শুধু ভূতত্ত্ব নয়, এ আমাদের অস্তিত্বেরও প্রতীক।
আমরা জানি না নিজেদের আত্মার গভীরতম কেন্দ্রে ঠিক কি কি লুকিয়ে আছে।
মানুষের সব জিজ্ঞাসা– “আমি কে, কোথা থেকে এসেছি, কোথায় যাচ্ছি, যাব?”
এই প্রশ্নগুলোও ঠিক পৃথিবীর মতই, স্তরে স্তরে ঢাকা, উত্তপ্ত, অনাবিষ্কৃত।
ধাপে ধাপে ভূপৃষ্ঠের নিচে অবতরণ
মাটির তলায় লুকিয়ে থাকা পৃথিবীর রহস্য
আমাদের চোখে দেখা পৃথিবী যতটা পরিচিত,
ঠিক ততটাই অপরিচিত আমাদের পায়ের নিচের পৃথিবী।
ততটাই রহস্যঘন আমাদের ভূ-গর্ভ।
চলুন এবারে ধাপে ধাপে নামি পৃথিবীর গভীরে যতটা পারা যায়।
চলুন এক অদেখা অভিযানে–
যেখানে প্রতিটা গভীরতায় লুকিয়ে আছে ইতিহাস, মৃত্যু, জীবন,
মানুষের বুদ্ধিমত্তার ছাপ, আর অপার বিস্ময়।
পৃষ্ঠস্তর (০ ফুট)
এই স্তরেই পশু-পাখি, গাছ-পালা, নদী-নালা, হিংসে-বিদ্বেষ নিয়ে আমাদের বাস।
কেটে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
জীবনের এক সরব চত্বর, যেখানে–
আলো-বাতাস আর প্রাণ একসাথে বেঁচে থাকে।
১-২ ফুট নিচে
এখানে শুরু হয় এক গোপন নগরী।
ইঁদুর, সাপ, পোকামাকড়–
এদের নিজস্ব রাজ্য, যাদের অস্তিত্ব মাটির গন্ধে মিশে আছে।
৬ ফুট নিচে
এটাই মানুষের শেষ ঠিকানা– কবরের ঘর।
নিস্তব্ধতা, অন্ধকার আর চিরঘুমের দেশ।
১২-১৩ ফুট নিচে
১৯২২ সালে এখানে আবিষ্কৃত হয় রাজা তুতেনখামেনের সমাধি,
যা প্রায় ৩,৩০০ বছর পুরনো।
মিশরের সেই সমাধির দরজায় লেখা ছিল–
“যে কেউ এই নিদ্রা ভাঙাবে, তার উপরে আসবে মৃত্যুর অভিশাপ!”
২০ ফুট নিচে
এখানেই পাওয়া যায় লুকানো ধাতব বস্তু, পুরানো সভ্যতার চিহ্ণ।
কখনও হয়তো যুদ্ধের সময়ের বুলেট,
আবার কখনও হারিয়ে যাওয়া সাম্রাজ্যের নিদর্শন।
২৩ ফুট নিচে
ভিয়েতনামের গোপন “কু চি” টানেল,
যেখান থেকে যোদ্ধারা আমেরিকান সেনাদের চোখ এড়িয়ে যোগাযোগ রাখত,
আর লড়াই করত নিজেদের স্বাধীনতার জন্য।
৬৫ ফুট নিচে
প্যারিসের ক্যাটাকম্বোস– এক ভৌতিক নীচতল শহর।
এখানে আজও শুয়ে আছে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের কঙ্কাল।
এ এক অন্ধকারের নিঃশব্দ কবরনগরী।
১৮০ ফুট নিচে
চীনের আন্ডারগ্রাউন্ড আর্বান ফার্ম।
মাটির নিচে কৃত্রিম আলোয় এখানে চাষ হয় সবজি, জন্মায় গাছ।
প্রযুক্তির এ এক বিস্ময়।
৩২৮ ফুট নিচে
এখানে রাখা হয় নিউক্লিয়ার বর্জ্য,
যেন মানবসভ্যতার বিপজ্জনক উত্তরাধিকার কেউ ছুঁয়ে না ফেলে।
৩৪৬ ফুট নিচে
ইউক্রেনের কিয়েভ মেট্রো স্টেশন,
যা বিশ্বের সবচেয়ে গভীর মেট্রো স্টেশন।
এখানে ট্রেনের শব্দ যেন ভূগর্ভের হৃদস্পন্দন।
৪০০ ফুট নিচে
আফ্রিকার ফিকাস গাছের শিকড়,
যা পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরে প্রবেশ করা একমাত্র শিকড়।
এই শিকড় পৌঁছেছে মাটির ৪০০ ফুট পর্যন্ত নিচে।
এই গাছটার বয়স আনুমানিক শতাধিক থেকে কয়েকশ বছরের বেশি।
তবে কিছু রিপোর্টে বলা হয়েছে–
কিছু ফিকাস, ৫০০-৬০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
৭২০ ফুট নিচে
আফ্রিকার বুক চিরে বয়ে যাওয়া কঙ্গো নদী,
যা বিশ্বের সবচেয়ে গভীর নদী।
এর রহস্য আজও বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করে।
৯৫০ ফুট নিচে
জাপানের সেইকান টানেল,
যা সমুদ্রের নিচ দিয়ে যুক্ত করেছে দুই শহরকে।
মানুষের ইচ্ছাশক্তি এখানেও জয়ী।
১০০০ ফুট নিচে
এখানে তৈরি হয় নিউক্লিয়ার মিসাইল সাইলোস,
যা মানবজাতির সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্রের ঘর।
১৪০৩ ফুট নিচে
ডেড সি, বা মৃত সাগর– পৃথিবীর নিম্নতম স্থলভাগ।
এখানে ডুবেও মানুষ ডোবে না, কারণ জলের লবণাক্ততা পাহাড় সমান।
২৩০০ ফুট নিচে
চিলির সান জোশ-এ কপার মাইন।
এখানে ২০১০ সালে ৩৩ জন খনি শ্রমিক আটকা পড়ে ৬৯ দিন পর উদ্ধার হয়েছিল।
৭২১৫ ফুট নিচে
জর্জিয়ার ভোরোনিয়া গুহা।
এটা পৃথিবীর সবথেকে গভীর প্রাকৃতিক গুহা।
এখানকার অন্ধকার এখনও মানুষ পুরোপুরি দেখেনি।
১০,৫০০ ফুট নিচে
ভারতের কর্ণাটকের কোলার গোল্ড মাইন।
একদা সোনায় ভরা ছিল এই অন্ধকার গহ্বর।
২০০১ সালে খনি বন্ধ হলেও, সেখানের বর্জ্য থেকে সোনার সন্ধান এখনও চলছে।
কর্নাটক সরকার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে,
৭৫০ কেজি সোনা বার্ষিক উৎপাদনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।
১২,০০০ ফুট নিচে
এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে এক ক্ষুদ্র জীব– ডেভোনিয়ান কৃমি,
যা দিব্যি বেঁচে থাকে অক্সিজেনবিহীন অন্ধকারে।
পৃথিবীর সহনশক্তির এক যেন এক জীবন্ত প্রমাণ।
১৩,১২২ ফুট নিচে
নেপোনিং গোল্ড মাইন, যা দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত।
এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর খনি।
এই খনির তাপমাত্রা প্রায় ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড– গরমের নরক।
২৯,০৩১ ফুট নিচে
মাউন্ট এভারেস্ট-এর সমান উচ্চতার গভীরতা।
এ গভীরতাতেও মানুষের স্পর্শ পৌঁছেছে।
৩৫,০০০ ফুট নিচে
পৃথিবীর ৫ টা প্রধান মহাসমুদ্রের মধ্যে এখানেই অবস্থিত সবচেয়ে গভীর অংশ,
যা মারিয়ানা ট্রেঞ্চ নামে পরিচিত।
প্রশান্ত মহাসাগরের ৩৫০০০ ফুট নিচে অবস্থিত এই স্থান–
চ্যালেঞ্জার ডিপ নামেও পরিচিত।
সূর্যের আলো এখানে পৌঁছাতে পারে না।
জলের চাপ এখানে এতটাই বেশি যে, মানুষ বা যন্ত্রপাতি সহজেই দুমড়ে-মুসড়ে যাবে।
গভীর সামুদ্রিক কাঁকড়া, বিচিত্র মাছ, জেলিফিশ,
এবং Bioluminescent প্রাণী, যারা নিজেদের আলো তৈরি করে, এখানেই বিচরণ করে।
এভারেস্টকে উল্টিয়ে যদি মারিয়ানা ট্রেঞ্চের ভিতরে প্রবেশ করানো যায়,
তবুও খাতের ভূমি স্পর্শ করতে এভারেস্টকে আরও ২ কিলোমিটার নিচে নামতে হবে।
টাইটানিক ছবির পরিচালক জেমস ক্যামেরন পৃথিবীর প্রথম মানুষ,
যিনি ২০১২ সালে একা ডুব দিয়েছিলেন (ডিপ সি চ্যালেঞ্জার সাবমেরিনে),
পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর বিন্দু মারিয়ানা খাতে, ৩৫,৮০০ ফুট নিচে।
সমুদ্রপৃষ্ঠে যে চাপ আমরা অনুভব করি, সেটাকে যদি ১ ধাপ ধরে নেওয়া যায় তবে,
চ্যালেঞ্জার ডিপে ১০,৯৯৪ মিটার নিচে সেই চাপ প্রায়– ১,১০০ গুণ বেশি।
অর্থাৎ, প্রতি ছোট জায়গায়ও এমন চাপ থাকে,
যেন প্রতি বর্গসেন্টিমিটারে ১,১০০ কেজি ওজন বসানো হয়েছে এমন।

৪০,০০০ ফুট নিচে
এখানেই ছিল মানুষের সেই দুঃসাহসিক অভিযান।
রাশিয়ার কোলা সুপারডিপ বোরহোল।
যেখানে বিজ্ঞানীরা চেয়েছিলেন কেন্দ্র ছুঁতে।
কিন্তু ৯ বছরের অবিরাম চেষ্টার পরও চাপ ও তাপের কাছে পরাজিত হয়ে,
বাধ্য হয়ে বন্ধ করতে হয় সেই প্রকল্প।
এরপর থেকে আজ পর্যন্ত এ চেষ্টা আর কোনো দেশ আপাতত করেনি।
শেষ কথাঃ আলো যেখানে শেষ,
সেখানেই শুরু অজানার জ্যোতি
আমরা চাঁদে গেছি, মহাকাশে নামমাত্র ভ্রমণ করেছি,
কিন্তু নিজের পৃথিবীর ভিতরে মাত্র ১২.২৬ কিলোমিটার গভীরে থেমে গেছি।
এর নিচে এখনও এক অনন্ত অন্ধকার– এক অচেনা আগুন জ্বলছে, কিন্তু আলো নেই।
হয়তো একদিন মানুষ নামবে আরও গভীরে,
আর সেদিন বুঝবে– যে আগুন পৃথিবীর ভিতরে জ্বলছে,
সেই আগুনই আসলে আমাদের ভিতরেও জ্বলে।
তাপ, ভয়, বিষ্ময়– সব এক হয়ে মিশে যায়,
আর সেই জমকালো অন্ধকারে জন্ম নেয় মানব কৌতুহলের চিরন্তন জ্যোতি।
( রাজনীতি দেশকে সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাবে,
এটাই তো দেশপ্রেমের আসল পরিচয়।
যুদ্ধ স্লোগানে নয়, জেতা যায় বাজারে।
ভাবুন তো শক্তি এখন কার হাতে?
যে বন্দুক তৈরি করতে পারে,
না যে মোবাইল ফোন, চিপ, ড্রোন ও স্যাটেলাইট বানাতে পারে?
পড়ুন– Click: আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপঃ ভারত কি পেতে চায়? )
Articlesবাংলা Bangla Articles, Quotes & Prose-Poetry / বাংলা প্রবন্ধ, উক্তি ও গদ্য-কবিতা।





