শব্দের শক্তি ও অনুভূতির প্রভাবঃ
নাম, জাতি, পেশা, ধর্ম প্রভৃতির বৈশিষ্ট ভিত্তিতে,
ভালো-মন্দ বিশেষে পরিবর্তিত হয় অনুভূতিগুলো।
যেমন ফুল বা শিশু শব্দে মনে জন্ম নেয় যে অনুভূতি,
ধর্ষক নামে কিন্তু তেমনটা একেবারেই নয়।
‘আর্মি’ শব্দটা শুনলে আজও মানুষের মধ্যে জেগে ওঠে শ্রদ্ধা, ভক্তি,
সততা, নির্ভিকতা, সহনশীলতা, একনিষ্ঠতা, দৃঢ়সংকল্পতা, ত্যাগ, আত্মবলিদান,
তথা নিখুঁত দেশপ্রেমের এক বিমূর্ত প্রতীকী ছবি।
সে আর্মি হোক আমেরিকান, রাশিয়ান কিংবা ইন্ডিয়ান।
সেনাদের অবমূল্যায়নঃ
রাজনীতি, অপরাধ, বিনোদন, খেলাধুলা, চিকিৎসা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
প্রভৃতি সম্পর্কিত বিশেষ খবরগুলো-
বিভিন্ন নিউজ পেপার, স্যোশাল মিডিয়া কিংবা পত্র-পত্রিকায় ক্রমাগত যেভাবে হয়ে থাকে
প্রকাশিত, প্রচারিত।
বাণিজ্যিক সফলতার জন্যে শুধু গণ্ডা গণ্ডা মুভি ও ইউটিউব ভিডিও ব্যতীত,
সাধারণত তেমন বিশেষ কিছু হয় না বাস্তবের নায়ক, অকৃত্রিম রাষ্ট্রভূমি
ও ভারতীয় জনগণরক্ষক, বীর সন্তানদের অমূল্য সব অবদান নিয়ে সেভাবে প্রচার,
প্রকাশ কিংবা লেখালিখি।
অথচ ইতিহাসে রয়ে গেছে,
আমাদের দেশের এই আর্মি জওয়ানদেরই এমন কিছু রুদ্ধশ্বাস ঘটনা ভাস্বর হয়ে,
যা অবশ্যই জানা উচিৎ প্রত্যেকটা ভারতীয় নাগরিককে।
সেনাবাহিনীর গৌরব ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মঃ
পৌঁছে দেওয়া উচিৎ তাঁদের অসীম দেশপ্রেমের মৃত্যুহীন সেই সব কাহিনী
ভারতের প্রতিটা ঘরে ঘরে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানানো উচিৎ সেনা দিবসের তাৎপর্য ও ভারতীয় সেনার ইতিহাস,
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সহ সব বীরগাথা।
ফিল্মি হিরো-হিরোইন তথা বিনোদনে যেভাবে আগাগোড়া আকৃষ্ট প্রজন্ম,
এর একাংশও বোধহয় সেনাবাহিনীতে নয়।
( আমরা যদি এখনই না বদলাই-
হয়তো আগামী ২০, ৩০ অথবা ৫০ বছরের মধ্যেই
বিশ্বের অনেক বড় বড় শহর তলিয়ে যাবে সমুদ্রের নিচে।
কোলকাতা, মুম্বই, নিউইয়র্ক, টোকিও-
সব নাম একদিন হারিয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়।
বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়ংকর পরিণাম নিয়ে নিচে লেখাটা
পড়ুনঃ “গ্লোবাল ওয়ার্মিং সতর্কতা: এখনই সময় জেগে ওঠার!🌡️” )
ভারতীয় সেনার বীরত্বের প্রকৃত ছবিঃ
মৃত্যুভয়কে মুঠোয় ভরে বেমালুম ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে,
এক পর্যায়ে হাসতে হাসতে নিজেদের প্রাণটুকু পর্যন্ত দেশের জন্যে সঁপে দিতে
যাঁরা আজও দ্বিধা করে না কিছুমাত্র।
দেশের শত্রুকে যোগ্য জবাব দিতে যাঁরা বিন্দুমাত্র ভাবে না
তাঁদের দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, তথা নিজেদের অকাল ও মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা।
ঝড়-তুফান, রোদ-বৃষ্টি, বজ্রপাত, বরফ, পাহাড়-পর্বত, জলাশয়,
বন-জঙ্গলের চোখ রাঙানোকে নস্যাৎ করে,
শত্রুর সামনে বুক পেতে, চোখে চোখ রেখে, মাথা উঁচিয়ে যুদ্ধ করার সময়ে
যাঁরা ভাববার অবকাশটুকু পর্যন্ত পায়না যে,
তাঁরা আর ফিরে যেতে পারবে কি না তাঁদের প্রিয় মায়ের কোলে,
সেই প্রিয় স্ত্রী, প্রেমিকা কিংবা স্নেহ-ভালোবাসার সন্তান, পরিবারের কাছে।
সেনাদের অবদান ও ইতিহাসের স্বীকৃতিঃ
দিনের পর দিন যে সৈনিকরা আপামর ভারতবাসীকে উপহার দিয়ে চলেছে নিশ্চিন্তের ঘুম,
তাঁদের মিনিমাম কথা ইতিহাস নামক পাঠ্যপুস্তকের পাতাতেই বা কই?
যেটুকু লেখা যায়, সেটুকু লেখাও বা কই?
কি বীরত্ব শিখবে বিশেষত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম?
কিভাবে হবে তাঁরা বিপদে সংঘবদ্ধ বা বিপদের সম্মুখীন?
কিভাবে বুঝবে দেশপ্রেম আসলে ঠিক কি?
কিভাবেই বা পাবে তাঁরা জাতীয়তাবাদের সেই স্বাদ?
সেনাদের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের তুলনাঃ
গণতান্ত্রিক সমাজের বুকে দাঁড়িয়ে-
আমাদের দেশের বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের,
যেভাবে সম্মান, সু্যোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।
যে সমস্ত জায়গায় স্থাপন করা হয় তাঁদের নামি-দামি মূর্তি,
যেভাবে করা হয় তাঁদের সমাজ তথা রাজ্য, দেশ সেবার বিজ্ঞাপন,
যেভাবে দেখানো হয় তাঁদের মহৎ রূপে।
এর অন্তত অর্ধেক ভাগ, ভারতীয় সেনারা কি পেয়ে থাকেন মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধে, ভোগ-বিলাস?
তাই সেই হৃদয়স্পর্শী ঘটনাগুলোর মধ্যে একটা আজ চেষ্টা করা হল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণেরঃ
বর্তমান বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম আর্মি ও গোর্খা রেজিমেন্টঃ
বর্তমান পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম ইন্ডিয়ান আর্মির প্রসঙ্গ উঠবে,
আর সেখানে উল্লেখ থাকবেনা গোর্খা রেজিমেন্ট-এর কথা-
এও আবার কি সম্ভব?
এ যেন অক্সিজেন ছাড়া বায়ুমণ্ডলের মতন।
আর সে কারণেই তো পারস্য বংশদ্ভূত, ফাইভ স্টার বিশিষ্ট এক ভারতীয় ফিল্ড মার্শাল
শ্যাম মানেক’শ একবার করে বসেছিলেন সেই ধরিত্রি কাঁপানো উদ্ধৃতিঃ
“যে ব্যক্তি বলে সে মৃত্যুভয়ে ভীত নয় ,
সে হয় মিথ্যেবাদী, নয় এক গোর্খা!”
১৯৭১-এ ভারত-পাকিস্থান সংঘর্ষের নায়ক ও ঘটনাঃ
ইন্ডিয়ান আর্মির “মেজর জেনারেল ইয়ন অ্যান্থনি জোসেফ কার্ডোজো”র,
হৃদস্পন্দন সাময়িক স্তব্ধ করা সেই কাহিনিটা হয়তো অনেকের জানা।
আবার অনেকেরই তা আজও রয়ে গেছে জানার পরিধির বাইরে।
তাই জানা-অজানার টানাপোড়েনকে নিষ্কৃতি দিয়ে ঢুকে পড়া যাক,
আজকের সেই রোমহষর্ক ও মর্মান্তিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সৃষ্টিকারী, বাস্তব ঘটনায়।
যুদ্ধের প্রস্তুতি ও নির্দেশঃ
৩ ডিসেম্বর, সাল ১৯৭১,
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, নেহেরু কন্যা শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী,
পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে, পূর্ববাংলার মুক্তিবাহিনীর দিকে বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত।
সেনাপ্রধানের গুরুদায়িত্বে থাকা জেনারেল স্যাম মানেকশ’র
এক গুরুত্বপূর্ণ টেলিফোন, সে সময়ে পৌঁছায়
ভারতের ইস্টার্ন আর্মির চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাক জেকবের কাছে এসে।
কি ছিল সেই বার্তা?
না ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের এয়ারফিল্ডগুলোতে পাকিস্তানি বোমারু বিমান থেকে
রীতিমতন বোমাবর্ষণ শুরু করেছে পাক সেনাবাহিনী।
আগ্রাসহ ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের বেশ কয়েকটা জায়গায়ও হয়েছে বিস্তর হামলা।
বিষয়টা সে মুহূর্তে ইন্দিরা গান্ধীকে যেন করা হয় অবহিত।
এদিকে পাকিস্তানি সেনার এই হামলায় ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন হলেন তো না’ই,
বরং মনে-প্রাণে তাঁরা যেন চাইছিলেন এমনই একটা সংবাদকে পেতে।
অবশেষে পাক সেনার বোমাবর্ষণের জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী যথারীতি নেমে পড়ে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে।
( নিজেদের স্বার্থ মেটাতে, আজ পর্যন্ত মানুষ প্রকৃতিকে শুধুই শোষণ করেছে,
নিয়েছে- দেয়নি কিছুই ফিরিয়ে, তবে ভারসাম্য থাকে কিভাবে?
এ নিয়ে নিচে পড়ুন আর্টিকেলটাঃ
প্রকৃতির অবমাননা : মানব সভ্যতার অস্তিত্ব সংকটের পূর্বাভাস! )
ইয়ান কার্ডোজোর নেতৃত্বের দায়িত্বঃ
যুদ্ধ শুরু হওয়ার দ্বিতীয় দিন-
পাকিস্তানি আর্মির হাতে শহীদ হন ৫ নম্বর গোর্খা রাইফেলস-এর নেতৃত্ব দেওয়া এক সেনা অফিসার।
পরিবর্তে শূন্যস্থান পূরণে জম্মু-কাশ্মীরে পাঠানোর উদ্দ্যেশ্যে জরুরী নোটিশ পাঠানো হয়,
ফিফথ্ গোর্খা রাইফেলস্-এর সেই অদম্য, অকুতোভয়,
তরুণ ফোর্থ ব্যাটেলিয়ন কার্ডোজো ওরফে কার্তুজ সাহাবকে।
একদিনের নোটিশে দিল্লিতে কর্তব্যরত ইয়ান, স্ত্রী, সন্তানের মায়া ত্যাগ করে
সেই মুহূর্তে এসে নেতৃত্বে যোগদান করে তাঁর ব্যাটেলিয়নে।
চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ৯ দিনের সেই স্মরণীয় যুদ্ধঃ
মেজর জেনারেল ইয়ান কার্ডোজোর গোর্খা রাইফেলস্ সে সময়ে,
বিরামহীন যুদ্ধ করে যাচ্ছিল পূর্ব পাকিস্তানের সিলেটে।
১, ৫০০ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে ব্যাটেলিয়নের মাত্র ৪৮০ জন সেনাকে নিয়ে,
কার্তুজ সাহাব যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন প্রাণপণে।
এদিকে অতর্কিত আক্রমণের দরুন সম্ভব হয়ে ওঠেনি
উপযুক্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় মজুত করে রাখা।
অতএব চরম খাদ্য ও পানীয় জল সংকটে একপ্রকার অনাহারে,
প্রায় নিঃশেষ হয়ে আসা গুলি-বারুদ নিয়ে সেই চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে
টানা ৯ দিন, বিনিদ্র ৯ রাত সেনারা যুদ্ধ চালিয়ে যায় বীরবিক্রমে।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত ক্লান্ত-অবসন্ন শরীর নিয়ে এমনকি সমস্ত ইউনিট তখন ব্যাকুল হয়ে
অপেক্ষা করতে থাকে ইন্ডিয়ান আর্মির থেকে ব্যাক-আপ পাওয়ার জন্যে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ শেষ পর্যন্ত আর পাওয়া হয়ে ওঠেনি তাঁদের সেই সেনা সাপোর্ট।
ভারতীয় আর্মির বিশেষত্বঃ
ভারতীয় আর্মির ট্রেনিং ও দেশভক্তির অনন্য নজির বোধহয় ঠিক এখানেই।
পিছু হটতে, আত্মসমর্পণ করতে, অন্যায়ের সাথে আপোষ
কিংবা মাথা নিচু করতে বা স্তব্ধ হতে একপ্রকার জানে না তাঁরা।
অতএব বিশেষ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শুরু হয়ে যায়
ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সেই কার্যকলাপ।
শেষ পর্যন্ত উপায়ান্তর না দেখে কার্তুজ সাহাবের নির্দেশে
গোর্খাদের সেই ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র “খুকরি” নিয়ে তাঁরা তখন
জোটবদ্ধভাবে মরিয়া হয়ে গেরিলা কায়দায়,
অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে আক্রমণ করে বসে পাকিস্তানি সেনাদের উপরে।
সিলেট দখল মুহুর্তে কার্তুজ সাহাব-এর বিপদঃ
অবশেষে ভারতীয় আর্মি জওয়ানরা এভাবেই সিলেট প্রায় দখল করে নিয়েছে,
এমতবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ মিশন হিসেবে ইয়ান সাহেবের দায়িত্ব ছিল
বি-এস-এফ-এর সহযোগিতায়,
পাকিস্তানের হাতে বন্দী কিছু বাংলাদেশিকে যথাসম্ভব নিরাপদে উদ্ধার করার।
আর বিপদের সূত্রপাত ঠিক এখানেই।
অস্থির ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মন নিয়ে মিশন সাকসেস-এর উদ্দ্যশ্যে
সেইমতন চলতে গিয়ে কার্ডোজো বুঝে উঠতে পারেননি যে,
যে পথে তিনি হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে-ছুটে চলেছেন বাংলাদেশি যুদ্ধ বন্দী নাগরিকদের উদ্ধার করতে,
সে ভূমির নিচেই পাকিস্তানি আর্মি বিছিয়ে রেখেছে ল্যান্ড মাইন।
হঠাৎই এক বিকট বিস্ফোরণের শব্দ আর আগুনের গোলাকে সাথে নিয়ে
সজোরে এক ধাক্কা দেয় কার্তুজ সাহাবকে।
ফলস্বরূপ মুহূর্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি, হয়ে যান ঘায়েল!
প্রায় সারা শরীর তখন বিক্ষিপ্তভাবে হয়ে উঠছে রক্তে ভিজে লাল।
অত্যন্ত গুরুতরভাবে জখম হয় তাঁর পা, শুরু হয় অসহনীয় যন্ত্রণা!
হার মানা চলবে না ভেবে সে অবস্থাতেও তিনি সংকল্পে অটুট,
কিন্তু সে পরিস্থিতিতে অসাড় হয়ে আসে তাঁর পা, আর রক্তক্ষরণও অব্যাহত।
বিপদ শেষে অন্য বিপদ!
অগত্যা তড়িঘড়ি করে কার্তুজ সাহাবকে নিয়ে আসা হয় মিলিটারি বেস ক্যাম্পে।
মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণায় ডাক্তারকে তিনি অনুরোধ করেন-
মরফিন কিংবা পেথিডিন জাতীয় কোনো ওষুধ দিতে,
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ মজুত করে রাখা প্রয়োজনীয় ওষুধ বোমাবর্ষণে গেছিল নষ্ট হয়ে।
ক্ষত-বিক্ষত পা থেকে সারা শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া কিংবা ধীরে ধীরে ক্ষত স্থান পচে যাওয়ার আশঙ্কায়,
তিনি ডাক্তারকে আবারও অনুরোধ করে বসেন যে, জ্ঞানত অপারেশনের মাধ্যমে,
প্রয়োজনে যেন পা’টাই বাদ দেওয়া হয় তাঁর দেহ থেকে।
কারণ সে মুহূর্তের বুকে দাঁড়িয়ে হাতে সময় অত্যন্ত কম,
বিশেষ ভাববারও সময় নেই তাঁর পা’কে নিয়ে, দেশের প্রতি দায়িত্ব যে অনেকটাই তাঁর বেশি।
কিন্তু ভাগ্য এখানেও বিশেষ সঙ্গ দিলনা তাঁর,
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দেহ থেকে পা-এর সিংহভাগ অংশ,
বাদ দেওয়ার মতন একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এত তাড়াতাড়ি নিয়ে নেওয়াটা
ডাক্তারের পক্ষে ছিল বেশ কঠিন একটা পদক্ষেপ।
তাছাড়া উপযুক্তভাবে অস্ত্রোপচার করার জন্যে প্রয়োজনীয় উপকরণও
ছিল না সে সময়ে সেই রণক্ষেত্রে।
রুদ্ধশ্বাস সেই মুহূর্তঃ
এর পরেই ঘটে যায় হাড়হিম করা সেই ঘটনা!
অগত্যা কার্তুজ সাহাব এক সেনা অফিসারকে নির্দেশ দেন-
খুকরি দিয়ে তাঁর পা’কেই কেটে বাদ দিতে।
এ হেন এক ভয়ঙ্কর নির্দেশে বেশ হকচকিয়ে যান কর্তব্যরত সেই সহ আর্মি অফিসার।
এও কি সম্ভব?
আর্মি অফিসারের ইতস্তত বোধে শেষ পর্যন্ত কার্তুজ সাহাব নিজের হাতে তুলে নেন সেই শাণিত খুকরি।
এরপর অকল্পনীয় যন্ত্রণাকে সহ্য করে হাঁটুর নিচ থেকে নিজেই কেটে বাদ দেন তাঁর সেই ক্ষত-বিক্ষত পা’কে।
ফলস্বরূপ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তিনি লুটিয়ে পড়েন মাটিতে।
যুদ্ধ চলাকালীন প্রত্যক্ষভাবে শেষ কয়েকটা দিন তিনি ময়দানে থাকতে পারেননি ঠিকই,
কিন্তু রণজয়ের দামামা ততদিনে বাজিয়ে দিয়ে গেছিলেন এই তরুণ, বীর গোর্খা মেজর।
যুদ্ধের ফলাফল ও কার্ডোজোর ইন্টারভিউঃ
শেষমেশ ১৩ দিনের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় পাকস্তানী সেনাবাহিনী।
ইতিহাসের পাতা থেকে পূর্ব পাকিস্তান মুছে গিয়ে জন্ম নেয় এক স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
বর্তমানে বার্ধক্যের ইয়ান কার্ডোজো তাঁর ইন্টারভিউতে উল্লেখ করেছেন,
‘যুদ্ধ চলেছিল ১ : ২০ রেসিওতে, অর্থাৎ ১ গোর্খা ভার্সেস ২০ পাকিস্তানি সেনা।’
ইয়ান কার্ডোজো ওরফে কার্তুজ সাহাবের
বর্তমান জীবনঃ
বর্তমানে ৮৮ বছর বয়েসী সেই লেজেন্ড ইয়ান কার্ডোজো একজন
লেখক ও সমাজকর্মী হিসেবে বসবাস করছেন দিল্লিতে।
তন্ময় সিংহ রায়