মহাশূন্যে ভাসমান এ নীল গ্রহে একটা মহাপ্রলয় আজ বড় প্রয়োজন!

দুর্ঘটনা ও শিক্ষাঃ

‘প্রতিটা মানুষের জীবনেই প্রয়োজন এক
বা একাধিক দুর্ঘটনার,
কারণ সেই দুর্ঘটনা’ই একমাত্র পারে তাঁকে
উপযুক্ত শিক্ষা দিতে।’

অসচেতনতা, অবহেলা, উদাসীনতা নামক এই মানবিক দোষগুলো আজ পর্যন্ত,
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মিলিয়ন, বিলিয়ন মানুষকে যে কতবার, কিভাবে?
ও কোন কোন ক্ষেত্রে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নিঃস্ব-রিক্ত এবং সর্বশান্ত করে ছেড়েছে।
সর্বোপরি- মূল্যস্বরূপ দিতে হয়েছে জীবন পর্যন্ত,
এর উল্লেখযোগ্য আর এক উদাহরণ নতুন করে যেন সৃষ্টি হয়েছিল,
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের এই মহাসংক্রমণকালে।

বিপদ ও মানুষের মনস্তত্ত্বঃ

পাকস্থলী যন্ত্রণায় আর্তনাদ করলে-
ঠিক তখন’ই যেমন অনুভবে ধরা দেয়, এবারে সে খাদ্য চায়?
ঠিক তেমন’ই- বিপদ হয়ে গেলে, তবেই ধড়ফড় করে লাফিয়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠে,
সিংহভাগ মানুষের বিবেক, চেতনা বা মনের আকাশে উদয় হয় শুভ বুদ্ধির।
এ আমাদের এক সত্যিই বড় অদ্ভুৎ মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।

ছেলেবেলায় শেখা-
সেই শব্দ সমষ্টির অন্তর্নিহিত অর্থ ‘জলের অপর নাম জীবন।’
আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষের ‘পরম বন্ধু গাছ।’

প্রাণীজগৎ ও হোমোস্যাপিয়েন্সঃ

বিজ্ঞানী ও জীবাশ্মবিদদের অনুমান অনুযায়ী-
পৃথিবীর প্রায় জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে,
এবং এর মধ্যে প্রায় ৯৯% ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৮.৭ ± ১.৩ মিলিয়ন ইউক্য্যারিওটিক প্রজাতির প্রাণী বিদ্যমান,
যদিও এদের মধ্যে অনেকগুলোই আবিষ্কৃত হয়নি এখনও।

এদের মধ্যে জ্ঞান, বুদ্ধি, চিন্তাশক্তি, ক্ষমতা, দূরদর্শিতা প্রভৃতির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে-
সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে, এক দীর্ঘ ঐতিহাসিক বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে,
হোমোস্যাপিয়েন্স নামক এই প্রজাতি।

এমনকি বর্তমানে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নতি ঘটিয়ে-
ক্রমাগত তাঁরা খুঁজে চলেছে, অনন্ত বিশ্বব্রম্ভাণ্ডে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন গহীন রহস্যের সেই মুখগুলোকে।
অথচ সেই মানুষই-
আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে, ও প্রতিনিয়ত করে চলেছে এ বিশ্বের।
অশিক্ষিত, অনুন্নত ও অবুঝ কোনো পশু পাখি কিন্তু নয়।

( উন্নয়নের নেশা, মুনাফা, ভোগ-বিলাসিতা ও প্রতিযোগিতায় বুঁদ হয়ে,
আমরা আজ নিজেদের পায়ের তলা থেকে কিভাবে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি
প্রকৃতিকে, কি এর মারাত্মক পরিণাম ?

জানতে হলে পড়ুনঃ অক্সিজেনের অভাবে তবে কি ছটফট করবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম? )

মানুষের কু-কৃতকর্ম ও পরিবেশঃ

অর্থাৎ মানুষ দ্বারা সৃষ্ট নানান কু-কৃতকর্মের ফলেই-
বুকে জমানো দীর্ঘদিনের তীব্র দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা ও অপমানের ফলস্বরূপ,
এ পৃথিবীটা আজ যেন বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার একমাত্র পথ,
অথবা বলা যেতে পারে, প্রয়োগ করতে চলেছে নিউটনের তৃতীয় সূত্র।

দিনের পর দিন চুড়ান্ত নির্দয় হয়ে, প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় অমূল্য সম্পদের সাথে,
নির্দ্বিধায় আমরা নানাভাবে করে চলেছি যথেচ্ছ দুর্ব্যবহার।
স্বার্থসিদ্ধির আন্তরিক উদ্দ্যেশ্যে এ সমস্ত সম্পদের অপব্যবহার করে চলেছি,
ব্যবহার করছি ক্ষতিকরভাবে।
এর মধ্যে পানীয় জল ও গাছ, যথেষ্ট দাবি রাখে অন্যতম প্রধান উদাহরণের।

আধিপত্য ও অহংবোধঃ

আধিপত্য ফলানোটা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জন্মগত অধিকার,-
এ গ্রহের ভিতর ও বাইরের সমস্ত কিছুর উপরেই যেন চাই আমাদের আধিপত্য।
আর পেতে পেতে আমাদের চাহিদা, লোভ-লালসা কিংবা আশা-আকাঙ্ক্ষা,
পৌঁছে গিয়েছে এমন পর্যায়ে যে-
সেক্ষেত্রে কিছু না পাওয়াটাতেই যেন আজ ছাড়িয়েছে আমাদের সহ্যের সীমা।
মানুষের এ অহংবোধ ক্রমে ধারণ করেছে এক সর্বনাশা জটিল মানসিক রোগ।

পাশাপাশি দীর্ঘকাল ধরে মনের রাজপ্রাসাদে একে আবার,
যত্নে লালন-পালন করেও আসছে সেই মানুষ।
আর এ অহংকারই ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে আমাদেরকে টেনে-হিঁচড়ে,
কিন্তু নিয়ে যাচ্ছে জমকালো অন্ধকার ব্ল্যাকহোলে।
যেখানে লক্ষ-কোটি অণু-পরমাণুতে পরিনত হবে আমাদের অবৈধ চাহিদা,
লোভ-লালসা ও কামনা-বাসনাজনিত সেই মিথ্যে অহংকারগুলো।

ছেলেবেলার শিক্ষা ও জলঃ

ফিরে আসা যাক ছেলেবেলার সেই পড়া-লেখায়।

এ পৃথিবীতে মোট জলের পরিমান যদি ধরা হয় ১০০%.
এর ৭০ থেকে ৭১% জল রয়েছে পৃথিবী পৃষ্ঠে।
বাকি ২৯ থেকে ৩০% স্থলভাগ।
এখন এই ২৯% জলকে যদি হিসেবের সুবিধার্থে ধরে নেওয়া যায় ১০০%.
তবে এর মধ্যে ৯৭% সমুদ্রের লবণাক্ত জল।
২% হিমবাহ ও তুষার হিসেবে আছে জমে কঠিন বস্তু হয়ে।
০.৫% ভূগর্ভস্ত জল।
আর ০.০১% নদী, হ্রদ ও বৃষ্টির জল।

এবারে নিজেই চিন্তা করে দেখুন-
পানযোগ্য এই ০.০১% জল বর্তমান পৃথিবীর ৮২ কোটি ( ২০২৫ এর সেপ্টেম্বর অনুযায়ী )
মানুষের একমাত্র ভরসা।

ভবিষ্যতের জল সংকটঃ

এ পর্যন্ত এসেই না হয় করা যাক এবারে একটা প্রাথমিক ধারণা যে-
এই সীমিত পানীয় জলকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর বাসিন্দারা ঠিক কি ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি
হচ্ছেন, বা হতে পারেন, যাঁরা বিলিয়ন বছর ধরে তাঁদের অস্তিত্বকে বজায় রেখেছে?
কি পরিমাণে মানুষ ঋণী প্রকৃতির অমূল্য এইসব সম্পদের কাছে?

যদি পৃথিবাসীর কাছে প্রকৃতি কোনো দিন চেয়ে বসত এ ঋণের প্রতিদান?

অনুশোচনা বা কৃতজ্ঞতা বোধ তো নেই, বরং উদাসীনতা, অবহেলা, অসচেতনতা কিংবা
স্বৈরাচারীতার মতন সব মারণ ভাইরাস যদি আক্রমণ করে,
তো ভাবুন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পরিণামের সেই মর্মান্তিক ও জীবন্ত চিত্রটা।

( একজন বৃদ্ধা মা সারাদিন জানালার পাশে বসে থাকে অধীর আগ্রহে-
আজ হয়তো ছেলে আসবে দেখতে, দুটো কথা বলবে,
জিজ্ঞাসা করবে- ‘কেমন আছো মা?’
একজন বাবা প্রতিদিন তার ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে চাতক পাখির মতন-
এই বুঝি জ্বলে উঠল মোবাইল স্ক্রিনটা, ভেসে উঠল মেয়ের নাম্বার….
পড়ুনঃ জীবনের শেষ দশায় বাবা-মা কি সন্তানের বোঝা, না আশীর্বাদ? )

বৈজ্ঞানিক ও আন্তর্জাতিক ভিত্তিঃ

একদিকে-
পৃথিবী থেকে ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে আসার লাল সংকেত অবিরত দিয়ে চলেছে মিষ্টি জলের উৎস।
অপরদিকে-
বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে, ফলে, বেড়ে চলেছে সেই পানীয় জলের’ই চাহিদা।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ সাধারণ মানুষ থেকে সরকার,
কারোরই ঘুম এ ব্যাপারে এখনও বিশেষ ভাঙেনি বলাটাই এখানে যুক্তিসংগত।

সচেতনতাকে কোমা থেকে বের করে এনে, পানীয় জলের এ হেন ইচ্ছেস্বাধীন ব্যবহারে
দাঁড়ি টানা যথাশীঘ্র সম্ভব যদি না হয় তো-
আনুমানিক আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে বিশ্বের বোধকরি,
অর্ধেক বা দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে গুণতে হবে এর চুড়ান্ত মাশুল,
অর্থাৎ তীব্র জল সংকটে এ উন্নত ও সাধের সভ্যতার অস্তিত্বকে পড়তে হবে,
ভয়ানক চ্যালেঞ্জ-এর করাল গ্রাসে।
( সূত্রঃ UNESCO, 2023; UN World Water Development Report; WHO, 2022 )

ভয়াবহ পরিস্থিতি ও প্রাথমিক প্রভাবঃ

আর সে সময়ে যখন দাঁতও থাকবে না,
যত্ন-আত্তিরের কোনো প্রশ্ন তো উঠবেই না।
বলাবাহুল্য দাবানলে রূপান্তরের প্রাথমিক প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে বিশ্ববাসী আফ্রিকা ছাড়াও,
চেন্নাই, মহারাষ্ট, রাজস্থান, গুজরাট, কেরাল‌া ও ভারতের অন্যান্য রাজ্যে অনুভব করা শুরু করে দিয়েছে।
অস্বাভাবিক জলসংকটে সেখানে এক বিপুল সংখ্যক মানুষ রয়েছে নাজেহাল অবস্থাতে।

শহরভিত্তিক জল সংকটের উদাহরণঃ

ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এক শহর।
২০১৪ সালে ভয়াবহ খরার ফলে শহরের ভূগর্ভস্থ জলস্তর সেখানে কমে গিয়েছিল এতটাই যে,
সেখানকার বাসিন্দারা তখন মাসে জল সরবরাহ পেতেন মাত্র ২০ দিন।
( তথ্য- NASA- এর GRACE-FO Satellite Data- এর ভিত্তিতে প্রমাণিত। )

মিশরের শহর কায়রো’তে জল সংকট তীব্র।
নীল নদ থেকে জল সরবরাহ হচ্ছে তো ঠিক’ই ,
কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব, অতিরিক্ত সেচ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পানীয় জলের দূষণের জেরে,
সেখানে শহরের জল হয়ে পড়েছে একেবারে দূষিত।
UNICEF- এর ২০২১ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে-
মিশরের জল সংকট একটা গুরুতর সমস্যা, যা শিশুদের স্বাস্থের জন্যে এক মারাত্মক হুমকি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে ২০২৫ নাগাদ সমগ্র মিশরে জল সংকটের সম্ভাবনা রয়েছে অত্যন্ত বেশি।

বিশ্বের বিভিন্ন শহর জল সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে-
উদাহরণস্বরূপ, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা এবং তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলে জল সংকট তীব্র।
জাকার্তা শহরটা ভূগর্ভস্থ জলস্তরের হ্রাস এবং বৃষ্টির জল সংরক্ষণের অভাবে জল সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
ইস্তানবুলে দীর্ঘমেয়াদী খরা ও জলাধারের কম জলস্তরের কারণে জল সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নীতি, আইন ও প্রশাসনিক বাস্তবতাঃ

ভারতীয় সংসদে জল সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তবে তা একাধিকবার কি না?
নেতা-মন্ত্রীরা কতটা এ নিয়ে চিন্তিত?
জাতীয় নিরাপত্তার আলোচনায় এ প্রসঙ্গ সর্বদা আদৌ প্রাধান্য পাবে কি না?
জলের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপের বাস্তব প্রয়োগ বাড়বে কি না?
তা নির্দিষ্টভাবে বলা এ মূহুর্তে সম্ভব নয়।

দেশের জলসংকট নিয়ে বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদরাও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন,
কিন্তু বর্তমানে দেদার চলছে সেই পানীয় জলের’ই অপব্যবহার।

বৈজ্ঞানিক প্রমাণঃ

NASA- এর GRACE-FO স্যাটেলাইট মিশনের তথ্য অনুযায়ী-
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ স্বচ্ছ জলের স্তর ক্রমশই কমছে আশঙ্কাজনকভাবে,
বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম ভারতে।
মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা-এর মতন এর সাথে আবার যোগ হয়েছে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন” ( NASA ),
ও জার্মানির “অ্যারো স্পেস সেন্টার” ( DLR )- এর যৌথ প্রকল্প GRACE-FO এই তথ্য সরবরাহ করছে।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে বিহার পশ্চিমবঙ্গ এবং পাঞ্জাবে,
ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের উপস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই দূষণ মানবস্বাস্থ্যের জন্যে মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে,
যেমন- ত্বকের ক্যানসার, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস।
এছাড়া- জলদূষণ ও জলের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারও জলস্তর হ্রাসের অন্যতম কারন।

“নেচার” পত্রিকায় প্রকাশিত এক সমীক্ষায়ও বলা হয়েছে-
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে আর্দ্র এলাকা হয়ে উঠছে আরও আর্দ্র,
এবং খরাপ্রবণ এলাকা হয়ে উঠছে আরও শুষ্ক।
এছাড়া জলসম্পদের অসম বন্টন, জলদূষণ এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে,
জলস্তরের হ্রাস আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে।

জাতিসংঘের পদক্ষেপঃ

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগ ( UNDESA ) ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত,
‘International Decade for Action- Water for Life’ ঘোষণা করেছিল।
এই দশকের মূল লক্ষ্য ছিল-
আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পানীয় জল ও স্যানিটেশন সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধানে প্রচেষ্টা বাড়ানো।
বিশ্ব জল দিবস, ২২ শে মার্চ ২০০৫, এই দশকের আনুষ্ঠানিক সূচনা চিহ্নিত করে।
তবে, দশকের সমাপ্তির পরও সেই জল সংকটের সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ ২০১৮ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত,
‘International Decade for Action- Water for Sustainable Development’ ঘোষণা করেছে,
যা পূর্ববর্তী দশকের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে।

মানুষের স্থান ও প্রভাবঃ

মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব-
সুতরাং এ পৃথিবীর বাকিরা তাঁদের সম্মান, খাতির, তোয়াজ করবে, প্রাধান্য দেবে,
এটাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা চেয়ে আসছে।
কিন্তু বাকিদের যে অল্প হলেও একটা সম্মান থাকতে পারে,
এটা অধিকাংশ মানুষ যেন চায় না, বা পছন্দ করে না গুরুমস্তিষ্কে রাখতে।

মানুষের অক্সিজেন ব্যবহারের হিসেবঃ

ধরে নেওয়া যাক-
একজন সুস্থ-স্বাভাবিক, প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ প্রকৃতি থেকে প্রতিদিন প্রায় ১১,০০০ লিটার বাতাস গ্রহণ করে।
বাতাসে অক্সিজেন থাকে ২০.৯%.
সেই হিসেবে- ১১,০০০ এর ২০.৯% হয় ২,২৯৯ বা ২,৩০০ লিটার।

কিন্তু একজন মানুষ ২,৩০০ লিটার সবটুকু ব্যবহার করে না,
শরীর প্রকৃতপক্ষে ব্যবহার করে ৫৫০ লিটার বিশুদ্ধ অক্সিজেন।

এখন যদি ধরা হয়-
বাজারে প্রচলিত একটা ৭ লিটার সিলিন্ডার, যাতে অক্সিজেন থাকে প্রায় ১৫০০ লিটার,
এর দাম- ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা।
তবে সেক্ষেত্রে ৫৫০ লিটার অক্সিজেনের দাম পড়ে- প্রতিদিন ২৫৭ থেকে ৩৬৭ টাকা।
এই হিসেব অনুযায়ী বছরে পড়ে- ৯৩,৮০৫ টাকা।
সর্বোচ্চ বার্ষিক খরচ- ১,৩৩,৯৫৫ টাকা।

অর্থাৎ, যদি এই অক্সিজেন বাজার থেকে কিনতে হত,
তবে একজন মানুষের প্রতিদিনের অক্সিজেন খরচ হত- ২৫৭ থেকে ৩৬৭ টাকা।
বছরে প্রায় ৯৪,০০০ থেকে ১,৩৪০০০ টাকা।

এখন মানুষের গড় আয়ু যদি ধরা হয় ৬৫ বছর, তো সেখানে গিয়ে মোট অঙ্কটা দাঁড়ায়-
৬.১ কোটি থেকে প্রায় ৮.৭ কোটি টাকা, অর্থাৎ এই পরিমাণ টাকার অক্সিজেন,
একজন মানুষ সম্পুর্ণ বিনামূল্যে প্রকৃতি থেকে গ্রহণ করলো ৬৫ বছর ধরে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক পৃথিবীর সব মানুষকে।
বর্তমান পৃথিবীর ৮২ কোটি ( ২০২৫ এর সেপ্টেম্বর অনুযায়ী ),
মানুষ সবাই সমান বয়সে দাঁড়িয়ে, সবার গড় আয়ু ৬৫ বছর।
এবারে ৬৫ বছর ধরে, ৮২ কোটি মানুষের, ৬.১ কোটি থেকে ৮.৭ কোটি টাকার অক্সিজেন,
হিসেবটা নয় করেই দেখুন।

আর ফুল, ফল, আসবাবপত্র, জ্বালানি, জীবনদায়ী সব আয়ুর্বেদিক ওষুধ, পুষ্টিগুণ,
ও পরিবেশকে ঠান্ডা রাখা তো নয় দিলাম বাদই।
অথচ একবিংশ শতকের প্রসস্থ বুকে দাঁড়িয়ে শিল্পবিপ্লবের মহড়া যে হারে চলেছে বেড়ে,
তাতে গ্লোবাল ওয়ার্মিংও স্বমহিমায় উঠছে ভাস্বর হয়ে।
আর এর এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে অমানুষিকভাবে বৃক্ষ নিধন যজ্ঞ,
এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ব্যাপারে আজও উদাসীন খোদ সরকার।

কিছু বিশ্বস্ত সংবাদ অনুযায়ী-
হোয়ার্ডার ও ব্ল্যাক মার্কেটার নামধারী কিছু সুযোগের সৎব্যবহারকারী, অর্থলিপ্সু মানুষ,
সুপ্রিম কোর্ট এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে কোনো পরোয়া না করে,
করোনাকালে মুমূর্ষুপ্রায় রোগীদের জন্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার নির্দ্বিধায় বিক্রি করছে অত্যন্ত চড়া দামে।

সর্বশেষঃ

সর্বোপরি এ কথা বলতেই হয় যে-
যুগের পর যুগ ধরে প্রকৃতির বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বিনামূল্যে বহু কিছু দিচ্ছে বলেই মানুষের অবহেলা,
অসচেতনতা বা উদাসীনতা আজও ছুঁয়ে আছে আকাশকে।
আর ঠিক এ কারণেই বোধহয় একটা ভয়াবহ দুর্ঘটনা এ পৃথিবীতে আজ বড় প্রয়োজন।
কারণ এরপরও যদি এ গ্রহে বেঁচে থাকে মানুষের অস্তিত্ব,
তখন আর কাউকে করতে হবে না সচেতন বা সাবধান।
সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণীরা উত্তর খুঁজে নেবে সেই নিদারুণ ও মর্মান্তিক ধাক্কা থেকেই।

 

তন্ময় সিংহ রায়

Join Our Newsletter

We don’t spam! Read our privacy policy for more info.

About Articles Bangla

Check Also

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলঃ মায়ামি, হ্যামিলটন, সান হুয়ানের ত্রিভুজ। গভীর সমুদ্রে রহস্যময় স্টার গেট, জাহাজ ও বিমান নিখোঁজ।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল– সমুদ্রের অদৃশ্য রহস্য ত্রিভুজ!

রহস্যের সামনে নির্বাক সভ্যতাঃ পৃথিবী– এর গর্ভে আজও যে কত বিষ্ময় লুকিয়ে রেখেছে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *