মানবতার মন্দিরে ধর্ম এক সুর
সে মানুষ হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, কিংবা হোক বৌদ্ধ, জৈন বা খ্রিস্টান–
যদি তাঁর উদ্দেশ্য হয় সমাজের উন্নতি, জাতির কল্যাণ কিংবা দেশের মঙ্গল,
তবে সেই কর্মই হওয়া উচিৎ সকল ধর্মের প্রকৃত সাধনা।
যে কাজ মানুষের মঙ্গলের জন্য, তা কোনো এক ধর্মের সীমায় আবদ্ধ নয়;
বরং তা প্রতিটা ধর্মেরই মূলমন্ত্র হওয়া উচিৎ।
প্রকৃত ধর্ম কখনও বিভাজনের দেয়াল নয়, বরং মিলনের সেতু।
যে মানুষ সত্য ও সেবার পথে চলে, সেই প্রকৃত ধর্মাবলম্বী।
এক সময় এমন এক মহাপুরুষ ভারতভূমিতে জন্মেছিলেন,
যার হাতে ছিল না কোনো রাজদণ্ড, পদে ছিল না ক্ষমতার চিহ্ন,
তবু তাঁর কণ্ঠে ছিল এমন অগ্নিস্বর,
যা ঘুমন্ত জাতির আত্মাকেও জাগিয়ে দিয়েছিল।
তিনি শেখালেন, ভয়কে জয় করতে হয় পালিয়ে নয়,
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
চরিত্রই ধর্মের ভিত্তি, আর মানবসেবা হল তার শ্রেষ্ঠ রূপ।
তাঁর দর্শন মানুষকে শিখিয়েছিল–
মানুষ বড়, ধর্ম নয়; আচরণ বড়, আচার নয়;
আর প্রেম– সেটাই জীবনের সর্বোচ্চ সাধনা।

ভয়কে জয় করো, পালিও না
বেনারসের এক মন্দির থেকে বেরোনোর সময় একদিন,
তাঁকে প্রায় চতুর্দিক দিয়ে ঘিরে ধরেছিল একপাল বানর।
অপ্রস্তুত অবস্থায়, দিগভ্রান্ত হয়ে তিনি দৌড়াতে শুরু করলেন।
কিন্তু বানরগুলো আরও পিছন পিছন ধাওয়া করল,
বজায় রাখলো এদের বাঁদরামি কর্মকাণ্ড।
এমত অবস্থায়,
কাছে দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসী তাঁকে বলে বসলেন–
“থামুন, ওদের মুখোমুখি হন।”
তা শুনে তিনি বানরগুলোর একেবারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেলেন,
আর এ পরিস্থিতিতে বানরগুলো ধীরে ধীরে চলেও গেল।
এই ঘটনা থেকে তিনি শিখেছিলেন–
ভয়ে পালিয়ে না গিয়ে, ক্ষেত্র বিশেষে মুখোমুখি হওয়াটা জরুরী।
অর্থাৎ ভয়কে ভয় নয়, করা উচিৎ জয়।
সংস্কৃতি পোশাকে নয়, চরিত্রে
বিদেশযাত্রার সময় কেউ তাঁকে একবার প্রশ্ন করেছিল–
আপনার পরিধেয় বাকি পোশাক কোথায়?
তিনি জানিয়েছিলেন,
পায়ে খড়ম, গায়ে একটুকরো কাপড় আর নিম্নভাগে গেরুয়া ধুতি,
এই তাঁর সব।
সাথে সাথে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে আরেকজন জিজ্ঞাসা করে বসলেন–
“আরে মশাই, এ কেমন সংস্কৃতি আপনাদের?
শরীরে শুধু একটা জাফরানের চাদর জড়ানো?”
প্রত্যুত্তরে তিনি নম্রভাবে, হেসে জানালেন–
“শুনুন মশাই! আপনাদের সংস্কৃতি গড়ে তোলে আপনাদের দর্জিরা,
অন্যদিকে আমাদের সংস্কৃতি আমাদের চরিত্র দ্বারা তৈরি।
সংস্কৃতি পোশাকে গড়ে ওঠে না, গড়ে চরিত্রের বিকাশে।”
তো এমনই ছিল তাঁর জীবন দর্শন।
একটা জাতির আসল পরিচয় নির্ভর করে সে জাতির মানুষের নৈতিক শক্তি,
এবং আত্মসম্মানের উপর।
এ হেন জীবন দর্শন যিনি প্রতিফলিত করে গেছেন ভারতভূমিতে,
আমেরিকায়।
( কিন্তু তারপর…
একদিন, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি,
আঙুলের ছোঁয়ায় সমস্ত জীবন, শব্দ, আলো,
সবকিছু মুছে দিল এক মুহূর্তে।
শুধু রয়ে গেল ধ্বংসস্তূপ, আর এক ভয়ঙ্কর প্রশ্ন–
কোথায় হারিয়ে গেল তারা?
পড়ুন– Click: মায়ান রহস্য– হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার সন্ধানে! )
সমুদ্রপথের শুরুঃ
বোম্বে থেকে ইয়োকোহামা
সালটা ছিল ১৮৯৩, ৩১ মে– বোম্বে থেকে রওনা হন স্বামীজি।
হাতে ছিল চাদর, সাথে স্যুটকেশ, ট্রাঙ্ক বা ভ্যালিজে,
সাধারণ কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী আর এক বুক আত্মবিশ্বাস, ও চোখে-মুখে দৃঢ়তা।
সমুদ্রপথে দীর্ঘ প্রায় ৪-৫ সপ্তাহ ধরে যাত্রা করেন তিনি।
পথে স্টপেজ হয় শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, হংকং বা চীনের ক্যানটন,
এরপর পৌঁছান জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে।
সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার পর,
প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে তিনি কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে পৌঁছান।
উত্তর আমেরিকার অভ্যন্তরীণ যাত্রা
ভ্যাঙ্কুভার থেকে ট্রেনে চেপে শুরু হয় উত্তর আমেরিকার অভ্যন্তরীণ যাত্রা।
কয়েকটা ট্রেন বদল ও জাহাজের সংযোগ পেরিয়ে,
অবশেষে ৩০ শে জুলাই ১৮৯৩, রাত ১১ টায় তিনি উপস্থিত হলেন শিকাগোয়।
অচেনা শহর ও প্রথম চ্যালেঞ্জ
ক্লান্ত ও অবসন্ন শরীরটা একেবারে অপরিচিত পরিবেশে,
তাঁকে ফেলেছিল এক চরম অস্বস্তিজনক পরিস্থিতিতে।
চারপাশে অচেনা মানুষের ভিড়, নতুন শহরের অজানা রাস্তাঘাট,
এ সবই তাঁর মনে জাগাচ্ছিল এক ধরণের অস্থিরতা।
অবশেষে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠল,
যখন তিনি জানতে পারলেন–
ধর্মমহাসভায় যোগদানে পরিচয়পত্র আবশ্যক,
আর শেষ তারিখও রীতিমতন পেরিয়ে গেছে।
এই সংবাদ কানে প্রবেশ করা মাত্রই তাঁর মনে হতে লাগলো,
অতি যত্নে সাজানো সমস্ত স্বপ্নগুলো যেন–
তাঁর চোখের সামনে ভেঙে-চুরে, দুমড়ে-মুষড়ে যাচ্ছে।
একদিকে শিকাগোর মতন বড়লোকি শহরে থাকার খরচের চাপ,
অন্যদিকে সামান্য পুঁজি, তাও আবার ফুরিয়ে আসার মুহুর্তে।
এই মিলিত পরিস্থিতি যেন তাঁর ভিতরের দুশ্চিন্তাকে ক্রমশই বাড়িয়ে তুলছিল।
নতুন শহর, নতুন আশা
হঠাৎই তিনি আবিষ্কার করলেন বস্টন নামক এক শহরকে,
যেখানে থাকা-খাওয়ার খরচ অনেকাংশে কম।
আর নতুন এই সমাধানই শিকাগোয় পৌঁছানোর আগে তাঁকে কিছুটা স্বস্তি দেয়।
অবশেষে ট্রেনে চেপে তিনি বস্টন অভিমুখে যাত্রা শুরু করলেন।
আর সেই যাত্রায় স্বামীজির পরিচয় হয়,
ক্যাথেরিন স্যানবর্ন নামক এক ধনী ও প্রভাবশালী মহিলার সাথে।
প্রতিভাদীপ্ত, সুদর্শন ও সুঠামদেহী এক পুরুষের সাথে,
স্যানবর্ন নিজেই এসে পরিচয় করলেন।
স্বামীজির দু-এক কথায় মুগ্ধ হয়ে মহিলা স্বামীজিকে,
তাঁর বাড়িতে হার্দিক আমন্ত্রণ জানালেন।
এমনই এক সুযোগের একান্ত ইচ্ছায়–
স্বামীজি যেন অপেক্ষা করছিলেন অধীর আগ্রহে।
অতএব সেমত অবস্থায় স্বামীজি সাদরে গ্রহণ করলেন সে আমন্ত্রণ।
ক্যাথেরিন স্যানবর্নের বাড়িতে থাকাকালীন,
স্বামীজি তাঁর এক শিষ্যকে চিঠিতে জানালেন–
“এখানে থাকায় আমার প্রতিদিনের এক পাউন্ড করে বেঁচে যাচ্ছে,
আর তাঁর (ক্যাথেরিন স্যানবর্ন) প্রাপ্তি হল এই যে,
তিনি তাঁর বন্ধুদের আমন্ত্রণ করে দেখাচ্ছেন–
‘আমি’ নামক ভারতের এক অদ্ভুত জীবকে!”
বস্টনের শিক্ষিত সমাজে পরিচিতি
বস্টনে থাকাকালীন, ক্যাথেরিন স্যানবর্নের সূত্রে–
স্বামীজি ক্রমশই হয়ে উঠলেন সেই শহরের শিক্ষিত সমাজে,
ভীষণভাবে পরিচিত ও জনপ্রিয় এক মুখ।
আর এভাবেই কোনো এক মাহেন্দ্রক্ষণে হঠাৎ–
ক্যাথেরিনের মাধ্যমে স্বামীজির পরিচয় হয়,
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একজন সু’বিখ্যাত প্রফেসরের সাথে।
প্রফেসর জন হেনরি রাইট– যাকে বলা হত ‘বিশ্বকোষতুল্য জ্ঞানভাণ্ডারের অধিকারী।’
প্রফেসরের বিস্ময় ও স্বীকৃতি
কিন্তু স্বামীজির তেজোদীপ্ত প্রতিভার আলোকরশ্মি,
এমন একজন প্রফেসরকেও হতবাক করে দেয়।
পরিচয়পত্র না থাকায়,
স্বামীজি মহাধর্মসম্মেলনে যোগ দিতে পারছিলেন না শুনে,
প্রফেসার জানালেন–
“মহাশয়, আপনার কাছে পরিচয়পত্র চাওয়ার অর্থ এমন যে,
সূর্যকে প্রশ্ন করা যে তাঁর কিরণ দেওয়ার অধিকার আছে কি না।”
এরপর মহাধর্মসম্মেলনের এক কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে প্রফেসার রাইট লিখলেনঃ
“ইনি (স্বামীজি) এমন একজন ব্যক্তি যে,
আমেরিকার সমস্ত প্রফেসারের পান্ডিত্য এক করলেও,
এঁর পান্ডিত্যের সমান হবে না।”
শিকাগো অভিমুখে যাত্রা
অতঃপর বস্টনে সপ্তা তিনেক থাকার পর,
শেষে স্বামীজি রওনা হলেন শিকাগো অভিমুখে।
আর সেখানেই তাঁর জন্যে অপেক্ষা করে ছিল বিশ্বমঞ্চের সেই ঐতিহসিক মুহূর্ত।
১১ সেপ্টেম্বর ১৮৯৩–
এক ঐতিহাসিক ভোর
১১ সেপ্টেম্বর ১৮৯৩, শিকাগোর কলম্বাস হলে সকাল ঠিক ১০টা।
বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় জন্ম নিতে চলেছে এক যুগান্তকারী ঘটনা।
যে আধিদৈবিক, সিংহসম পুরুষের কণ্ঠে সেই দিন প্রতিধ্বনিত হয়েছিল,
চিরকালীন মানবধর্মের আহ্বান।
তিনি আর কেউ নন– স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ।
“Sisters and Brothers of America…”
বক্তৃতা শুরুতেই এ হেন সম্বোধন উচ্চারিত হতেই,
হলের হাজার হাজার দর্শকমন্ডলী উল্লাসধ্বনি ও করতালিতে ফেটে পড়ল।
মুহূর্তের মধ্যেই যেন সম্মেলন কক্ষ কেঁপে উঠল–
মনে হচ্ছিল, এক আঁধি বয়ে গেল সেখানে উপস্থিত সকলের অন্তরে।
ধর্মের সীমা পেরিয়ে মানবতার জয়
না– কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের জয়ঢাক তিনি বাজাননি।
যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তাবড় তাবড় ধর্ম-পণ্ডিতরা,
তাঁদের নিজ নিজ ধর্মের মাহাত্ম্য নিয়ে মহাবক্তব্য রেখেছিলেন।
সেখানে স্বামীজি দেখালেন এক নতুন দিশা–
“সব ধর্মই সত্য কারণ,
প্রতিটা ধর্মই মানুষকে পৌঁছে দেয় একই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে।”
অনাবিষ্কৃত এক অমূল্য উপহার
১৯৮৮ সালে,
আমেরিকার এক জ্ঞানী লেখিকা এলেনর স্টার্ক (Eleanor Stark),
স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে তাঁর প্রথম সংস্করণের এক অনন্য গ্রন্থ লিখেছিলেন–
“The Gift Unopened: A New American Revolution.”
ভারত থেকে–
আমেরিকার প্রতি এক বার্তা
এই বইতে তিনি স্বামীজির বাণীকে উল্লেখ করেছেন–
এক অমূল্য উপহার হিসেবে।
যা ভারত দিয়েছে আমেরিকাকে।
কিন্তু তাঁর মতে–
সেই উপহারের প্যাকেট আমেরিকা খুলেই দেখেনি।
স্বামীজির বাণীকে তাঁরা জীবনে প্রয়োগও করেনি,
যদি করত, তবে ঘটে যেত এক নতুন বিপ্লব।
লেখিকা লিখেছেন–
“কলম্বাস আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকার ভূমি,
আর বিবেকানন্দ আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকার আত্মা।”
আমি যাব সব ধর্মের দ্বারে
“আমি মুসলমানের মসজিদে যাব, খ্রিস্টানদের গির্জায় প্রবেশ করে,
আমি আমি যীশুর সামনে নতজানু হব।
বৌদ্ধদের বিহারে প্রবেশ করে আমি বুদ্ধের শরণাপন্ন হব।
আবার অরণ্যে প্রবেশ করে আমি ধ্যানমগ্নও হব।
শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে যে সব ধর্ম আসতে পারে,
সেগুলোর জন্যেও আমি আমার হৃদয় উন্মুক্ত রাখবো সর্বদাই।”
এই উচ্চারণেই ফুটে ওঠে এক সত্যিকারের বিশ্বমানবের কণ্ঠস্বর,
যিনি ধর্মকে বিভাজনের নয়,
ঐক্যের সেতুবন্ধন হিসেবে পৃথিবীবাসীর কাছে প্রতিফলিত করেছিলেন।
যারা চিনেছিলেন তাঁকে
এলেনর স্টার্ক চিনেছিলেন স্বামীজি নামক সেই কোহিনূরকে।
প্রফেসর জন হেনরি রাইট জেনেছিলেন ভারতের এই সন্ন্যাসীকে।
কলম্বাস হলের সেই বিদগ্ধ ধর্মপ্রাণ পণ্ডিতরা বুঝেছিলেন বিবেকানন্দকে।
চিনেছিলেন ক্যাথরিন স্যানবর্ন–
যার সৌভাগ্য হয়েছিল এমন একজন দূরদর্শীসম্পন্ন মানুষের সান্নিধ্যে আসার।
কিন্তু আমরা?
সকল ধর্মের মানুষরা, আদৌ কি আজও ১% জেনেছি এই মহামানবকে?
করেছি তাঁর আদর্শকে পাথেয়?
রাজমিস্ত্রীর দেয়াল গাঁথার মত, আমাদের সন্তানদের মধ্যে তাঁর আদর্শ কি গাঁথি?
এ প্রসঙ্গে বলা ভালো–
ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব মুখে বলার বা বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে আসে না;
তা প্রকাশ পায় কর্মে, আচরণে, চিন্তাভাবনায় এবং মানসিকতায়।
ধর্ম যদি দিনের পর দিন ধরে অধর্মে পরিণত হয়, ধ্বংস অনিবার্য।
( চলুন ঘুরে আসি সমগ্র পৃথিবী– ডিজিটাল ভ্রমণ,
জানুন বিভিন্ন মহাদেশ ও দেশের সব মন কাড়া তথ্য।
পড়ুন– Click: ডিজিটাল ভ্রমণ– রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা পৃথিবী! )
(Articlesবাংলা– আমাদের, আপনাদের পরিবার, সাথে যুক্ত থাকুন।
লেখাটা ভালো লাগলে শেয়ার করে বন্ধুদের পড়ার সুযোগ করে দিন।)
Articlesবাংলা Bangla Articles, Quotes & Prose-Poetry / বাংলা প্রবন্ধ, উক্তি ও গদ্য-কবিতা।





