সভ্যতার অহংকার বনাম প্রকৃতির প্রতিক্রিয়াঃ
সভ্যতার অহংকার যখন প্রকৃতির সহিষ্ণুতার সীমাকে লঙ্ঘন করে,
তখন পৃথিবী আর সংলাপ করে না, ঘোষণা করে “রায়।”
এর ভাষা মানুষের অভিধানে নেই,
তা প্রকাশ পায় পাহাড় ভেঙে পড়ার শব্দে, জলের উন্মত্ত স্রোতে,
আর জীবনের গহ্বরমুখী নীরব যাত্রায়।
এ কোনও দুর্ঘটনা নয়, এ এক প্রাচীন সমীকরণের পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
যেখানে প্রকৃতিকে আঘাত মানেই, নিজের হাতে নিজেদের ধ্বংসের বীজ পোঁতা।
আর যাঁরা এখনও শুনবে না এই সংকেত, তাঁরা টিকে থাকবে এক নিঃশেষিত গ্রহের উপরে।
যেখানে প্রতিদিন ওইভাবে বাঁচার চেয়ে মনে হবে মৃত্যু ঢের সুখের।
প্রকৃতির হুঁশিয়ারি– বিপর্যয় নয়, সংকেতঃ
অর্থাৎ, ভূগোলের ভাষায় এগুলো দুর্যোগ, বিপর্যয় হলেও,
এসব কিন্তু আদৌ কোনও দুর্যোগ, বিপর্যয় নয়, এ প্রকৃতির হুঁশিয়ারি সংকেত!
এতে বলা হয়–
“আর নয়, আমাকে আঘাত করলে এবারে চিরতরে মুছে দেব তোমাদের অস্তিত্ব!”
মানুষ ধীরে ধীরে নিশ্চিত হয়ে ভেবে বসেছিল–
সে প্রকৃতির মালিক।
গাছ কেটে, পাহাড় ভেঙে, ফাটিয়ে, এমনকি আকাশ ছিঁড়ে ফেলেও ভেবেছিল,
এ পৃথিবী তাঁদের বশে।
আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই করতে করতে তাঁরা প্রায় ভুলেই গেছিল–
“Every Action Has An Equal And Opposite Re-action.”
আর যদি তা হয় প্রকৃতির প্রতিক্রিয়া, তবে তা কিন্তু মানুষের প্রতিক্রিয়ার মতন নয়।
( অর্থাৎ মানুষ দ্বারা সৃষ্ট নানান কু-কৃতকর্মের ফলেই-
বুকে জমানো দীর্ঘদিনের তীব্র দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা ও অপমানের ফলস্বরূপ,
এ পৃথিবীটা আজ যেন বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার একমাত্র পথ,
অথবা বলা যেতে পারে, প্রয়োগ করতে চলেছে নিউটনের তৃতীয় সূত্র।
Click: মহাশূন্যে ভাসমান এ নীল গ্রহে একটা মহাপ্রলয় আজ বড় প্রয়োজন! )
ধরালী গ্রামের বিধ্বংসী হড়পা বানঃ
৫ ই আগস্ট ২০২৫,
সময় : ভারতীয় স্থানীয় সময় অনুযায়ী দুপুর ১.৩০.
গঙ্গার এক প্রধান উপনদী ‘ঝিলং’-এর তীব্র জলস্রোত, হড়পা বানরূপে,
কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে ১০ মিনিটেরও কম সময়ে বিকট গর্জন করে,
হঠাৎই গিলে নেয় উত্তর কাশির সম্পূর্ণ “ধরালী” গ্রামকে।
যে গ্রাম কয়েক মুহূর্ত আগেও ছিল সবুজে ঘেরা, শান্ত– ঝর্ণাধারার কোলে।
যে গ্রামের মানুষ প্রতিদিন বুনতো কত-শত স্বপ্ন, বাঁচতো কত আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে।
যে গ্রামের মানুষের কত কাজ ছিল বাকি, কত কথা বলা ছিল বাকি।
পাহাড়ি নদীর বুক ফেটে নেমে আসা হড়পা বানে, মাত্র কয়েক মিনিটের তাণ্ডবে,
সেখানের জীবনগুলো ফুঁঁৎকারে নিভে পরিণত হল ইতিহাসের পাতায়।
মৃত্যু যন্ত্রণায় হয়তো চিৎকার করার সুযোগটুকুও পায়নি অনেকে।
পায়নি প্রিয়জনকে শেষ কিছু বলার অবকাশ, পায়নি শেষ চোখে চোখ রাখতে।
কত চাওয়া-পাওয়া, ভরসা, বিশ্বাস, ভালোবাসা, অভিমান, সব ভেঙে,
দুমড়ে-মুচড়ে কোন অজানায় ভেসে চলে গেল স্রোতের সাথে।
সব চোখের পলকেই হয়ে গেল নিশ্চিহ্ন!
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকারী দলের পর্যবেক্ষণ থেকে উঠে এসেছে–
জল স্তরের উচ্চতা ছিল ৪৫ থেকে ৫০ ফুট, অর্থাৎ একটা তিন তলা বাড়ির সমান।
(Click: দেখুন ধরালী গ্রামের সেই ধ্বংসের মুহূর্ত)
এছাড়াও– ২০২৪-এর মাঝামাঝি জম্মু-কাশ্মীরে একাধিক হড়পা বানের ঘটনা ঘটেছে।
২০২৫, ১৪ ই আগস্ট,
Kishtwar জেলার Chashoti গ্রামে এক ক্লাউডবার্স্ট থেকে সৃষ্টি হয়েছে ফ্লাড,
যাতে নিহতের সংখ্যা ৬৮ জন, ৩০০ মানুষ আহত।
আর ৩৬ জনকে নিখোঁজ হিসেবে রিপোর্ট করা হয়েছে।
এছাড়া Kathua জেলার Jodh Ghati এলাকায় এক হঠাৎ বন্যায়,
৫ জন মারা যায় বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
অবহেলা, বিপর্যয় থেকে শিক্ষা না নেওয়াঃ
- কেদারনাথ ঘটনা থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারিনি।
- আমরা শিক্ষা নিতে পারিনি আম্ফান সাইক্লোন থেকে।
- অস্ট্রেলিয়ার দাবানল থেকে।
- পাকিস্থানের বন্যা থেকে।
- ইউরোপের হিটওয়েভ থেকে।
কি অদ্ভুত আমাদের মনস্তত্ব–
নিজেদের ক্ষণস্থায়ী বাসস্থানের উচ্চতা, পরিচর্যা নিয়ে আমরা দিবারাত্রি ব্যস্ত।
আর পৃথিবীর দেওয়া ফ্রি, অথচ দীর্ঘস্থায়ী বাসস্থানকে,
আমরা দিনের পর দিন ধরে দিয়ে আসছি অবহেলা, অভালোবাসা।
করে আসছি অপমান, অসম্মান, অত্যাচার,
আর তা এভাবে, যেন প্রকৃতির কোনো আত্মসম্মানই নেই, থাকা উচিৎ নয়।
আসলে প্রকৃতির কোনো পুলিশ নেই, নেই আদালত, প্রশাসন।
সে কথাও বলতে পারে না, কিন্তু অনুভূতি নেই, তা কিন্তু আদৌ নয়।
আর সেই অনুভূতি থেকে জন্ম নেওয়া রাগ-দুঃখ, যন্ত্রণা, ভবিষ্যতে পরিণত হবে এক প্রলয়কান্ডে।
সে সময়ে চাইলেও আর কোনো সুযোগ আমরা পাব না ক্ষমাটুকু পর্যন্ত চাওয়ার।
এদিকে সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ীঃ
গত শনিবার রাত থেকে–
উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি ও পাদদেশীয় এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়ে এখনও তা অব্যাহত।
( দূষণও বাড়াবে এর মাত্রা, তীব্র হবে জলবায়ু পরিবর্তন, বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণ বাড়বে,
এবং নদী, জলাশয় ও স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে এর প্রভাব পড়বে আরও বেশি।
Click: অক্সিজেনের অভাবে তবে কি ছটফট করবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম? )
কারণ:
- ১. মৌসুমি বায়ুর পুরোপুরি বিদায় না নেওয়া।
- ২. সাম্প্রতিক সৃষ্টি হওয়া বঙ্গোপসাগরের এক গভীর নিম্নচাপ,
ও ঘূর্ণিঝড়, যা উত্তরবঙ্গ ও উত্তরপূর্ব ভারতের দিকে টেনে নিয়ে এসেছে প্রচুর আর্দ্রতা। - ৩. পাহাড়ি ভূ-প্রকৃতির ভূমিকা।
অর্থাৎ– দার্জিলিং বা কালিম্পঙ অঞ্চলে বাতাস আর্দ্র হয়ে পাহাড়ে ঠেকে গেলে,
বৃষ্টি আরও তীব্র হয়।
তাই সমতলে মাঝারি বৃষ্টি হলেও, তা পাহাড়ি এলাকায় ভয়াবহ রূপ নেয়। - ৪. সর্বোপরি– জলবায়ু পরিবর্তনের কু-প্রভাব।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মিরিক ও সুখিয়াপোখরিতে।
দার্জিলিং ও শিলিগুড়ির সাথে মিরিকের যোগাযোগের একমাত্র প্রধান সড়ক ছিল মিরিক সেতু।
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি নদীর অস্বভাবিক স্রোত ভেঙে ফেলে মিরিক সেতু।
এর ফলে– মিরিকের সাথে, দার্জিলিং ও শিলিগুড়ির যোগাযোগ আপাতত বিচ্ছিন্ন।
(Click: মিরিকের সেতু ভাঙার পরবর্তী দৃশ্য দেখুন)
এ ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের (সংবাদ মাধ্যম অনুযায়ী),
আর সুখিয়াপোখরিতে ভূমিধ্বসে অকাল মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।
এছাড়াও ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপকভাবে।
দার্জিলিং, পুল বাজার, কার্শিয়াং, কালিম্পং এলাকায় ভূমিধ্বস ও বন্যায় ত্রাহি ত্রাহি রব।
মৃতের সংখ্যা ২৩ ছাড়িয়েছে।
জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে ১০ হাজারের বেশি মানুষ ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে নিরাপদ স্থানে।
ট্রেইন চলাচল বিঘ্ন।
ভবিষ্যতের কথা ভেবে যা করা উচিৎঃ
কার্বন নির্গমন কমানো
- সরকারঃ নবায়নযোগ্য জ্বালানী (সোলার উইন্ড, হাইড্রো) ব্যবহার বাড়ানো,
কার্বন ট্যাক্স ও জ্বালানী নীতি প্রণয়ন। - নাগরিকঃ গাড়ি যথাসম্ভব কম ব্যবহার, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, বাইসাইকেল বা হেঁটে চলা,
জ্বালানী-সাশ্রয়ী পণ্য ব্যবহার করা।
বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ
- সরকারঃ বনাঞ্চল ও জলাধার সংরক্ষণ, অবৈধ গাছ কাটা বন্ধ,
শহরে সবুজ অঞ্চল বৃদ্ধি। - নাগরিকঃ বৃক্ষরোপণ, প্লাস্টিক ও রাসয়নিক দূষণ কমানো,
স্থানীয় পরিবেশ সচেতন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া।
জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন
নীতি ও পরিকল্পনা
- সরকারঃ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাঁধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাত বেশি করা।
তাপপ্রবাহ মোকাবিলা কেন্দ্রিক ব্যবস্থা তৈরি করা। - নাগরিকঃ নিজের এলাকায় ঝুঁকি মানচিত্র অনুযায়ী প্রস্তুতি,
জরুরী কিট রাখা, এ বিষয়ে শিক্ষা, জ্ঞান অর্জন করা ও সচেতন হওয়া।
শক্তি ও সম্পদ বাঁচানো
- সরকারঃ সব স্কুল, সরকারি ভবন, হাসপাতাল ইত্যাদিতে শক্তি কার্যকর ব্যবস্থা
(বিদ্যুৎ বাঁচানো, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি স্মার্টভাবে ব্যবহার, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার,
কম খরচে বেশি কাজ করার প্রযুক্তি) গ্রহণ করা। - নাগরিকঃ বিদ্যুৎ, জল, গ্যাস ও অন্যান্য সম্পদের অপচয় কমানো।
সচেতনতা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
- সরকারঃ জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিক্ষা ও জনসচেতনতা অভিযান।
আন্তর্জাতিক চুক্তি (যেমন– প্যারিস জলবায়ু চুক্তি) কঠোরভাবে বাস্তবায়ন। - নাগরিকঃ সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা প্রচার, কমিউনিটি প্রকল্পে অংশগ্রহণ,
স্থানীয় জলবায়ু আন্দোলনে সমর্থন।
পশ্চিমবঙ্গ ও সুন্দরবন– জলবায়ুর ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিঃ
পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চল–
কোলকাতা ও সুন্দরবন এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মক বিপদের গ্রাসে ঝুলে আছে।
সুন্দরবনের উপকূলীয় নদী ও দ্বীপাঞ্চলে সাগর স্তরের উচ্চতা ও জোয়ারের মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফলে সুশুম্বা, দৌলতদ্বীপ, সাগরদ্বীপ, নালকাটা, পিরবদা, গোগালি প্রভৃতি দ্বীপের ভবিষ্যৎ আশঙ্কাজনক।
ঘোরামারা দ্বীপ এভাবেই একসময়ে চিরতরে বিলীন হয়ে গেছে প্রকৃতির বুকে।
কোলকাতার ভবিষ্যৎঃ
চরম তাপপ্রবাহ
- কোলকাতা ইতিমধ্যে ভারতের সবচেয়ে দ্রত উষ্ণতা বাড়া শহরগুলোর মধ্যে একটা।
- IPCC এবং IMD অনুযায়ী, ভবিষ্যতে এখানে ৪০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড+
তাপপ্রবাহ ২-৩ গুণ বেশি ঘনঘন হবে। - শহরের ঘন কংক্রিট আর কম সবুজের কারণে,
কোলকাতা এক ভয়ঙ্কর “Urban Heat Island”-এ পরিণত হচ্ছে।
পরিণাম– দিনের গরম রাতেও আটকে থেকে গুমোট তাপজনিত মৃত্যুঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অতিবৃষ্টি ও জল আবদ্ধতা
- একেবারে উচ্চমাত্রার (২০০-৩০০ মিমি) বৃষ্টি হলেই,
সম্পূর্ণ শহর যেন একেবারে ভাসতে থাকে জলের বুকে। - ভবিষ্যতে বৃষ্টির প্যাটার্ন হবে– কম দিনে, অনেক বেশি বৃষ্টি।
অর্থাৎ, জল নামার আগেই আবার জল। - ভূগর্ভস্থ ড্রেইন ব্যবস্থা ১৯৬০-এর দশকের ডিজাইন,
ফলে তা ভবিষ্যতের আবহাওয়ার ধাক্কা সামলাতে অক্ষম।
ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি রুটে কোলকাতা
আম্ফান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে– একদিনের ঝড়ে,
আধুনিক শহরের বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও অর্থনীতিকে কিভাবে,
পঙ্গু করে রাজপথে ফেলে রাখা যায়।
ভবিষ্যতের ঘূর্ণিঝড় আরও বেশি শক্তিশালী হবে, কারণ– বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে।
বিল্ডিং, বিদ্যুৎ, পরিবহন অবকাঠামো–
ইতিমধ্যেই অতিমাত্রায় চাপের উপরে
- পুরনো ভবন, নতুন নির্মাণে অরাজকতা–
বন্যা বা ভূমিকম্পে তাসের ঘরের মতন ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। - Kolkata Metro, Flyover, Bridges–
সবই ঠায় দাঁড়িয়ে নিম্নাঞ্চলের উপরে, যেগুলো নিয়মিত প্লাবিত হয়,
অথচ সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এখনও যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক বা সুরক্ষিত নয়।
জলবাহিত রোগ + ডেঙ্গু ও বায়ুদূষণ–
স্বাস্থ্য বিপর্যয়
- পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন– Kolkata will soon become “High Health Risk City.”
বন্যার পর প্লেগ ও জলবাহিত রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। - কোলকাতার বাতাস আজ আর মুক্ত নয়।
ধোঁয়া, ধুলো আর রাসয়নিক মিশ্রণে নিঃশ্বাস নেওয়াটা এখন বিষ গ্রহণ করার মতন।
ফলে– প্রতিটা শ্বাসে জমা হচ্ছে বিষাক্ত কণা, যা দেহের মধ্যে নীরবে ধ্বংস প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
আর এভাবেই একদিন শহর হয়ে উঠবে অভিশপ্ত।
সমুদ্রপৃষ্ঠের হুমকি– কোলকাতার ভবিষ্যত কি?
কোলকাতার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ক্রমশই।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন– গ্লোবাল ওয়ার্মিং- এর ফলে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে উপকূলবর্তী শহরগুলোর আয়ু ধীরে ধীরে কমে আসছে, অর্থাৎ–
উপকূলীয় শহরগুলো চরম বিপদসীমার মধ্যে।
ভূতত্ত্ববিদদের মত অনু্যায়ী কোলকাতার মাটির নিচে পলির স্তর ধীরে ধীরে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে।
বিগত কয়েক দশকে শহরের কিছু এলাকায় প্রতি বছরে কয়েক মিলিমিটার করে ভূমি নিম্নগমন পরিলক্ষিত হয়েছে।
কারণ হিসেবে উঠে এসেছে– ভূগর্ভস্থ জলের অতিরিক্ত উত্তোলন এবং অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ।
পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস বলছে– যদি বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে আগামী শতাব্দী নাগাদ সমুদ্রস্তর প্রায় অর্ধমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
ফলে– কোলকাতার নিম্নভূমি অঞ্চল, বিশেষ করে পূর্ব কোলকাতা, বেহালা ও গারুলিয়া-টিটাগড় প্রভৃতি এলাকাগুলো পড়তে পারে বিপদের মধ্যে।
সমাধানঃ
সময়মতন সঠিক নগর পরিকল্পনা, জলনিষ্কাশন উন্নয়ন ও পরিবেশনীতি কার্যকর না হলে,
পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ।
সব মিলিয়ে এটুকুই বলা– রক্ষকই যদি দিনের পর দিন অবতীর্ণ হয়ে থাকে ভক্ষকের ভূমিকায়,
তো আমাদের একমাত্র বাসযোগ্য এ গ্রহ, মঙ্গলের মতন বিনাশ হতে আর বেশি দেরি হবে না।
এর সংকেত আমরা পাওয়া শুরু করেও দিয়েছি।
তন্ময় সিংহ রায়