হে মানবরূপী ঈশ্বর-
এ যোগ্যতা আজও হয়নি।
মানুষের শরীরে দেবত্ব কাকে বলে?
কেমন স্পন্দিত হয় দেবতার হৃদয়?

হে ত্রিকালদর্শী-
তোমার দেওয়া উপহার স্বাধীন ভারতে,
তা আজও জ্বলে লক্ষ মানুষের চোখে।
কিন্তু যে স্বপ্ন তুমি দেখেছিলে,
তা ছিল দুর্বোধ্য, অসহ্য, দৃঢ়।
আর তুমি দেখতে- আমাদের জন্যে।
সে তো স্বপ্ন ছিল না, ছিল- প্রতিজ্ঞা।
তুমি কবর দিয়েছিলে রাতের ঘুম, মান-মর্যাদা।
বিসর্জন দিয়েছিলে বিশ্রাম, সুখ, স্বাস্থ্য, এমনকি ভবিষ্যৎ পর্যন্ত।
তুমি সংসার খুঁজে পেলে দেশবাসীতে,
সংসার- আমরা বুঝি, শুধু নিজের পরিবার।
তোমার দেশে আজ বীরের মেলা-
কিন্তু তোমার মতন বীর আজ আর জন্মায় না।
ফিল্মি নায়কে উন্মাদনা আজও ছোঁয় আকাশকে,
কিন্তু আসল নায়ক ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে প্রজন্ম থেকে।
সমাজসংস্কারকে আজ পূর্ণ জোয়ার-
কিন্তু তোমার মতন সমাজসংস্কারক হওয়ার সাধ্যি কারো নেই।
যে নিজের ঘর ছেড়ে জাতিকে ঘর দিতে চেয়েছে,
তাঁর প্রতিটা কোষ কি দিয়ে তৈরি, জানতে ইচ্ছে করে।
হে অপরাজেয় বঙ্গপুত্র-
তুমি যে অদম্য, তাই তো তোমার ছিল এত শত্রু।
তোমার কীর্তির প্রচার প্রয়োজন হয় না,
কারণ তোমার কীর্তি নিজেই এক প্রচার,
নিজেই প্রসার, নিজেই ব্যাপ্তি।
তুমি যে অভেদ্য-
তাই তো সব শত্রুই ছিল তোমার পদতলে।
তোমার দেশে আজ বাড়ি হয় বড় বড়,
শুধু বড় হয় না তোমার মত।
তোমার দেশে ডিগ্রী বাড়ছে, বাড়ছে অর্থ,
আর ক্রমশঃ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে মানসিকতা।
কারাগারে মানুষ ঢোকে আজও,
তবে দুর্নীতির সাজা কাটতে।
হে গর্বিত বঙ্গ মায়ের অপরাজেয় বীর সাধক-
একজীবনের সবটুকু সুখকে ত্যাগ করে,
যে যন্ত্রণাময় জীবনকে তুমি উপেক্ষা করেছো।
উপেক্ষা করেছো বর্ণচোরাদের-
শুধু আমাদের জন্যে,
তা আজ ঠিক ক’জনের গভীরে আঁচড় কাটে, আমার জানার বাইরে।
ত্যাগের প্রায় শেষ সীমায় তুমি পৌঁছেছিলে-
শুধু আমাদের জন্যে।
শত লাঞ্ছনা ও অপমানে প্রতি দিন তুমি রক্তাক্ত হয়েছো।
কিন্তু আজ?
তোমায় শুধু মুখস্থ করা হয় ডিগ্রী বাড়ানোর স্বার্থে।
আর মাঝে মধ্যে কর্তব্য পালন-
উদ্দেশ্যঃ আদর্শের নিখুঁত বিজ্ঞাপন,
আর নিজেকে মহৎ, দেশপ্রেমী প্রমাণ করা।
( কেউ হয়তো ডাকবে,
কিন্তু আর কোনও উত্তর শোনা যাবে না।
তবুও এটাই তো জীবনের নিয়ম-
যা শুরু হয়, তা শেষও হয়।
পড়ুনঃ একদিন থেমে যাবে সবকিছু! )
রাজমিস্ত্রি আজও দেওয়াল গাঁথে-
কিন্তু অধিকাংশ অভিভাবকই,
তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দেওয়ালে,
আজ তোমার আদর্শ আর গাঁথে না,
তাই ঘরে ঘরে জন্ম নিচ্ছে আত্মকেন্দ্রিক সন্তান।
হে সিংহপুরুষ-
তোমার আবির্ভাব থেকে সবটুকু দুর্গম পথে,
বহুবার তোমায় নেওয়া হয়েছে-
রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অপারেশন থিয়েটারে।
তবুও তুমি ছিলে অকুতোভয়, অভঙ্গুর।
তোমার ত্যাগ ছিল অনন্ত, এর ছিল না কোনো সীমা-পরিসীমা।
ঘর ছেড়েছো, ত্যাগ করেছো পরিচয়,
প্রিয় মাটি থেকে নির্বাসিত হয়েও-
তুমি কাঁপিয়েছো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত।
না ছিল তোমার সমরাস্ত্র, না বিপুল সেনাবাহিনী-
তবু তুমি প্রমাণ করেছিলে, সবচেয়ে বড় অস্ত্র ‘দেশপ্রেম।’
ভীষন ভালো লাগে অনুভব করে যে-
জিলেটিনের প্রলেপযুক্ত কাগজের টুকরোতে তুমি অস্তিত্বহীন।
কারণ, ঈশ্বরের আসন কোনো কাগজের টুকরোতে নয়,
তা হয় কোটি কোটি ভারতবাসীর হৃদপিণ্ডে।
হে দূরদর্শী মহাত্মা-
তোমার ইতিহাসে আজ বরফ জমেছে, কিন্তু মন বলছে-
ধামা চাপা, বিকৃত ও মানুষ ভোলানো ইতিহাস,
উলঙ্গ হওয়ার সময় একদিন আসবেই।
কিছু বিশিষ্ট কৃতঘ্নদের মুখোশও সেদিন হবে উন্মোচন।
কারণ- সত্য হল সেই স্ফুলিঙ্গ, যা একদিন রূপ নেয় দাবানলে।
হে পরম পূজনীয় নেতা-
আজ স্বাধীন হয়েছি নিশ্চিত-
হয়েছি কম-বেশি শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত, দূরদর্শী, হইনি নির্বোধ।
কিন্তু তোমার মতন আকাশ হওয়ার স্পর্ধা, মানসিকতা,
এ জন্মে আর পারবো না অর্জন করতে।
এভারেস্টের উচ্চতা মাপা গেছে,
কিন্তু মানব সভ্যতায় কোনো যন্ত্র নেই, যা মাপতে পারে তোমায় উচ্চতা।
ধর্মীয় আগুনে মানুষ আজও পোড়ায় মানুষকে।
কিন্তু তুমি দেখিয়েছিলে-
মানবতার কাছে, মহত্বতার কাছে, ধর্ম ঠিক কতটা ছোটো?
ক্ষমা কোরো-
এ লজ্জা,অনুশোচনা একান্তই আমাদের।
ইতি, তন্ময় সিংহ রায়