ওদের জীবনে ৮ টার আলো নেই, ঘুম ভাঙতে হয় ভোরের আগে।
না, ওটা ঘুম নয়, শরীরকে কিছুটা সময় চুপ করিয়ে রাখা।
হাঁড়ির জলে সিদ্ধ হয় শূন্য, কিন্তু জ্বালিয়ে রাখতে হয় আগুন,
কারণ খিদেকে যেন বোঝানো যায়, দেখো চেষ্টা করছি।
ওদের পায়ের রেখায় আঁকা থাকে যন্ত্রণার মানচিত্র।
জুতো, ওদের কাছে বিলাসিতার নাম।
ঘামের গন্ধে ভিজে থাকে জামা- ভরসা রোদ্দুর,
কিন্তু ওদের জীবনের ভার আর হালকা হয় না ওই রোদে।
একটা ইট কাঁধে তোলে কেউ-
আমি দেখি, সে কেবল ইট নয়, নিজের ভাঙাচোরা সংসার।
বুকের সব হাহাকার নিয়েই বইছে পিঠে।
দিনশেষে যা মেলে,
তা দিয়ে পরের দিনের পেটকে সাময়িক বোঝানো যায়, স্বপ্নকে নয়।
স্বপ্ন চায় অবসর, আর একটু নিঃশ্বাস।
তবু মুখে রাখতে হয় চিলতে খানেক হাসি,
কারণ কান্নার শব্দ এই শহর শোনে না।
এখানে কোলাহল’ই নিয়ম, ব্যাথা এখানে থাকে অলিখিত।
ওরাও মানুষ-
তবু মনে হয়, মানুষ হয়ে বাঁচাটাই যেন ওদের জন্য এক নিষিদ্ধ স্বপ্ন,
যা কেবল থাকে বইয়ের পাতায়, বাস্তবে নয়।
ওদের চপ্পলটা এক পায়ে ফাটা-
তবে দুটো পা-ই হাঁটে সমানভাবে,
কারণ খিদে কখনও জিজ্ঞেস করেনি, ‘তোমার পা কেমন আছে?’
ওদের পিঠে সূর্য রশ্মি কার্পণ্য করে না, বিকেলে ছায়াও পড়ে না-
কারণ শহরের আলো কেবল পড়ে কাঁচের গায়ে, মাটির শরীরে নয়।
ওদের বুকে বৃষ্টির আগের মেঘের মতন জমে থাকে যন্ত্রণা, দুঃখ-কষ্ট,
কিন্তু প্রকাশ করতে নেই।
আকাশের মতই চুপ থাকতে হয়,
গহীন রাতের অন্ধকারে তবু একসময় ভেঙে পড়ে অশ্রুবৃষ্টি হয়ে।
আর অভিমান- রোজ গিলে নেয় ওরা জল দিয়ে।
আর ফিরে যায় সেই ঘরে-
যেখানে প্রতিদিনের মৃত্যুকে বলা হয় “জীবন!!”
তন্ময় সিংহ রায়