আজকের মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থান
আজকের উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান ও মঙ্গোলিয়া–
সমগ্র বিশ্বের কাছে স্বীকৃত এক একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু ১৫শ-১৬শ শতকে এই অঞ্চলগুলোর রাজনৈতিক অবস্থা একেবারেই ভিন্ন ছিল।
তখন এগুলো আধুনিক রাষ্ট্রের মত সুস্পষ্টভাবে পৃথক ছিল না।
মধ্য-এশিয়ার এই বিস্তীর্ণ এলাকা ছোট ছোট খ্রিস্টান ও তুর্কি-মুসলিম শাসক
কিংবা খানের নিয়ন্ত্রণে বিভক্ত হয়ে ছিল।
বাবরের ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন
সাল– ১৫২৬,
ফারগানা উপত্যকা থেকে যাত্রা শুরু করে বাবর মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল অতিক্রম করেন।
এরপর আজকের আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত এক প্রধান পাহাড়ি পথ,
খাইবার পাস ব্যবহার করে তিনি প্রবেশ করেন ভারতীয় উপমহাদেশে।
তুর্ক-মঙ্গোল বংশের এই নেতা, যার বংশসূত্র চেঙ্গিস খান ও তৈমুরলঙের সাথে যুক্ত–
পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ও মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি
সেই বছরেই পানিপথের প্রথম যুদ্ধে দিল্লি সুলতানতের শেষ শাসক,
ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করেন।
আর সেই বিজয়ের মধ্যে দিয়েই তিনি স্থাপন করেন মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত।
এরপর ধারাবাহিকভাবে হুমায়ুন– আকবর– জাহাঙ্গীর– শাহজাহান,
ও ঔরঙ্গজেবের শাসনকাল অতিক্রম করে মুঘল সাম্রাজ্য পৌঁছে যায়,
এর শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর-এর হাতে।
সিপাহী বিদ্রোহের সূত্রপাত
এরপর ১৮৫৭ সালে,
কার্তুজে গরু ও শূকরের চর্বির ব্যবহারকে কেন্দ্র করে ভারতীয় সমাজে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীতে থাকা ভারতীয় হিন্দু-মুসলিম সৈন্যরা,
প্রথম এর বিরোধিতা শুরু করে।
( নিভে যাওয়া আকাশের নিচে আমাদের প্রশ্ন একটাই-
ক্রমাগত প্রসারিত হতে থাকা এই অনন্ত মহাবিশ্বে,
আমরা কি সত্যিই একা?
পড়ুন– Click: এই অনন্ত মহাবিশ্বে তবে কি আমরা একা? )
বিদ্রোহের বিস্তারঃ
সৈন্য থেকে সাধারণ জনগন ও জমিদার
ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি এই অবমাননা শুধু সেনাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি,
বরং ছড়িয়ে পড়ে সাধারন জনগণের মাঝেও।
পরিস্থিতি অচিরেই ভয়াবহ রূপ নেয়।
সৈন্যদের সাথে পরবর্তীতে এই আন্দোলনে যোগ দেয় জমিদার, সাবেক, রাজা-মহারাজা,
সুলতান শ্রেণির বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
এরপর সবাই মিলে ঔপনিবেশিক ডাকাতদের (ব্রিটিশ) বিরুদ্ধে লিপ্ত হয় এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে,
যা ইতিহাসে “সিপাহী বিদ্রোহ” নামে খ্যাত।
সিপাহী বিদ্রোহঃ
ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে
এটা যে শুধুমাত্র একটা বিদ্রোহ ছিল, তা নয়।
অনেক ইতিহাসবিদ একে ভারতের প্রথম, বৃহৎ, সশস্ত্র এক গণঅভ্যুত্থানের মর্যাদা দিয়েছেন।
অনেকে একে “ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ” বলেও উল্লেখ করে থাকেন।
আর এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার কারণে, ব্রিটিশরা দিল্লি দখল করে,
শারীরিকভাবে অক্ষম, ৮১-৮২ বছরের বাহাদুর শাহ জাফরকে গ্রেফতার করে।
এরপর দেশদ্রোহী ঘোষণা করে তাঁকে বার্মা ( বর্তমান মিয়ানমার ) এর রেঙ্গুনে পাঠানো হয় নির্বাসনে।
মুঘল সাম্রাজ্যের অবসান ও বংশধরদের পরিণতি
এই পর্যন্ত এসে, কেমন যেন থমকে দাঁড়িয়ে গেল মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস।
একদা বংশপরম্পরায় যে সম্রাটরা একে একে অধিষ্ঠিত হতেন দিল্লির মসনদে,
কালগর্ভে একদিন মিলিয়ে গেল তাঁদের সেই ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়।
পরবর্তীকালে তাঁদের বংশধররা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় বিভিন্ন প্রান্তে।
কেউ ব্রিটিশদের তত্ত্বাবধানে অজ্ঞাত জীবনে দিন কাটাতে বাধ্য হন,
কেউ বা নিঃস্ব হয়ে সাধারণ প্রজার মত জীবনযাপন করতে শুরু করেন।
বর্তমানে মুঘল বংশধররা কি বেঁচে আছেন?
কিন্তু এখানে স্বাভাবিক একটা কৌতুহল জাগে–
এতসব ঘটনার পর, বর্তমানে মুঘল বংশের উত্তরসূরিরা কি আজও,
আদৌ কোথাও বেঁচে আছেন?
উত্তর হল– হ্যাঁ, বেঁচে আছেন।
সুলতানা বেগম– কোলকাতা
বর্তমানে হাওড়ার এক বস্তিতে, অভাবকে সঙ্গী করে বসবাস করছেন–
শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের প্রপৌত্রবধূ সুলতানা বেগম।
২০২৫ সালের হিসেবে তাঁর বয়স ৬০ বছর।
তাঁর ছয় ছেলে থাকলেও, কারও কাজ স্থায়ী নেই,
তাই দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন মেটাতে তিনি নির্ভর করেন,
মাসিক ৬০০০ টাকা পেনশনের উপর।
সরকারের কাছে রাজকীয় মর্যাদা ও সাহায্যের আবেদন করেছেন,
কিন্তু তেমন কোনো সহায়তা পাননি।
এমনকি একটা সময় তিনি চেষ্টা করেছেন চায়ের দোকান চালানোর।
কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী আয় না হওয়ায়, বাধ্য হন সে চায়ের দোকান বন্ধ করতে।
মুঘল বংশের পরবর্তী প্রজন্ম হিসের,
যদিও তাঁর কোনো সরকারি বা বৈজ্ঞানিক উপযুক্ত প্রমাণ বর্তমানে নেই।
আছে– প্রথম সারির কিছু সংবাদপত্রের প্রতিবেদন।
সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকার।
আর স্থানীয় সমাজ (ABHM) ও হায়দ্রাবাদের ইতিহাসবিদদের এক নির্দিষ্ট পর্যায়ের সমর্থন।
এত তর্ক-বিতর্ক, সাক্ষাৎকার, সমালোচনায় না গিয়ে,
তাঁর পরিবারের উচিৎ DNA পরীক্ষার জন্যে নিজে থেকে এগিয়ে আসা।
বলাবাহুল্য– DNA ফলাফল এখনও পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্য উৎসে প্রকাশিত হয়নি।
ইয়াকুব হাবিবুদ্দিন তুসি– হায়দ্রাবাদ
ইয়াকুব হাবিবুদ্দিন তুসি–
মুঘল সম্রাট আকবরের বংশধর হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে বিবেচিত,
এবং বর্তমানের প্রেক্ষাপটে তিনি নিজেকে,
মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের ষষ্ঠ প্রজন্মের বংশধর ও প্রিন্স হিসেবে দাবি করেছেন।
হায়দ্রাবাদে বসবাস করা মুঘল বংশের এই উত্তরাধিকারী,
ভারতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ও সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেছেন।
দাবি করেছেন তাজমহলের মালিকানাও।
ঔরঙ্গজেবের সমাধি রক্ষার্থে এমনকি তিনি জাতিসংঘের কাছে আবেদনও করেছেন।
ইয়াকুব হাবিবুদ্দিন তুসি তাঁর DNA পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছেন,
এবং সেই তথ্য ব্যবহার করে নিজেকে মুঘল বংশজাত দাবি করেছেন।
কিন্তু, সেই রিপোর্ট বৈজ্ঞানিকভাবে স্বাধীনভাবে যাচাই করা হয়নি,
বা প্রকাশ্যভাবে পাওয়া যায় নি।
যদি ধরা যায় তিনি সত্যিই উত্তরাধিকারি,
তবুও তিনি বর্তমানে কোনো সম্পত্তির মালিকানা দাবি করতে পারেন না।
কারণ–
- ১৮৫৭ সালে পর ব্রিটিশরা মুঘল সাম্রাজ্যের সমস্ত জমি, প্রাসাদ,
সম্পত্তি দখল করে নিয়েছিল, যা বর্তমানে তাঁদের উত্তরাধিকারীদের মালিকানার আওতায় নেই।
তা আজ রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। - স্বাধীন ভারতের আধুনিক আইনের অধীনে রাজবংশের প্রাচীন সম্পত্তি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আসে।
- মুঘল বংশের উত্তরাধিকারীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায়,
কোনো একক ব্যক্তি মালিকানা দাবি করতে পারে না। - বৈজ্ঞানিক বা আইনিভাবে প্রমাণিত দলিল না থাকায় আদালত বা সরকার স্বীকৃতি দেয় না।
- ভারতীয় উপমহাদেশে এসে মুঘল বংশ, অর্থের বিনিময়ে যে জমি বা সম্পত্তি কিনেছে,
তা নয়, প্রায় সবটাই যুদ্ধ, দখল ও ক্ষমতা বিস্তারের ফলাফল।
অর্থাৎ অন্যেরটা ছিনিয়ে নেওয়া।
যদিও এক্ষেত্রে কখনও কখনও রাজনৈতিক বিবাহ, দান,
বা স্থানীয় রাজাদের মাধ্যমেও চুক্তির মাধ্যমে সম্পত্তি লাভ ঘটেছে।
লায়লা উমাহানি তুসি পরিবার– হায়দ্রাবাদ
লায়লা উমাহানি তুসি বাহদুর শাহ জাফরের বংশধর হিসেবে পরিচিত।
বর্তমানে তিনিও হায়দ্রাবাদে বসবাস করছেন কি না,
এর নির্ভরযোগ্য কোনও তথ্য এখনও পাওয়া যায় নি।
অনেকেই মনে করেন– ইয়াকুব হাবিবুদ্দিন তুসি ও লায়লা উমাহানি তুসি দুই ভাই-বোন,
কিংবা একই পরিবারের সদস্য।
আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত–
Gulf News (Click: Gulf News) নামে এক সংবাদপত্র/ মিডিয়া সংস্থায়,
২২০৬ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, লায়লা উমাহানির বয়স ৯২-৯৩ বছর।
অন্যান্য স্থানে মুঘল বংশধরেরা
History Stack Exchange (Click Here) নামক–
এক আন্তর্জাতিক প্রশ্নোত্তর প্ল্যাটফর্মের তথ্য অনুযায়ী,
কোলকাতা এবং ঔরঙ্গাবাদে অনেক মুঘল বংশধর বাস করেন।
কোলকাতায় প্রায় ৭০-৮০ জন ও ঔরঙ্গাবাদে প্রায় ২০০ জনের মত মুঘল বংশধরদের থাকার উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া পাকিস্তান ও মিয়ানমারেও,
বাহাদুর শাহ জাফরের উত্তরসূরিরা আছেন বলে কিছু সূত্র থেকে জানা যায়।
তবে এর কোনো উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
মুঘল বংশধরদের বর্তমান অবস্থান ও সঠিক পরিচয় নির্ধারণ বেশ কঠিন,
কারণ– অনেকেই নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষার চেষ্টা করলেও,
সময় ও সামাজিক পরিবর্তনের কারণে তাঁদের পরিচয় ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
( এদিকে ভারতে– সরকার যেই পাল্টালো, বদলে গেল নীতি।
যা দেশের জন্যে, মানুষের জন্যে ভালো, এগিয়ে নিয়ে যাবে রাষ্ট্রকে,
তা গ্রহণ করা যে কোনও সরকারের পক্ষেই উচিৎ।
পড়ুন– Click: আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপঃ ভারত কি পেতে চায়? )
Articlesবাংলা Bangla Articles, Quotes & Prose-Poetry / বাংলা প্রবন্ধ, উক্তি ও গদ্য-কবিতা।


