সীমাহীন মহাশূন্যের রহস্যময় অন্ধকারে একা যাত্রীঃ ভয়েজার!

মহাবিশ্বের রহস্য জানার অভিপ্রায় মানুষের দীর্ঘদিনেরঃ

আদি অনন্তকাল ধরে,
গহন রহস্যের জমকালো অন্ধকারে আচ্ছন্ন সীমাহীন মহাবিশ্বের অজানাকে জানার অভিপ্রায় মানুষের দীর্ঘদিনের।
আর সেই অনুসন্ধিৎসু মনের ক্লান্তিহীন ও নিরলস প্রচেষ্টা আজও চলছে।
তবুও বোধকরি মহাবিশ্বের খুব সামান্য রহস্যই আজ অবধি সম্ভবপর হয়েছে উন্মোচন করা।

ভয়েজার লঞ্চঃ

সালটা ছিল ১৯৭৭-
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা “ন্যাশনাল অ্যারোনেটিক্স এন্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন”
( NASA) ২০ আগষ্ট উৎক্ষেপণ করেছিল ‘ভয়েজার-২’ নামক এক স্পেস ক্রাফট।
ঠিক তার পরের মাসে, ৫ তারিখে উৎক্ষেপিত হয়েছিল ‘ভয়েজার-১’ নামক আরো
একটা স্পেস ক্রাফট।

তথ্য সংগ্রাহকের ভূমিকায় অবশেষে সীমাহীন মহাশূন্যের উদ্দ্যেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল
দুই মহাকাশগামী যান।
টেলিস্কোপকে অতিক্রম করে, সে সময়ের উন্নত বিজ্ঞান-প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি এই দুই মহাকাশযান,
সমগ্র বিশ্ববাসীর কৌতুহলকে কিছুটা হলেও হ্রাস করবে, এটাই ছিল একমাত্র আশা।

ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ডঃ

বিজ্ঞানীরা জানতেন-
যে ‘ভয়েজার-১’ ও ‘ভয়েজার-২’ যাত্রা করতে করতে একদিন আমাদের সৌরমন্ডল ছাড়িয়েও অনেক দূরে পৌঁছে যাবে।
আর সেই কারণে স্পেসক্রাফটে মানব সভ্যতার অস্তিত্বের নিদর্শনস্বরূপ,
২০ শতাব্দীর এক প্রখ্যাত বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান-এর ধারণানুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছিল একটি গোল্ডেন রেকর্ড,
যাকে বলা হয় ‘ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড।’

রেকর্ডটা চালাবার নির্দেশিকা সহ এতে ছিল-

  • পৃথিবীর ৫৫ টি ভাষা,
  • ১১৫ টা ছবি,
  • ভারতীয় রাগ ভৈরবী সমেত বিভিন্ন দেশের সঙ্গীত।

গোল্ডেন রেকর্ডটা তৈরীর উদ্দ্যেশ্য ছিলঃ
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে দিতে কখনও, কোনো একদিন যদি অসীম মহাবিশ্বের কোনো এক গ্রহের এলিয়েন /
আমাদের মতই উন্নত প্রাণীর কাছে গিয়ে এটা পৌঁছায়, তবে তাঁরা ডিস্কটা অনুধাবন করে জানতে পারবে,
যে আমরা মানুষ, এই ইউনিভার্সেই উপস্থিত আছি / ছিলাম।

মানব প্রজাতির, সর্বোপরি আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীর অস্তিত্ব একদিন শেষ হয়ে যাবে।
কিন্তু, বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে ওই গোল্ডেন রেকর্ডটা আমাদের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে রাখবে।

(শেষ পর্যন্ত উপায়ান্তর না দেখে কার্তুজ সাহাবের নির্দেশে
গোর্খাদের সেই ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র “খুকরি” নিয়ে তাঁরা তখন
জোটবদ্ধভাবে মরিয়া হয়ে গেরিলা কায়দায়,
অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে আক্রমণ করে বসে পাকিস্তানি সেনাদের উপরে।

পড়ুনঃ “৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় আর্মির সেই অপরিশোধ্য অবদান কি মনে আছে বাংলাদেশের?”)

বৃহস্পতির কাছে ভয়েজারঃ

জানুয়ারি ১৯৭৯-
ভয়েজার-১ বৃহস্পতি’র কাছে চলে আসে ও এর স্বচ্ছ, সাদা-কালো বিভিন্ন ছবি পৃথিবীতে পাঠাতে থাকে,
কারণ সে সময়ে স্পেস ক্রাফটে কালার ডিটেক্টর বর্তমান ছিল না।
পরে কালার ফিল্টারের সহায়তায় সেই সমস্ত ছবি পরিবেশিত হয় জনসমক্ষে।

বৃহস্পতির রেড স্পট / লাল দাগগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা সম্ভব হয় যে,
‘গ্রেট রেড স্পট’-নামক অনেক বড় বড় ঘুর্নিঝড় জুপিটার / বৃহস্পতির মধ্যে প্রচুর পরিমানে মজুদ আছে।

সর্বমোট এক ডজনের বেশি ঝড়কে ভয়েজার সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
জুপিটারের শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ফিল্ডের কারণে,
যে কোনো মুহুর্তে স্পেস ক্রাফট ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে কোনো প্রকারে কাটিয়ে,
সে বৃহস্পতির প্রধান চারটি চাঁদকে অধ্যয়ন করতে সাহায্য করে।
এদের মধ্যে ‘ক্যালিস্টো’‘গ্যানিমিড'(গ্যালিলিও আবিষ্কৃত) ছিল
সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় এবং যার মধ্যে জীবনের কোনো অস্তিত্বের আশাই ছিল বৃথা।

পরবর্তী প্রধান চাঁদযুগ্ম যথাক্রমে ‘ইউরোপা’‘আই ও’-র মধ্যে,
ইউরোপার উপরিভাগ বরফের পুরু চাদরে ঢাকা,
ও এর নিচে তরলরুপে জল হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা প্রমাণিত হয়।
জুপিটারের শেষ প্রধান চাঁদ ‘আই ও’ যেটা ভলকানিক অ্যাক্টিভিটিতে পরিপূর্ণ।
অর্থাৎ ‘আই ও’-তে পৃথিবীর থেকেও বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে,
যার বিস্ফোরণ মহাশূন্যে ছুঁড়ে দিতে পারে ২০০ কিমি পর্যন্ত লাভাকে।

শনির পর্যবেক্ষনঃ

এই সমস্ত মূল্যবান তথ্য সংগ্রহের পর প্রায় একবছর সময় অতিক্রান্ত করার পর,
‘ভয়েজার-১’- এর পরবর্তী লক্ষ্য ছিল ‘শনি’ গ্রহ।
এতদিন যাবৎ শনি গ্রহকেই সবচেয়ে অস্পষ্ট দেখা যেত।
দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবারে ভয়েজার পাঠাতে থাকে শনিগ্রহের বলয়ের কিছু স্বচ্ছ ছবি,
এবং পরবর্তীতে আমাদের পরিচয় হয় শনির উপগ্রহ ‘টাইটান’-এর সাথে।

‘টাইটান’-এর চিত্র থেকে গবেষণালব্ধ ফলঃ 

  • গ্রহটা সম্পূর্ণভাবে নাইট্রোজেনে ভরা।
  • এর ভূমি ভরা মিথেনের নদীতে।

‘ভয়েজার-১’ -এর কাজ আপাতত এখানেই শেষ।
শুরু ‘ভয়েজার-২’ এর কার্যকলাপ।

ভয়েজার ২, ইউরেনাস ও নেপচুনঃ

শনির অনেক কাছ থেকে একে ইউরেনাসের দিকে যেতে হবে।
অবশেষে জানুয়ারী ১৯৮৬– তে ‘ভয়েজার-২’ ইউরেনাসে গিয়ে,
এর সবথেকে ছোটো ও কাছের উপগ্রহ ‘মিরান্ডা’-র কাছে গিয়ে পৌঁছায়।
পরিচয় ঘটিয়ে দেয় ইউরেনাসের রেডিয়েশন বেল্ট ও ১০ টা ছোট চাঁদের সাথে।

ইউরেনাস ছেড়ে ‘ভয়েজার-২’ নেপচুনের সন্ধানে তার পথ চলা শুরু করেছিল ১৯৮৯– এ।
অবশেষে সে পৌঁছায় আমাদের সোলার সিস্টেমের সবথেকে শেষে অবস্থিত নেপচুন– এর কাছে গিয়ে।
এতদিন পর্যন্ত সবচেয়ে অস্পষ্ট ছবির নেপচুনকে অত্যন্ত কাছ থেকে অধ্যয়নের পর,
সামনে চলে আসে এক অবাক করে দেওয়া তথ্য, যা ছিল এমন-
এই গ্রহের মধ্যে উপস্থিত একটা বড় দাগ।

‘ভয়েজার-২’ আরও কাছে পৌঁছালে পরিলক্ষিত হয়, যে দাগটা হচ্ছে ‘গ্রেট ডার্ক স্পট’,
যা জুপিটার বা বৃহস্পতির রেড স্পট- এর মতন এক বিশাল ঝড়।

বিজ্ঞানীদের অনুমানঃ

নানা প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করেই এরপর,
ভয়েজার আমাদের সোলার সিস্টেমের সব প্ল্যানেটকে বিদায় জানিয়ে আরও অনেক দূরে চলে যায়।
বলাবাহুল্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে,
বৃহস্পতি ও শনির মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ব্যবহার করে ইউরেনাস ও নেপচুনের কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব।

সৌরজগতের বাইরে, ইন্টারস্টেলার স্পেসঃ

আমাদের সৌরমণ্ডলের সীমা অতিক্রম করে অবশেষে ‘ভয়েজার-১’ নামক মহাকাশ যান পৌঁছায়,
পৃথিবী থেকে ১২০০ কোটি মাইল দুরে সৌরজগতের শেষ প্রান্তে।
পৃথিবী ছেড়ে সাড়ে আঠেরো বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে যখন সে অবস্থান করছে,
তখন কোনো রেডিও সিগন্যালকে পৃথিবী পর্যন্ত পাঠাতে সময় লেগে যাচ্ছিল ১৭ ঘন্টা।

আমাদের সৌরজগতের বাইরে এখন ‘ভয়েজার-১’ যে জায়গায় অবস্থান করছে,
সেটাকে বলা হয় ‘ইন্টারস্টেলার স্পেস।’
হাড় হিম করা ও রক্ত জমাট বাঁধা ঠান্ডা ও গহীন অন্ধকারে সমৃদ্ধ এই জগৎ মানব অভিজ্ঞতার সম্পূর্ণ বাইরে।
যেখানে সূর্যের প্রভাবের চেয়ে, মহাকাশযানে বেশি কাজ করছে মহাজাগতিক অন্যান্য বস্তুর প্রভাব।
বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী মহাবিশ্বের ৫-১০ শতাংশ আলোকিত,
বাকি ৯০-৯৫% অন্ধকারের পুরু চাদরে ঢাকা।

অসীম অন্ধকারে একা একা পথচলা ভয়েজার-১–
সৌরজগতের বাইরের ছবি ও বার্তা প্রেরণ হয়তো ক্রমশ প্রকাশ্য।
ভয়েজারের পাঠানো তথ্য ততদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে পাঠানো সম্ভব,
যতদিন এর মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকবে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, আর ১০ বছরের মধ্যে তাও হয়তো শেষ পর্যায়ে উন্নীত হবে,
তবুও ভয়েজারের পথ চলা বিরামহীন।

(যে ডাকাতি শুধু সম্পদ নয়,
ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ভারতবাসীর মর্যাদাও!

পড়ুনঃ “কোহিনূর থেকে ধানক্ষেত, ঔপনিবেশিক ডাকাতদের সেই প্রায় ১৯০ বছর!”)

ভয়েজারের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাঃ

ক্রমাগত ৪৫ থেকে প্রায় ৫০ বছরের টানা এই যাত্রায়,
ভয়েজার সমগ্র মানবজাতিকে মূল্যবান তথ্য প্রেরণ করেই চলেছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কোনো ছোঁয়াও এই স্পেস ক্রাফট দুটোতে নেই।
মহাকাশযান দুটোকে চালাচ্ছে মাত্র ৬৮ কেবি-র একটা কম্পিউটার,
যেখানে বর্তমানে সবথেকে স্বল্প দামি একটা মোবাইলের মেমোরিও ২ গিগাবাইট (G.B).

প্রথমদিকে ভয়েজারের দায়িত্বে ৩০০ জন বিজ্ঞানী রাখা হলেও,
২০০৪ সালের আগে এর গতিবিধি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে রাখা হয় ১০ জন বিজ্ঞানীকে।
বিজ্ঞানীদের সে সময়ের ধারণা অনুযায়ী ২০২০ সাল নাগাদ আমরা এর থেকে তথ্য পেতে পারি।
এরপর এদের বিদ্যুৎ শক্তিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে,
ও এই সমস্যাকে উপেক্ষা করেই মহাকাশযানগুলো আমাদের পৃথিবী থেকে আরো দূরত্বে চলে যাবে,
আর সেখান থেকে পাঠানো সংকেত দুর্বল হয়ে যাবে অনেকাংশেই।

শেষ পর্যন্ত এদের পাঠানো তথ্যকে সংগ্রহ করা আদৌ আর সম্ভব হবে কি না?
তা যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রাখে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীমহল।
২০৩০ সাল পর্যন্ত এই মহাকাশযান কোথায় গিয়ে পৌঁছতে পারে,
তাও বলা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

ভয়েজার লঞ্চ করার পরে পরেই ছোটো খাটো কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছিল,
যার কারণে ভয়েজারকে বেশ কয়েকবার মাঝপথে রি-প্রোগ্রামিংও করা হয়।
সাথে সাথে দুর্বল হতে থাকা সিগন্যালকে ধরার জন্যে,
পৃথিবীতে ভয়েজারের জন্যে আরো বড় ও অত্যাধুনিক অ্যান্টেনা বসানো হয়,
কারণ এর দূরত্ব ক্রমবর্ধমান।

আজ ভয়েজার আমাদের ছেড়ে এত দূরে চলে গেছে যে,
সেখান থেকে আমাদের সূর্যকে একটি ছোট্ট তারার মতই দেখা যাবে।
ক্রমশই ভয়েজার অজানা পথের দিকে এগিয়ে চলেছে।
আমাদের সোলার সিস্টেমকে অনেক পিছনে ফেলে সে পৌঁছে গেছে ‘ডিপ স্পেসে।’

ভয়েজারের বর্তমান দূরত্ব ও তথ্যঃ

২০২৫ এর হিসেব অনুযায়ী- 
পৃথিবী ছেড়ে এখন সে ২৪ বিলিয়ন (১বিলিয়ন =১০০০ মিলিয়ন, ১মিলিয়ন = ১০লাখ।)
কিমি দূরে।

বর্তমানে সূর্যের আলো যদি ভয়েজার পর্যন্ত পৌঁছায়, তাতে সময় লাগবে ২২ ঘন্টা ৩৫ মিনিট।
সত্যিই রীতিমতন শিহরণ জাগানো এক তথ্য।
আলোর গতিবেগ যেখানে সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিমি,
সেখানে ১৭ ঘন্টা সময় লাগবে ভয়েজারের এখনের অবস্থান অবধি আলো পৌঁছাতে।

ছোট্ট নীল বিন্দু ( Pale Blue Dot ) ও কার্ল স্যাগানঃ

১৯৯০ সালে সৌরমণ্ডলের কাজ শেষ করে ভয়েজার-১ যখন সৌরমণ্ডলের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি পর্বে,
এমন সময়ে কার্ল স্যাগান-এর অনুরোধে ভয়েজারের ক্যামেরাকে পৃথিবীর দিকে করা হয়।
৬ বিলিয়ন কিমি দূর থেকে পৃথিবীকে দেখতে লাগছিল একটা উজ্বল, ছোট্ট নীল বিন্দুর মতন।
৬ বিলিয়ন দূরত্ব থেকে নেওয়া এটাই ছিল পৃথিবীর প্রথম ও শেষ ছবি।

ছবিটা দেখে আধ্যাত্মিকতায় ভরপুর হয়ে ওঠা মনের মানুষটার মূল্যবান বক্তব্যের প্রধান অংশ ছিল এমন-

“অনন্ত মহাবিশ্বে আমাদের পৃথিবী একটা ধূলোর কণাও নয়।
এমন কোনো জায়গা নেই,
যেখান থেকে আমরা বিপদে পড়লে আমাদের কেউ উদ্ধার করতে আসবে বলে মনে হয়।

এখন পর্যন্ত পৃথিবীই একমাত্র এমন স্থান, যেখানে আমরা বসবাস করতে পারি।
আর এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে মানবজাতি থাকার জন্যে যেতে পারে।
হ্যাঁ আমরা পৃথিবী থেকে অনেক জায়গাতেই গেছি,
কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোথাও স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারিনি।

এখন আপনি এই পৃথিবীকে পছন্দ করুন, আর নাই করুন, আমাদেরকে এখানেই থাকতে হবে।

আমার মতে এই ছবি (ছোট্ট নীল বিন্দু) আমাদেরকে কর্তব্যের কথা বলে।
আমাদেরকে একে অপরের প্রতি আরো অধিক নরম ও সহনশীল আচরণ করতে হবে।
যেন আমরা এই ছোট্ট বিন্দুকে আমাদের বসবাস উপযুক্ত করে বাঁচিয়ে রাখতে পারি!”

ভয়েজারের ভবিষ্যৎঃ

ভয়েজার-১ এখন পৌঁছে গেছে পৃথিবী থেকে ২১.৬ বিলিয়ন কিমি দূরে।
আনুমানিক ৪০ হাজার বছর পর এটা ১.৬ লাইট ইয়ার্স (আলোকবর্ষ) দূরে থাকা,
৭৯৩৮৮৮ নামক তারার খুব কাছ থেকে যাবে,
এবং এই তারাটা ৪০ লক্ষ ৩০ হাজার কিমি / ঘন্টার গতিতে আমাদের সৌরমণ্ডলের দিকেই ছুটে আসছে।

এদিকে ভয়েজার-১ এর গতি এই সময়ে ৬১ হাজার ৪০০ কিমি / ঘন্টা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে।
‘ডিপস্পেস’-এ থাকা ভয়েজার-১ এর সাথে বিজ্ঞানীদের সম্পর্ক স্থাপনের কাজ করে রেডিও সিগন্যাল,
এবং ভয়েজার-১ এখন পৃথিবী থেকে প্রতিদিন ১৪ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬০০ কিমি দূরে চলে যাচ্ছে।
ব্যাটারি ক্রমশ দুর্বল হতে থাকার কারণে অনুমান করা হচ্ছে যে-
২০২৫ সাল নাগাদ এরা বা এর কোনো একটা কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।
এরপর ভয়েজার-১ অন্ধকারে অনন্ত মহাবিশ্বে ততক্ষণ পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে,
যতক্ষণ পর্যন্ত এরা কোনো অবজেক্টের সাথে ধাক্কা না খাচ্ছে।
যদিও এখন পর্যন্ত ঘটেনি এমন কোনও ঘটনা।

আজ পর্যন্ত মনুষ্য সৃষ্ট কোনো মহাকাশ যানই এত দূর পর্যন্ত যেতে পারেনি।

অন্যান্য মিশন, ভয়েজার-মানুষের সম্পর্কের ভবিষ্যৎঃ

১৯৭২ ও ৭৩-এ ‘ভয়েজার-১’ ও ‘ভয়েজার-২’ এর মতই,
‘পায়োনিয়ার-১০‘ ও ‘পায়োনিয়ার-১১’ নামক দুই স্পেস ক্রাফটকে মহাবিশ্বের অজানাকে অধ্যয়ণের জন্যে
মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
দুর্ভাগ্যবশতঃ একটার সাথে ১২ ও অপরটার সাথে ২০ বছর যাবৎ,
যোগাযোগের সর্বরকম আন্তরিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়।
আনুমানিক, ভয়েজারের সাথে এমনটাই ঘটবে।
সমগ্র মানবজাতি সমেত আমাদের এ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে একদিন,
কিন্তু অসীম মহাবিশ্বের অন্ধকারে তখনও ভেসে বেড়াবে ভয়েজার,
চিরকালের মতন হারিয়ে যাবে আমাদের থেকে!!

 

তন্ময় সিংহ রায়

Join Our Newsletter

We don’t spam! Read our privacy policy for more info.

About Articles Bangla

Check Also

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলঃ মায়ামি, হ্যামিলটন, সান হুয়ানের ত্রিভুজ। গভীর সমুদ্রে রহস্যময় স্টার গেট, জাহাজ ও বিমান নিখোঁজ।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল– সমুদ্রের অদৃশ্য রহস্য ত্রিভুজ!

রহস্যের সামনে নির্বাক সভ্যতাঃ পৃথিবী– এর গর্ভে আজও যে কত বিষ্ময় লুকিয়ে রেখেছে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *