একদিন পৃথিবী চুপ করে যাবে,
যেমন হঠাৎ থেমে যায় ঘড়ির কাঁটা।
অথচ সময় থেকে যায় এর পরেও।
মানুষ, যে একসময় আকাশ মেপেছিল চোখে,
সে একদিন তাকাবে নিজেরই ধ্বংসের দিকে।
অবাক হয়ে, যেন প্রথমবার কিছু দেখছে।
তখন মাটির গন্ধে থাকবে না চাষির ঘাম,
থাকবে শুধু পোড়া ধুলোর স্বাদ।
বাতাস বইবে।
কিন্তু কেউ থাকবে না বলার,
“আজ বাতাসটা বেশ সুন্দর।”
যে হাত একদিন গড়েছিল শহর,
সেই হাতই তুলেছিল অস্ত্র।
যে মুখ একদিন গেয়েছিল প্রার্থনা,
সেই মুখই ডেকেছিল– “যুদ্ধে নাম।”
বুদ্ধি একসময় ছিল আশীর্বাদ।
শেষে সে-ই হয়ে উঠল আগুন।
জ্ঞান যত বাড়লো,
তত কমলো প্রজ্ঞা।
মানুষ বুঝতে শেখেনি,
সে আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে।
তাঁর চোখে চাঁদ,
হাতে পরমাণু।
কিন্তু হৃদয়ে এক অপূর্ণ ক্ষুধা।
সে জিততে চায়,
কিন্তু জানে না কেন।
সে বাঁচে,
কিন্তু ভুলে গেছে কি জন্যে।
একদিন পৃথিবী জেগে উঠবে মানুষের অনুপস্থিতিতে।
সমুদ্র গাইবে এক নিঃশব্দ গান।
যার প্রতিটা তরঙ্গ হবে ক্ষমার প্রতীক।
গাছেরা আবার নিঃশ্বাস নেবে নিশ্চিন্তে।
আর আকাশ ফিরে পাবে নিজের নীল।
তখন হয়তো কেউ পড়বে মানুষের পদচিহ্ন।
ধূলোর নিচে,
শিলার ভিতর।
আর ভাববে, এরা কারা ছিল?
যাদের বুদ্ধি ছিল,
বোধ ছিল না।
হয়তো ইতিহাস তখন কেবল এক প্রতিধ্বনি।
যেখানে শোনা যাবে সেই একটাই কথাঃ
“তাঁরা সব জানতো,
কিন্তু শেখেনি বাঁচতে।”
তখন পাথর বলবে, “আমরাই সাক্ষী।
মানুষ নামে এক প্রজাতি ছিল,
যারা নিজেদের ঈশ্বর ভাবতো।
কিন্তু মাটির গন্ধ চিনতে পারতো না।”
সূর্য তখনও উঠবে প্রতিদিন,
কিন্তু কেউ থাকবে না তাকে অভিবাদন জানাতে।
ভোরের শিশির পড়বে নিঃশব্দে,
যেন শোক পালন করছে অনুপস্থিত জীবনের জন্য।
সমুদ্র তখনও ফিসফিস করবে তীরে।
“আমরা সাবধান করেছিলাম,
কিন্তু তাঁরা শোনেনি।”
তারারাও হয়তো কাঁদবে না।
কারণ তারা জানে,
মানুষ ছিল কেবল এক অস্থায়ী ঝলক।
এক মুহূর্তের ভুল,
মহাবিশ্বের নোটবুকে।
তবু কোথাও, নীরবতার গভীরে,
থেকে যাবে এক প্রশ্নের প্রতিধ্বনি।
“যদি ভালোবাসা সত্যি ছিল,
তবে কেন তাঁরা একে ভুলে গেল?”
( তুমি সংসার খুঁজে পেলে দেশবাসীতে।
সংসার- আমরা বুঝি, শুধু নিজের পরিবার।
তোমার দেশে আজ বীরের মেলা,
কিন্তু তোমার মতন বীর আজ আর জন্মায় না।
পড়ুন– Click: শ্রদ্ধেয় নেতাজী, তোমাকে খোলা চিঠি! )
তবুও কোথাও, নিস্তব্ধ ধূলোর ওপারে,
থেকে যাবে এক ছায়া।
এক পুরনো গল্পের গন্ধ।
কেউ জানবে না,
কবে আগুন প্রথম কথা বলেছিল।
আর কবে সে মানুষকে চিনতে শিখেছিল।
লাল মাটিতে একসময় নাচত জীবন।
নদী গাইত তার সৃষ্টির গান।
এরপর একদিন নেমে এল নীরবতা।
সূর্যের শ্বাসে হারিয়ে গেল তাদের আকাশ।
বাতাস হারালো তার নিজস্ব চামড়া।
জল উড়ে গেল অচেনা শূন্যতায়।
আর শীত বসে পড়লো সময়ের বুকে।
যেন পৃথিবীরই আগাম ভবিষ্যৎ লিখে রাখছে।
হয়তো ওরাও একদিন ভেবেছিল,
“আমরা অমর।”
কিন্তু মহাবিশ্ব হাসে এমন বিশ্বাসে।
নীরবতাই শেষে সব উত্তর জানে।