মায়ের প্রতি শোকের আর্তিঃ
তুমি কি সত্যিই শুয়ে আছো ঐ কাঠের ওপরে মা?
ঐ আগুন কি সত্যি?
না কি আমি কেবল দেখছি এক
দুঃস্বপ্ন-
যেখান থেকে এখনও ঘুম ভেঙে
ওঠা বাকি?
আমার চোখের সামনে নির্দয়
আগুন কেমন উঠছে ওপর দিকে-
আর তোমার চেনা শরীর ধীরে ধীরে কেমন অচেনা হয়ে যাচ্ছে।
মায়ের শেষ আশ্বাসঃ
মা- তুমি তো সব জানতে,
কে কখন কাঁদছে, কে ক্ষুধার্ত,
কেই বা ভেঙে পড়েছে…
আজ এই আগুন তোমার শরীরকে
ক্রমশঃ ছোটো করে দিচ্ছে,
আর আমি দাঁড়িয়ে আছি কেমন ছেলেমানুষের মত-
চিৎকার করতেও পারছি না,
আমার সব শক্তি যেন তোমার সাথে ঐ আগুনে।
আশ্বাস হারানোর কষ্টঃ
তুমি তো বলেছিলে-
“আমি না থাকলে নিজেকে সামলাতে শিখতে হবে তোকে।”
কিন্তু তবুও তুমি ছিলে-
তোমার বলা প্রতিটা ভয় তখন আমার কাছে ছিল আশ্বাসের মত।
কিন্তু আজ-
আমার গোটা হৃদপিণ্ডটাই যেন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে,
যেখানে আর সেই আলো ঢুকবে না কোনও দিনও।
( ক্লিক করে নিচের লেখাটা পড়তে পারেনঃ)
অচেনা আগুনঃ
তোমার ভাত মাখানো হাতটা কোথায় মা?
এখনই উঠে এসে কেন বলতে পারছো না-
“এই আগুন ফাঁকি, এই তো আমি!”
তুমি ছিলে আমার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ঠিকানা-
আজ সেই ঠিকানাই ছাই হয়ে উড়ে যাচ্ছে কোনও এক অজানা ঠিকানায়।
আমি হাত বাড়াতে চাই-
কিন্তু কিছুই পাইনা, শুধু ধোঁয়ায় ভেসে আসে তোমার
শেষ নিঃশ্বাসের সেই গন্ধ।
বাস্তব না দুঃস্বপ্ন?
এই যে আগুন, এতটাই বাস্তব-
তবু কেন মনে হচ্ছে, এটা এক
নির্মম ভুল?
একটা আস্ত শরীর নিয়ে আগুনটা
উপরে উঠছে-
তুমি ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দাও মা।
এসে বলো আমায়-
মৃত্যুটা ভুল ছিল খোকা।
তুমি ফিরে এসো ভুল শুধরাতে।
শেষ বিদায়ঃ
কেউ বলছে, কাজ সম্পূর্ণ হল,
কেউ ফুল ছুঁড়ছে, কেউ করছে প্রণাম-
আর আমি তখনও তাকিয়ে দেখছি এই মুহূর্তটার দিকে,
তুমি আগুনে, আর আমি অবিশ্বাসে।
তুমি গেলে-
আর আমার ভেতরের ছেলেটাও যেন মরে গেল আজ।
কেউ তা দেখতে পায় না, কেউ জানলো না- শুধু আমি জানি,
আমার ভেতরেও জ্বলছে একটা চিতা, যা নিভবে না কোনও দিন।
ভয় হয়ে ওঠা নতুন মাঃ
তোমার মতন কেউ এসে আর বলবে
না-
“ভয় পাস না খোকা- আমি তো আছি।”
এই ভয়টাই এখন আমার নতুন মা!!
তন্ময় সিংহ রায়
One comment
Pingback: তোমার অনুপস্থিতি- ভালোবাসা, স্মৃতি ও শূন্যতার কবিতা (Love Poem)