নিশ্বাস ঘেঁষে চলে অদৃশ্য বিপর্যয়, যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু হৃদয় রক্তাক্ত করে।
প্রতিটা কিলোটন শক্তি যে হিসেব করে,
তার পিছনে লুকানো আছে অসংখ্য অদৃশ্য মৃত্যু ও দীর্ঘদিনের যন্ত্রণার পাকা হিসেব।
জাদুগুড়ার মাটিতে শুধু খনি নয়;
জমে আছে কোলকাতা থেকে হাজার মাইল দূরের শিশুর জন্মহীন কান্না,
গরীব, অসহায় অভিভাবকের নীরব ব্যথা।
মানব সভ্যতা এগোচ্ছে বলে মনে হলেও–
সেই অগ্রগতি কখনও কখনও হয়ে ওঠে এক নিষ্ঠুর (Cruel) পরীক্ষাগার,
যেখানে মানুষের শরীর ও চেতনাই পরীক্ষা হয়।
এই লেখা সেই নীরব ডাক–
একটা প্রতিফলন, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়ঃ
শক্তি কতই বড় হোক, যদি মানবতা হারায়, তবে আমরা ভয়ঙ্কর ভুল পথে আছি।
এর মাশুলও গুনতে হবে আমাদেরই।
বিস্ফোরণ থেমে যায়,
কিন্তু বিকিরণ শ্বাস নেয় মাথার ভিতরেঃ
শক্তি যখন পরিমাপ হয় অস্ত্রের কিলোটনে,
আর উন্নয়ন যখন গোনা হয় বোমার বিস্ফোরণে, তখন মানুষ বলে– আমরা এগোচ্ছি।
কিন্তু ইতিহাস চুপচাপ ফিসফিস করে, আমাদের ধ্বংসের প্রতিধ্বনি শুনিয়ে।
নিউক্লিয়ার বোমা কেবল একটা যান্ত্রিক বিস্ফোরণ নয়।
জাতির আত্মার উপরে চালানো এ এক নিষ্ঠুর শল্যচিকিৎসা,
যেখানে আকাশে ছুরি ঘোরে, আর রক্ত ঝরে কয়েক প্রজন্ম ধরে।
আলো ঝলসে ওঠার আগে মানুষ ভাবে সে শক্তিশালী;
কিন্তু আলো নিভে গেলে বুঝতে পারে– সে শুধুই ভস্ম।
প্রথম আঘাত আসে তাপে।
এমন তাপ, যে হাড়ের ক্যালসিয়ামও মুহূর্তে পরিণত হয় বাস্পে।
মানুষ চিৎকার করবে কিভাবে–
তাঁর স্বরযন্ত্র তো ইতিমধ্যেই গেছে ছাই হয়ে।
এরপরেই শক-ওয়েভ– ধাতু বাঁকে, কংক্রিট ভেঙে যায়,
মানুষের শরীরকে রাস্তায় কাগজের ঠোঙার মতন ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
কিছু মানুষের হাত-পা তো এমন শুকিয়ে যায়,
যেন বাতাসে লাফিয়ে বেড়ানো শুকনো পাতা।
কিন্তু সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল– বোঝার সময়টুকুও পাওয়া যায় না।
যা দেখা যায় না, কিন্তু মারে সবচেয়ে বেশি।
( আসলে প্রকৃতির কোনো পুলিশ নেই, নেই আদালত, প্রশাসন।
সে কথাও বলতে পারে না, কিন্তু অনুভূতি নেই, তা কিন্তু আদৌ নয়।
আর সেই অনুভূতি থেকে জন্ম নেওয়া–
রাগ-দুঃখ, যন্ত্রণা, ভবিষ্যতে পরিণত হবে এক প্রলয়কান্ডে।
পড়ুন– Click: কি হবে কোলকাতার ভবিষ্যৎ? উত্তরবঙ্গ থেকে ধরালী– সতর্কতা! )
অদৃশ্য বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে।
সেই বিষ ধুলো ঢুকে পড়ে মানুষের দেহে, হাড়ে, মজ্জায়,
গর্ভের ভিতরে থাকা শিশুর শিরায়।
যেন পৃথিবী বাধ্য হয়ে নিজের সন্তানদের রক্তকে অদৃশ্য বিষে ভরিয়ে দিচ্ছে।
আর সেই শিশু জন্মায়– হয় তিন চোখ নিয়ে, নয়তো কোনো চোখ ছাড়া;
কথা বলতে অক্ষম, চিন্তা করতেও অক্ষম।
জন্মের প্রথম থেকেই সে যুদ্ধের বন্দী।
যুদ্ধ কি শেষ হয়?
না, নিউক্লিয়ার যুদ্ধ কখনও শেষ হয় না।
বিস্ফোরণের শব্দ থেমে যায়,
কিন্তু মৃত্যু, ধ্বংস এবং মানসিক বিভ্রান্তি চলতে থাকে দশক, শতাব্দী ধরে।
জাদুগুড়া– যেখানে উন্নয়ন মানে অভিশাপঃ
বর্তমান পৃথিবীতে জাতিসংঘ স্বীকৃত দেশের সংখ্যা ১৯৩.
ভ্যাটিকান সিটি ও প্যালেস্টাইন, এই দুই দেশ সাধারণভাবে দেশ হিসেবে স্বীকৃত।
অর্থাৎ বিশ্বের মোট ১৯৫ টা দেশের মধ্যে মাত্র ৯ টা দেশে প্রধান উৎপাদক হিসেবে পাওয়া যায় ইউরেনিয়াম,
যার মধ্যে কাজাখস্তান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নামিবিয়া, নাইজার, রাশিয়া, উজবেকিস্তান, চীন,
আর ভারতের ঝাড়খন্ড, রাজস্থান ও অন্ধ্রপ্রদেশ উল্লেখ্য।
কিন্তু ঝাড়খন্ডের জাদুগুড়া অঞ্চলে এর উত্তোলন চলছে ভয়ঙ্কর মূল্য চুকিয়ে।
সেখানে রেডিওঅ্যাক্টিভ বর্জ্য ফেলে রাখা হয় খোলা মাটিতে এমনভাবে,
যেন গোটা রাষ্ট্র ঘুমে অচৈতন্য, আর মৃত্যু হাঁটতে থাকে অবলীলায়, বুক ফুলিয়ে।
গ্রামের মানুষের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার, গবেষণা ও বক্তব্যের মাধ্যমে উঠে এসেছে–
সে গ্রামে প্রতি তিনজনে, একজনের শরীরে বিকলতা ও নারকীয় পরিবেশ।
- কারও ত্বকের ক্ষতি ( ফুসকুড়ি, ঘা, চামড়া উঠে যাওয়া) হচ্ছে।
- কারও কোষ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে, মুখ বা অন্য অঙ্গ গলে, ফুলে যাচ্ছে,
পচন ধরছে। - শিশুরা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মগ্রহণ করছে।
- মস্তিষ্কের ক্ষয় বা কগনেটিভ ডিজেবিলিটি ( মানসিক বিকলতা)-এর স্বীকার,
যেখানে শিশু তাঁর নাম পর্যন্ত বলতে পারছে না। - অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়ছে ক্যান্সার।
- নিঃশব্দে প্রতিদিন ছড়াচ্ছে দূষণ।
- দূষণের কারণ বুঝিয়ে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে মানুষজনকে।
- খনি বা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের কারণে মানুষ হারিয়েছে তাঁদের কৃষি, বা আবাসন জমি।
- খনি থেকে সৃষ্ট বর্জ্য ও রেডিয়েশন–
জলের উৎস, কৃষিজমি, পশুপাখী ও জলজ প্রানীর উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। - ঠিকমত স্বাস্থ্যপরীক্ষার সুবিধা না থাকায় আদিবাসী শ্রমিক ও গ্রামবাসীরা দিন কাটাচ্ছে মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্যে।
- ২০২৩-এর এক (Click) “প্রতিবেদন” অনু্যায়ী–
এমনকি সেখানের প্রায় ১০% মহিলা কয়েক বছর ধরে সন্তান ধারণ করতে পারছে না।
জাদুগুড়া কি তবে রাজনীতির স্বীকার?
দীর্ঘ ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে জাদুগুড়ার গ্রামবাসীদের চরম দুর্ভোগ আজও বজায় আছে বহাল তবিয়তে।
ইউরেনিয়ামের খনি ও এর প্রভাবের আলোকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে সেখানে পড়েছে–
হো, মুন্ডা, আরাওন ও সন্তাল সম্প্রদায়ের আদিবাসী মানুষরা।
প্রতিবাদ, প্রতিরোধ বা আন্দোলনও চালিয়েছে সেখানকার মানুষজন।
যদিও কেন্দ্রীয় সরকার ও UCIL ক্রমাগত দাবি করে আসছে “সব ঠিক আছে,”
অর্থাৎ তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী–
জাদুগুড়ার মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যার প্রধান কারণ হল, খাওয়া-দাওয়া, ম্যালেরিয়া ও অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা,
কিন্তু এই দাবি গবেষণার ফলের সাথে মিলছে না, মিলছে না গ্রামীণ বাস্তবতার সাথে।
এটা কি উন্নয়ন চলছে, না দাসপ্রথার পুনর্জন্ম?
যেখানে লোহার শিকল নেই, কিন্তু অদৃশ্য বিকিরণ দিয়ে বন্দী করা হয়েছে মানুষকে?
সরকার বলছে– দেশ উন্নয়ন হবে।
সেখানকার মানুষ বলছে– আমরা আর মানুষ নেই, আজ পরীক্ষা-নিরীক্ষার বস্তু।
বেঁচে আছি, এটাই আশ্চর্য।
পারমাণবিক যুদ্ধ– ধ্বংস কি শুধু মুহূর্তের?
যুদ্ধ লাগলে কি হবে?
গ্রাম, মফস্বল, শহর কেউই রেহাই পাবে না।
চোখের পলকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে সভ্যতা।
খাদ্য, পানীয়, হাসপাতাল সব বিষাক্ত ও অচল হয়ে পড়বে।
তখন শুধু ধ্বংস নয়– জীবনই হারাবে এর মানে।
ক্ষেত-খামার হবে নীরব।
ফসল হবে বিষের বদলে স্মৃতি।
নদী হবে এমন এক স্মরণযন্ত্র, যে কেউ সেখানে আর হাত ধোবে না।
পুকুর, কুয়া, নালা– সবই শুধু কণ্ঠহীন কাহিনী বহন করবে।
বিপন্ন হবে জন্ম, উত্তরাধিকার।
শিশুরা বড় হবে বিকল হাত-পা আর নীরব চোখ নিয়ে।
পিতা-মাতারা থাকবে ফলহীন ভরসার ছায়া হাতে নিয়ে;
ভুলে যাবে কিভাবে একটা কচিল হাসে।
শহরে, যেখানে ব্যস্ত গলিবর্ত ছিল, তখন সেখানে দাঁড়াবে এক দীর্ঘ সারি–
মানুষ গণনা করবে ক্ষুধাকে, মৃত্যুকে আর জীবনের শূন্যতাকে।
মানবিক বন্ধন ছিঁড়ে যাবে।
শত্রু আর বন্ধু ভয় দেখাবে একইরকম।
মানবতা হয়ে যাবে এক মুখরোচক হিসেব, কি, কত ক্ষতি,
কত শতাংশ বাঁচল, আর সেখানেই চিতায় উঠবে নৈতিকতা।
রাতের অন্ধকারে কেউ আর প্রার্থনা শুনবে না; শুনতে পাবে শুধু খালের মত নিঃশ্বাস,
যা সেই ভীতি ছড়িয়ে দেয়।
এ হবে নীরব, দীর্ঘদিন রক্তরঞ্জিত শাস্তি, যেখানে প্রতিটা নিঃশ্বাসই গণনা করা অপরাধ।
এ বাঁচার চিহ্ন নয়; এ কেবল বেঁচে থাকার একটা প্রশিক্ষণ,
যাকে আমরা নাম দেব ‘অস্তিত্বের অনুশাসন।’
( প্রত্যক্ষদর্শীরা আজও বলেন:
“আমরা মানুষ দেখিনি, ওরা কেমন অন্যরকম ছিল।”
পড়ুন– Click: এলিয়েন কি তবে পৃথিবীতেই আছে? )
তোমরা, যাদের হাতে সিদ্ধান্তের বোতামঃ
তোমরা যে বোতাম টেপো কিংবা সই করো অনুমোদনে–
তা শুধু কাগজে লেখা সংখ্যা নয়।
তোমরা কিলোটনের গর্ব গুনবে, কিন্তু তোমাদের সিদ্ধান্ত হাজারো মায়ের রক্ত,
শিশুর দুপুরের নিষ্পাপ হাসি, নদীর শান্তি কেটে ফেলবে কয়েক টুকরো করে।
তোমরা বলবে– এটা দেশরক্ষা, আত্মমর্যাদার ব্যাপার।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে– কাদের রক্ষা?
তোমাদের দেশে নতুন ভোর আসবে কি অন্য দেশের মাঠে কবরের স্তুপের বিনিময়ে?
তাহলে সেই ‘রক্ষা’ কি আদৌ রক্ষা করেছে মানবতাকে?
সেই দেশে কি আর মানুষ থাকবে?
কি দোষ ছিল তাঁদের?
কোন অধিকারের নামে, কোন সংবিধানের ধারা বা আইনের আড়ালে,
ছিনিয়ে নেওয়া হবে তাঁদের খুশি, স্বপ্ন, আনন্দ, আশা-ভরসা?
স্মরণ করো– শক্তি বিচার করে না, করে মানুষঃ
তোমাদের সিদ্ধান্ত রাজনীতি হতেই পারে, কৌশল হতে পারে,
হতে পারে প্রশংসার কারণ।
কিন্তু এর ফল– জীবন, মৃত্যু আর প্রজন্মের ভাগ্য হতে পারে না।
আর শক্তি যদি এভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের ওপর,
তবে তোমরা বিজ্ঞানী নও, নও প্রকৃত রাজনীতিবিদ–
তোমার মানুষের ছালের ভিতরে লুকিয়ে থাকা সব হিংস্র জন্তু।
তোমাদের চোখ থাকলেও, মানুষের কাছে হয়ে থাকবে অন্ধ–
ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ।
তোমরা হয়তো শব্দ পাবে জয়গানের,
কিন্তু সেই সঙ্গীতের নিচে হবে অনাবৃষ্টির কালো চিৎকার–
সেই নিরীহ মানুষের, যাদের নাম কেউ উচ্চারণও করবে না।
নির্দেশ নয়– একটা আবেদনঃ
মানুষ যখন ভুল করে, ভুলকে ঠিক ভেবেই করে।
যদি সত্যিই তোমরা শক্তিকে গর্ব না করে, বাঁচাতে চাও মানবতাকে–
স্থির করো তোমাদের সিদ্ধন্তের সীমা।
বোতাম টেপার আগে আরও ভাবো, দূরদর্শিতা বাড়াও– কি হবে দশ বছর পর?
কি হবে নিষ্পাপ, নিরীহ, নিরপরাধ সেইসব শিশুর প্রকৃতির রূপ?
কি হবে নদী পরবর্তী শুষ্ক মৌসুমে?
বাঁচিয়ে রাখলে তোমরাই শক্তিশালীই থাকবে– কিন্তু মানবতা হারালে,
তোমাদের শক্তি শুধুই ধ্বংসের পদচিহ্ন, অহঙ্কারের ভয়ানক পরিণাম।
তোমরাই শক্তি; শক্তি তোমাদের বিচার করবে না, নির্ধারন করবে না মানুষের ভাগ্য।
মানুষই করবে, তাই বদলানো শেখাও, অভ্যেস করো নিজেরাও।
শুধরে নিলে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা সত্যিই নিলে, ইতিহাস তোমাদের দন্ড দেবে না,
বরং নাম লিখে রাখবে সম্মানীয়দের তালিকায়– যে একদিন শক্তিকে মানবতায় জিতিয়েছিল।
মানবতা বনাম রাষ্ট্রঃ
প্রতিটা দেশ আজ শান্তির নামে যুদ্ধের জন্যে যেন এক পা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রতিটা রাষ্ট্রের লক্ষ্য– শক্তি, নিরাপত্তা, নিয়ন্ত্রণ।
প্রতিটা রাষ্ট্র আজ ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়– আমার জমি, আমার জমি।
সত্যিই কি আজ আমরা সভ্যতার বুকে দাঁড়িয়ে?
সভ্যতা যেন আজ একটা ছাল, যার নিচে দাঁড়িয়ে চলছে মানুষের সার্বিক অসভ্যতা।
এ এক সুসজ্জিত বর্বরতা।
শক্তি কি আসল ক্ষমতা, না ন্যায়ের পাশে দাঁড়ানোই আসল শক্তি।
নিউক্লিয়ার অস্ত্র মানুষের দেহ নয়, চেতনাকে হত্যা করে।
মানুষ আর মুক্ত নয়– সে জন্ম থেকেই বন্দী।
পৃথিবীর সব পরমাণু একদিন থেমে যাবে, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাবেঃ
শক্তি আদতে কি আমাদের রক্ষা করলো, না করলো ধ্বংস?
একটা সম্ভাবনাঃ
শক্তি আসলে বিস্ফোরণে বা বীরত্বের মাংশপেশিতে নয়,
শক্তি মানুষের হৃদয়ে থাকে।
এটা ক্ষমার মধ্যে, বাঁচিয়ে রাখার মধ্যে, ঘৃনাকে নিয়ন্ত্রণ করার মধ্যে থাকে।
মানুষ মেরে কেউ যদি ভাবে, সে শক্তিশালী, তবে সে ভুলকে ঠিক ভেবেই করে।
শক্তিশালী হওয়া যায় মানুষকে বাঁচিয়ে রেখে।
নিউক্লিয়ার বোমা বানানো বিজ্ঞান, কিন্তু তা ব্যবহার না করা সভ্যতা।
প্রথম আগুন আবিষ্কার করে মানুষ একদিন সভ্য হয়েছিল,
আবার শেষ আগুন ব্যবহার করে মানুষ পরিণত হবে পশুতে।
সমাধানঃ
- রেডিওঅ্যাক্টিভ খনিজ তোলার আগে মানুষের স্বাস্থ্য, জীবন নিশ্চিত করতে হবে।
- হেলথ মনিটরিং ও ক্ষতিপূরণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
- ইউরেনিয়াম ব্যবহারে ন্যায়সংগত আন্তর্জাতিক নীতি থাকা জরুরী।
- সর্বোপরি– বিশিষ্টরা কখনই যেন যুদ্ধকে সমাধান হিসেবে না ভাবে।
শক্তি চাই, কিন্তু মানবতার বিনিময়ে নয়ঃ
নিউক্লিয়ার বোমা পৃথিবীকে শক্তিশালী করে না–
একটা বোমা ফাটার আগেই তা আমাদের বিবেক উড়িয়ে দেয়।
সুতরাং প্রশ্ন এখনই করতে হবে–
আমরা কি উন্নত হতে চাই, না কি কেবল শক্তিশালী?
শক্তি অর্জন অনিবার্য হতে পারে, কিন্তু এর মূল্য খতিয়ে না দেখে মানবতা ছিনিয়ে নেওয়া অপরাধ।
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি যদি জীবনকে রক্ষা না করে,
সেক্ষেত্রে এদের নাম হওয়া উচিৎ কেবল ‘কৌশল,’ কেবল ন্যায়ের অভাবে পুজো।
নীরব প্রত্যাখ্যান, স্পষ্টতা ও জবাবদিহি ছাড়া কোনো দেশ সত্যিকারের উন্নতি কখনই পাবে না।
( বিঃ দ্রঃ– কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষকে সমর্থন করে এই লেখা নয়।
একজন অনুশীলনরত লেখক হিসেবে–
স্বাধীন চিন্তা ও মতামত প্রকাশ করেছি মাত্র।
শুধুমাত্র ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত-এর প্রেক্ষাপটে এই লেখা,
যা সাধারণ মানুষ কিংবা প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত।)