শহরের নিরন্তর কোলাহলের ভিড়ে,
বুকের গভীর থেকে হঠাৎই জেগে ওঠে এক নিঃশব্দ হাহাকার!
হঠাৎই ভারী হয়ে ওঠে বুকটা।
বুঝতে পারি, অদৃশ্য হলেও, দাঁড়িয়ে আছে কেউ,
কিছু বলতে চায় সে।
হঠাৎ কানে ভেসে আসে প্রশ্নের মত-
“তুমি কি শুনতে পাও আজ,
বাঁশবনের ফাঁক দিয়ে ভেসে আসা ছেলেবেলার সেই দূরন্ত ডাক?
কানে ভেসে আসে প্রশ্নের মত,
দেখতে কি পাও সেই রৌদ্রদীপ্ত দুপুর, যেখানে খেলার মাঠের ধুলোয়
লেখা থাকত আমাদের খুশি-আনন্দের সহজ ইতিহাস?
মায়ের এক ডাকে থেমে যেত লুকোচুরি,
পুকুরপাড়ে বসে সূর্যাস্তের রঙিন আভায় আমরা খুঁজে নিতাম জাদুর অস্তিত্ব।
কিন্তু আজকের এই ইট-পাথরের নগরী যত উঠে দাঁড়ায় উঁচুতে,
ততই চাপা পড়ে যায় শৈশবের সেই সরলতা।
চোখ বন্ধ করলে কখনও ভেসে ওঠে, ভাঙা বিকেলের কাকডাকা, কাদামাখা পায়ের সেই ছবি।
আর সেই উল্লাস, যা কোনও শহরের অট্টালিকা কখনও ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
( আমার নীল পৃথিবীকে রেখেছিলাম তোর চোখে,
তুই চোখের বালি ভেবে নিলি।
ভেবেছিলাম তৃষ্ণা এঁকে দেব তোর দু’চোখেই,
তুই চোখ বন্ধ করে দিলি।
পড়ুন লেখাটাঃ “আসবি ফিরে?”)
সময়ের সবচেয়ে বড় বদ অভ্যেস হল-
সে ফিরে আসতে জানে না, কেবলই ঠেলে নিয়ে যায় সামনের দিকে।
তবু কিছু স্মৃতি অদ্ভুত বীজের মত,
যা সময়ের অনমনীয় প্রবাহেও হৃদয়ের মাটিতে অঙ্কুরিত হয় বারবার।
শহরের গভীর নৈঃশব্দে হঠাৎই ভেসে আসে গ্রামের মাটির সেই চেনা গন্ধ,
ভেজা কুয়াশার স্নিগ্ধ স্বাদ!
আর সীমাহীন সেই আকাশ, যা মনে হত আমাদের একান্ত সম্পদ।
সেই আকাশেই স্বপ্ন ছিল অনন্ত, আর ছিল এক বুক গৌরব।
যতই আমরা এগিয়ে যাই, দৈত্য-দালানের এই ভিড়ে,
অন্তর্গত শিশুটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় ক্রমেই-
কোথায় হারিয়ে ফেললে সেই দিনগুলো? কোথায় হারালে সেই হাসি,
যা এক টুকরো রোদ হয়ে ঝলমল করত আনন্দের ভিতরে?
কেমন লাগছে এ শহরের সূর্যকে?
গ্রামের মতই আপন, পরোপকারী, নিঃস্বার্থ?
হয়তো কোনো এক জন্মে, আবার ফিরে পাব সেই পথ-
যেখানে শৈশব থেমে ছিল, অথচ আমরাই গেছিলাম হারিয়ে।
সেখানে এখনও অপেক্ষা করে আছে হাঁসেদের ঝাঁক, ঝিঝি পোকার সেই সুরেলা সঙ্গীত, আমগাছের ছায়া,
আর খালের জলে সাঁতার কাটা মাছেরা।
তন্ময় সিংহ রায়