SIR 2025 কি ও কেন? ভোটার তালিকায় মহাসাফাই অভিযান!

ভোটের শুদ্ধতার নতুন অধ্যায়

ভোটাধিকার শুধু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার নয়, এটা গণতন্ত্রের ভিত্তি।
তবে ভোটের প্রকৃত অর্থ তখনই প্রকাশ পায়, যখন ভোটার তালিকা সঠিক ও আপডেট থাকে।
দীর্ঘদিন ধরে দেখা গেছে–

  • মাইগ্রেশন বা ঠিকানার পরিবর্তন।
  • ভোটারের বয়স বা যোগ্যতার সমস্যা।
  • অবৈধ বা অপ্রমাণিত অন্তর্ভুক্তি।
  • ডুপ্লিকেট বা একাধিক রেকর্ড।
  • ভোটার তথ্যের ভুল বা অসম্পূর্ণতা।
  • নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিভ্রান্তি।

এই সব সমস্যা দূর করার জন্যে নির্বাচন কমিশন,
ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনে চালু করেছে–
SIR 2025 ( Special Intensive Revision 2025).
অর্থাৎ “বিশেষ তীব্র সংশোধন অভিযান।”

SIR-এর পুনর্জন্ম– BLO, ERO-দের ভূমিকা

নির্বাচন কমিশন প্রথম “Special Intensive Revision” চালু করে ২০১৬ সালে,
কিছু নির্বাচনী রাজ্যে পরীক্ষামূলকভাবে।
উদ্দেশ্য ছিল–
সাধারণ রোল রিভিশনের পাশাপাশি, মাঠ পর্যায়ে গভীর যাচাই ও বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা চালানো।
এরপর থেকে ২০১৭, ২০১৮, ২০২১ এবং ২০২৩-এ বিভিন্ন সময়ে রাজ্যভিত্তিক SIR হয়েছে,
তবে তা একসাথে সারা দেশ জুড়ে প্রয়োগ করা হয়নি।
কিন্তু এই প্রক্রিয়াতেও পরবর্তীতে বহু ত্রুটি ধরা পড়ে।

  • মৃত বা স্থানান্তরিত ব্যক্তির নাম বাদ পড়ত না।
  • নতুন ভোটাররা অন্তর্ভুক্ত হতেন না।
  • একই নাম একাধিক জায়গায় থাকত ইত্যাদি।

২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের সময় ও পরবর্তীকালে,
এই ত্রুটিগুলো ধরা পড়তে থাকে ব্যাপকভাবে, ফলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়–
শুধু সাধারণ রিভিশন নয়, বরং গভীর যাচাই ও বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করা হবে।
এজন্যে BLO-দের (Booth Level Officer) প্রশিক্ষণ, ফিল্ড ভেরিফিকেশন,
ও ডিজিটাল রেকর্ড মিলিয়ে দেখা হবে।
এই BLO-দের কাজ ফিল্ড ভেরিফিকেশন, আর তাঁদের অ্যাসিস্ট করবেন–
ERO (Electoral Registration Officer) ও AERO (Assistant ERO).
অর্থাৎ, কার নাম থাকবে, কার বাদ যাবে, তা BLO-দের মাধ্যমে ফিল্ড থেকে উঠে আসার পর,
ডিজিটাল সিস্টেমে সে সব যাচাই করে অনুমোদন দেবে ERO ও AERO-রা।
এই প্রয়োজনের তাগিদেই নতুন করে জন্ম হয় SIR-এর।

( প্রথম ১ সেকেন্ডে তাপমাত্রা গিয়ে পৌঁছেছিল ৪০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
মানুষের ছায়াও গলে গেছিল দেয়ালে।
গাছ-পালা, ঘর-বাড়ি , অন্যান্য জীব-জন্তু নিমেষেই ভস্ম হয়ে গেল,
এমনকি বাতাসও পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
পড়ুন– Click: নরকের সেই সকালঃ হিরোশিমা ও নাগাসাকি থেকে শিক্ষা! )

কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?

২৭ অক্টোবর ২০২৫-এ ECI (Election Commission of India) ঘোষণা করেছে যে,
দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট ১২ টা রাজ্যে ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে SIR অভিযান পরিচালিত হবে।
উদ্দেশ্য মূলত দুটো–

  • ১. সব বৈধ ভোটারকে অন্তর্ভুক্ত করা।
  • ২. সব অবৈধ বা অনুপযুক্ত ভোটারকে বাদ দেওয়া।

এই অভিযান মোট প্রায় ৫১ কোটি ভোটারকে যাচাই করবে,
যা দেশের মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক।

সময়সীমা ও প্রধান ধাপ

SIR 2025 অভিযানের সময়সূচি নির্ধারণের ধাপগুলো হলঃ

১. প্রাক -গণনা ও প্রশিক্ষণঃ

২৮ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর

  • সব বুথ-লেভেল কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
  • তাঁরা শিখবেন কিভাবে বাড়ি-বাড়ি যাচাই করবেন এবং তথ্য সংগ্রহ করবেন।

২. বাড়ি-বাড়ি যাচাইকরণ ও এনায়মেন্ট ফেজঃ

৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর

  • ভোটারদের বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই করা হবে।
  • প্রয়োজনে নতুন ভোটার যুক্ত, তথ্য সংশোধন বা অনুপযুক্ত নাম বাদ দেওয়া হবে।

৩. খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশঃ ৯ ডিসেম্বর

  • ভোটাররা দেখতে পারবেন তাদের নাম ও তথ্য সঠিক আছে কি না।

৪. দাবি ও আপত্তি গ্রহণঃ

৯ ডিসেম্বর ৮ জানুয়ারি ২০২৬

  • ভুল বা অভাব থাকলে সংশোধনের আবেদন করা যাবে।

৫. চূড়ান্ত সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশঃ

৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬

  • এই তালিকাই পরবর্তী নির্বাচনের জন্যে বৈধ ভোটার তালিকা হিসেবে কার্যকর হবে।

অভিযানের কার্যপ্রণালী

নির্বাচন ক্ষেত্র প্রস্তুতি

  • প্রতিটা বুথে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
  • মাস্টার রোলের সঙ্গে ২০০২-০৪ সময়ের SIR রোল মিলিয়ে দেখা হবে।
    যদি কেউ পূর্বের রোলে শনাক্ত না হয়, তাঁকে প্রমাণপত্র জমা দিতে বলা হবে।

বাড়িতে-বাড়িতে যাচাইকরণ

  • কর্মকর্তারা প্রত্যেক ভোটারের বাড়িতে গিয়ে তথ্য যাচাই করবেন।
  • প্রয়োজনে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি, ঠিকানা পরিবর্তন,
    মৃত বা স্থানান্তরিত ভোটার বাদ দেওয়া হবে।

ডকুমেন্টেশন

  • ভোটারকে সঠিক প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।
  • আধার কার্ড শুধুমাত্র পরিচয় প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হবে, নাগরিকত্ব প্রমাণ নয়।

খসড়া ও চুড়ান্ত তালিকা

  • প্রথমে খসড়া রোল প্রকাশ করা হবে।
  • অভিযোগ ও আবেদন পর্যালোচনার পর চুড়ান্ত রোল প্রকাশিত হবে।

১২ টা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল

  • ১. আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপ।
  • ২. ছত্তিশগড়।
  • ৩. গোয়া।
  • ৪. গুজরাট।
  • ৫. কেরালা।
  • ৬. লাক্ষাদ্বীপ।
  • ৭. মধ্যপ্রদেশ।
  • ৮. পুদুচেরি।
  • ৯. রাজস্থান।
  • ১০. তামিলনাড়ু।
  • ১১. উত্তরপ্রদেশ।
  • ১২. পশ্চিমবঙ্গ।

এ পর্যায়ে আসামকে নেওয়া হয়নি,
কারণ সেখানে নাগরিকত্ব সম্পর্কিত আলাদা প্রক্রিয়া চলছে।

প্রয়োজন ও প্রত্যাশিত ফল

প্রয়োজন

  • দীর্ঘ সময় ধরে রোল আপডেট হয়নি।
  • একাধিক নিবন্ধন ও অবৈধ অন্তর্ভুক্তি বিদ্যমান।
  • ভুল তথ্য ভোটারকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে।

প্রত্যাশিত ফল

  • ভুল বা অনুপযুক্ত রেকর্ড কমানো।
  • নতুন ও যোগ্য ভোটারের নাম অন্তর্ভুক্ত করা।
  • মাইগ্র্যান্ট ভোটারের তথ্য হালনাগাদ।
  • আগামী নির্বাচনের জন্য নির্ভরযোগ্য ও পরিষ্কার ভোটার তালিকা।

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ

  • প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ভোটারের জন্য সমস্যা হতে পারে।
  • বাড়ি-বাড়ি যাচাইয়ের কাজ বড় প্রশাসনিক দায়িত্ব।
  • তথ্য-প্রযুক্তি ও পুরনো রোলের সঙ্গে মেলানো জটিল হতে পারে।
  • কিছু রাজনৈতিক দল এই প্রক্রিয়াকে সন্দেহের চোখে দেখছে,
    তবে কমিশন জানিয়েছে এটা শুধুই ভোটার তালিকার সঠিকতা নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ।

পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপট

  • রাজ্যে এই প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পশ্চিমবঙ্গে ভোটার সংখ্যা বেশি।
  • শহর থেকে গ্রামে মাইগ্রেশন, নতুন ভোটার এবং স্থানান্তরিত নাগরিকের তথ্য যাচাই গুরুত্বপূর্ণ।
  • সঠিক ভোটার তালিকা রাজ্যের ভবিষ্যৎ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

নাগরিকদের করণীয়

  • খসড়া রোল প্রকাশের পর নিজের নাম পরীক্ষা করা।
  • ভুল বা অনুপস্থিত তথ্য সংশোধনের জন্যে আবেদন করা।
  • প্রয়োজনীয় দলিল প্রস্তুত রাখা।
  • বাড়ি-বাড়ি যাচাই বা অনলাইন চেকিংয়ে সহযোগিতা করা।
  • সমস্যা হলে নির্বাচন অফিস বা হেল্পলাইনে যোগাযোগ করা।

SIR 2025 অভিযান ভারতের গণতন্ত্রকে আরও দৃঢ় করার উদ্যোগ।

  • ভোটার তালিকা সঠিক, আপডেট ও স্বচ্ছ হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।
  • পশ্চিমবঙ্গসহ সংশ্লিষ্ট রাজ্যে এটা সফল হলে,
    আগামী নির্বাচনে ভোটারদের অধিকার সুরক্ষিত হবে।
  • নাগরিক, প্রসাশন ও রাজনৈতিক দল মিলিতভাবে কাজ করলে,
    এই উদ্যোগটা দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে।

ভোটের অধিকার কোনও দল বা সরকারের দান নয়– এটা নাগরিকের জন্মগত অধিকার,
আর সেই অধিকারকে বাস্তব ও কার্যকর রাখার জন্যই প্রয়োজন,
একটা নির্ভুল, স্বচ্ছ ও হালনাগাদ ভোটার তালিকা।
SIR 2025 সেই প্রচেষ্টারই অংশ মাত্র, যেখানে লক্ষ্য কোনও রাজনৈতিক সুবিধা নয়,
বরং নাগরিকের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা।

তবে প্রতিটা সংস্কারমূলক উদ্যোগের মতোই এই অভিযানেও চ্যালেঞ্জ আছে।
ফিল্ড যাচাইয়ের জটিলতা, তথ্য মেলানোর প্রযুক্তিগত সমস্যা,
এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব।
এগুলো অতিক্রম করতে হলে শুধু প্রশাসন নয়– নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল,
মিডিয়া, এদের প্রত্যেককে সমান ভূমিকা নিতে হবে।

কারণ গণতন্ত্র কেবল ভোটের দিনেই টিকে থাকে না, টিকে থাকে সারা বছর,
প্রতিটা নাগরিকের দায়িত্ববোধে।
যখন মানুষ নিজে যাচাই করে দেখে নেয়–
তাঁর নাম তালিকায় আছে কি না, তাঁর তথ্য সব ঠিক আছে কি না–
ঠিক তখনই গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়।

SIR 2025 সফল হলে, তা শুধু একটা প্রশাসনিক অভিযান হবে না,
বরং ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থায়–
স্বচ্ছতা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে,
আর এই বিশ্বাস ও অংশগ্রহণই শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের প্রকৃত ভিত্তি।

( এই জগতে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে,
আমাকে নিতে হবে বিশেষ অনুমতি, বা লগ ইন।
এর ভালো খারাপ, দু দিকই আছে, ভালো করলে, ভালো।
আর খারাপের পরিণাম ভয়ঙ্কর!”
পড়ুন– Click: Dark Web: Internet-এর অন্ধকার জগৎ, রহস্য! )

 

Join Our Newsletter

We don’t spam! Read our privacy policy for more info.

About Articles Bangla

Check Also

ক্ষোভে-দুঃখে একজন মেয়ে মানুষ ধ্বংসস্তূপের মাঝে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন, মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ঈশ্বরের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ছেন, এবং তাঁর বুকে অভ্যন্তরীণ ন্যায়ের বীজ জ্বলছে। ঈশ্বর আছেন কি নেই—এই নৈতিক দ্বন্দ্ব এবং মানবতার দায়বদ্ধতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

ঈশ্বর আছেন, না নেই?– ন্যায়ের পরীক্ষা!

ঈশ্বর আছেন, না নেই?– ন্যায়ের খাঁড়ায় বিশ্বাস ও অস্থিরতা মানুষের মন বহুবার একই জায়গায় এসে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *