প্লাস্টিকের আবিষ্কার আজ কিভাবে হল পৃথিবীর ভয়ঙ্কর অভিশাপ?

মানুষের অলৌকিক আবিষ্কার আজ মানুষেরই শত্রু।
আর প্রকৃতির সারা দেহ জুড়ে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে অসংখ্য ক্ষত।

হয়তো এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও (AI) একদিন হয়ে উঠবে মানুষের চরম শত্রু।

মানুষ একসময় প্লাস্টিককে বলেছিল ‘সভ্যতার অলৌকিক আবিষ্কার।’
কারণ- এটা হালকা, সস্তা, টেকসই এবং বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী,
যা আমাদের জীবনযাপনকে সহজ করে তুলবে।

বাজারের ব্যাগ থেকে শুরু করে পলিব্যাগ।
এদিকে জামাকাপড়, বোতল, খেলনা, মোড়ক, গাড়ি।
আজ সবজায়গায় নাক গলিয়ে বসে আছে এই প্লাস্টিক।
বলতে পারেন- আজ এমন কিছু খুঁজে পাওয়া মুশকিল,
যেখানে প্লাস্টিকের পৌঁছে যাওয়া নেই।

প্লাস্টিকের জন্মপরিচয়ঃ

১৯০৭ সালের জুলাই মাসে-
লিও বেকেল্যান্ড (Leo Baekeland) নামক একজন বেলজিয়ান-আমেরিকান বিজ্ঞানী,
নিউ ইয়র্কের ইয়োনকার্স (Yonkers) শহরে তাঁর নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে,
প্রথম আবিষ্কার করেন ‘ব্যাকেলাইট’ নামক এক সম্পূর্ণ সিন্থেটিক প্লাস্টিক।

ফেনল ও ফর্মালডিহাইড নামক রাসয়নিক উপাদানগুলোকে,
তাপ ও চাপের সাহায্যে তিনি একত্রিত করে সৃষ্টি করেন এক কঠিন এবং মোল্ডযোগ্য উপাদান,
যার নামকরণ করেন- ‘ব্যাকেলাইট।’
পরবর্তীতে সেই বছরেই ডিসেম্বরে অনুমোদন পায় তাঁর পেটেন্ট।

( দিনের পর দিন চুড়ান্ত নির্দয় হয়ে,
প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় অমূল্য সম্পদের সাথে আমরা,
কিভাবে নির্দ্বিধায় নানাভাবে করে চলেছি যথেচ্ছ দুর্ব্যবহার?
পড়ুনঃ মহাশূন্যে ভাসমান এ নীল গ্রহে একটা মহাপ্রলয় আজ বড় প্রয়োজন! )

বিজ্ঞানের আশীর্বাদ আজ অভিশাপঃ

কিন্তু বিজ্ঞানের এই আশীর্বাদই, আজ সমগ্র পৃথিবীর মানুষের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে,
এক ভয়ঙ্কর অভিশাপ হয়ে।
আর প্রকৃতির শরীর জুড়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত ক্ষত হয়ে।

আজ পৃথিবীর প্রত্যেকটা কোণায়-
মাটি, জল, বায়ু এমনকি মানুষের শরীরেও প্লাস্টিকের উপস্থিতি ধরা পড়ছে।
প্রশ্ন জাগে- আমরা কি সত্যিই আমাদের প্রয়োজন মেটাচ্ছি?
না কি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্বকে ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছি এক বিষের গোলায়?

প্লাস্টিকের ভয়াবহতার প্রমাণঃ

  • ১. ACS Sustainable Chemistry & Engineers (2020):
    এই গবেষণায় বলা হয়েছে যে প্লাস্টিক বর্জ্য নিষ্পত্তি ও এর দূষণের হার সম্পর্কে।
    এও বলা হয়েছে- প্লাস্টিক ব্যাগের কার্যকরী ভাঙনের সময় প্রায় ১০০০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
  • ২. Biological Diversity (2023):
    এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে-
    একটা প্লাস্টিক ব্যাগ ল্যান্ডফিলে প্রায় ১০০০ বছর সময় নিতে পারে ভাঙতে,
    এবং এটা সম্পূর্ণভাবে ভাঙে না, বরং মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়,
    যা পরিবেশে থেকে যায় দীর্ঘস্থায়ীভাবে।
  • ৩. Ethique ( 2023):
    এই ব্লগ পোস্টে বলা হয়েছে যে,
    সবচেয়ে রক্ষণশীল অনুমান অনুযায়ী, একটা প্লাস্টিক ব্যাগ ভাঙতে ৪০০ বছর সময় নেয়।
    যদিও কিছু গবেষণায় এটা ১০০০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

এই তথ্যগুলো থেকে স্পষ্ট যে,
প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবেশগত প্রভাব অত্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী এবং তা দ্রুত ভাঙে না।
এটা আমাদের ও প্রকৃতির জল, মাটি, বায়ু এবং জীববৈচিত্র‍্যের জন্যে একটা ভয়ানক হুমকি।
প্রতিদিনের সুবিধার জন্যে আমরা নিজেরাই ভবিষ্যতে ডেকে আনছি নিজেদের বিনাশ।

কোন প্লাস্টিক বেশি বিপজ্জনক?

সব প্লাস্টিকের মধ্যেই যে লুকিয়ে আছে বিপদের বীজ, তা কিন্তু নয়।
তবে কিছু প্লাস্টিক আছে- যেগুলো
মানুষ ও প্রকৃতির শরীরকে মারাত্মক আঘাত করে।

উদাহরণ-

১. ব্যবহার ভিত্তিক ক্যাটেগরি:

( Single-use-plastics)
* একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক।
যেমন-
পলিথিন ব্যাগ।
স্ট্র।
‘ইথারের মতন পাতলা প্যাকেজিং’- অর্থাৎ- অত্যন্ত পাতলা, স্বচ্ছ প্লাস্টিক ফিল্ম,
যা দিয়ে খাবার, বাজারের পণ্য বা জিনিস মোড়ানো হয়।
যেমন- বিস্কুট, চকোলেট বা চিপস্‌-এর প্যাকেটের বাইরের মোড়ক।
মুদি দোকানের পলিথিন ব্যাগ।
অনলাইন ডেলিভারির শিপিং ফিল্ম।
সুপারমার্কেটের ফল / সবজির মোড়ক।
খাবার কন্টেইনার- ফাস্টফুড বা রেস্তোরাঁর খাবার নিয়ে যাওয়ার বাক্স।
প্লাস্টিক টিফিন বক্স।
ডিসপোজেবল্‌ গ্লাস, বাটি, কাঁটা-চামচ।
দই, আইসক্রিম, নুডলস্‌ বা স্যুপের কাপ।

২. উপাদান ভিত্তিক ক্যাটেগরি:

(Polystyrene-based-single-use-plastics)
উপাদান : Polystyrene/ Styrofoam / Thermocol.
(নিচের আইটেমগুলোও আসলে Single–use, তবে এগুলোকে আলাদা করে দেখানো হয়েছে,
কারণ এগুলো বিশেষভাবে Polystyrene উপাদান দিয়ে তৈরি।)
* থার্মোকল জাতীয় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক।
যেমন- ডিসপোজেবল্‌ কাপ-
কফি, চা, ঠান্ডা পানীয়-এর কাপ।
ডিসপোজেবল্‌ বাটি।
থার্মোকলের বাটি, প্লেট, ট্রে।
ডিম ট্রে।
এগুলো Single–use হলেও, উপাদান ভিত্তিক।

৩. উপাদান ভিত্তিক ক্যাটেগরি:

PVC ( Polyvinyl Chloride)- based plastics.
ব্যবহার: পাইপ, তারের আবরণ, নির্দিষ্ট প্যাকেজিং উপকরণ।
* PVC দিয়ে তৈরি প্লাস্টিক পোড়ালে বা প্রক্রিয়াজাত করার সময় ক্লোরিন ভিত্তিক বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়।
PVC প্লাস্টিকের গঠনে প্রায় ৬০% এর কাছে ক্লোরিন থাকে।
যখন এটাকে গরম করা হয়, পোড়ানো হয় বা ভাঙে,
তখন ক্লোরিন + কার্বন + হাইড্রোজেন মিলে নির্গত হয় দু ধরনের বিষাক্ত গ্যাস-
Hydrogen Chloride (HCL)
(বায়ুতে ছড়িয়ে অ্যাসিড তৈরি করে, ফুসফুস পুড়িয়ে দেয়।)
Dioxins ও Furans ( শীর্ষস্থানীয় ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী রাসয়নিক।)

এক কথায় আপনি বলতে পারেনঃ PVC কোনও সাধারণ প্লাস্টিক নয়-
এটা পোড়ানো মানে খোলা আগুনে বিষ ছড়ানো।

* পরিবেশে গেলে মাটি, জল ও বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ে বিষক্রিয়া,
যা দীর্ঘমেয়াদে মানবদেহ ও প্রাণিকুলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

৪. আকার ভিত্তিক ক্যাটেগরি:

(Micro-plastics & Nano-plastics)
আকার: ৫ মিলিমিটার বা এর চেয়েও ছোটো কণা।
বড় প্লাস্টিক ভেঙে ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়,
আবার অনেক ক্ষেত্রে কসমেটিকস্‌, টুথপেস্ট বা শিল্পজাত পণ্যে,
ইচ্ছাকৃতভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিক মেশানো থাকে।
এগুলো খাবার, বায়ু এমনকি মানুষের রক্তে ও প্লাসেন্টাতেও পাওয়া গেছে,
যার ফলে শ্বাসতন্ত্র ও হরমোনজনিত ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

৫. মিশ্র উপাদান ভিত্তিক ক্যাটেগরি:

(Plastic-Cotton/ Resin Composites)
যেমন-
প্যাকেজিং লেয়ার, সিনথেটিক ফাইবার, মিশ্র রজন উপাদান।
এগুলো দেখতে কাপড় বা কাগজের মতন হলেও,
আসলে প্লাস্টিক ও সেলুলোজ / কটন একসাথে মিশে থাকে,
ফলে পুনর্ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব।
ভাঙতে গিয়ে বা গরমে ক্ষতিকর রাসয়নিক (BPA, ফ্যাথালেটস্‌) ছড়িয়ে,
পরিবেশ ও মানবদেহে প্রবেশ করে।

( সমগ্র মানবজাতি সমেত আমাদের এ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে একদিন,
কিন্তু অসীম মহাবিশ্বের অন্ধকারে তখনও ভেসে বেড়াবে ভয়েজার,
চিরকালের মতন হারিয়ে যাবে আমাদের থেকে!
পড়ুনঃ সীমাহীন মহাশূন্যের রহস্যময় অন্ধকারে একা যাত্রীঃ ভয়েজার! )

কিভাবে প্লাস্টিক প্রতিদিন প্রকৃতিকে শেষ করছে?

মানুষের কর্মযজ্ঞে প্রতিদিন একটু একটু করে প্লাস্টিক শেষ করছে প্রকৃতিকে।

মাটির উর্বরতা ধ্বংস :

প্লাস্টিক মাটিতে সহজে মেশে না।
একটা প্লাস্টিক ব্যাগ সম্পূর্ণ ভাঙতে ৪০০ থেকে ১০০০ বছর পর্যন্ত সময় নেয়।
এই সময়ে এটা সূক্ষ্ম কণায় পরিণত হয়ে মাটির ভেতরে প্রবেশ করে,
যাকে আমরা বলি মাইক্রোপ্লাস্টিক।
এই মাইক্রোপ্লাস্টিক মাটির প্রাকৃতিক গঠন নষ্ট করে।
উর্বরতা শক্তি কমায়।
জল শোষণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়,
এবং কৃষি উৎপাদনশীলতা ধীরে ধীরে হ্রাস করে।

জলের ভয়াবহ দূষণঃ

বিশ্বের প্রায় প্রতিটা সমুদ্র ও নদীতে আজ প্লাস্টিকের দেদার উপস্থিতি ধরা পড়ছে।
এক রিপোর্টে বলা হয়েছে- প্রতি বছর প্রায় ৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে।
মাছ, কচ্ছপ, সামুদ্রিক অন্যান্য প্রাণী, পাখি এসব প্লাস্টিককে খাবার ভেবে খায়,
আর অকালেই ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে।
এছাড়া- প্লাস্টিক ভেঙে ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হলে, তা মাছের দেহের মধ্যে জমে যায়,
আর সেই মাছ যখন মানুষের পাতে এসে পৌঁছায়, তখন তা নির্দ্বিধায় প্রবেশ করে আমাদের শরীরে।
অর্থাৎ- অজান্তেই আমরা ধীরে ধীরে খেয়ে ফেলছি প্লাস্টিক।

বায়ু দূষণঃ

অধিকাংশ দেশেই প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো হয়।
কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় ডাই-অক্সিন, ফিউরান, কার্বন মনোক্সাইডসহ অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়।
এগুলো বাতাসে ছড়িয়ে গিয়ে সৃষ্টি হয় ফুসফুসের রোগ, ক্যান্সার এবং বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুকি,
লাভবান হয় ডাক্তার ও ওষুধ ব্যবসায়ীরা।

প্রাণ-বৈচিত্রের ধ্বংসঃ

বণ্যপ্রাণীরা অনেক সময় প্লাস্টিককে খাবার ভেবে খেয়ে ফেলে।
ভারতের বহু অঞ্চলে দেখা গেছে গরু রাস্তার পাশে প্লাস্টিক খেয়ে মারা যাচ্ছে।
লাখ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী প্লাস্টিক জড়ানো জালে আটকে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়।
এভাবে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে গিয়ে পুরো ইকোসিস্টেম পড়ে ধ্বংসের মুখে।

মানবস্বাস্থ্য বিপর্যয়ঃ

আজ পৃথিবীতে প্রায় প্রত্যেকটা মানুষের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক কম-বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতি সপ্তাহে গড়ে একজন মানুষ প্রায় ৫ গ্রাম প্লাস্টিক খেয়ে ফেলছে- যা একটা ক্রেডিট কার্ডের সমান।
প্লাস্টিকের ক্ষতিকর রাসয়নিক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায় এমনকি,
শিশুদের মানসিক বিকাশেও বাধা সৃষ্টি করে।

কেন প্লাস্টিক ইমিডিয়েট বন্ধ হওয়া উচিৎ?

প্লাস্টিকের ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদী হলেও এর প্রভাব এখনই আমাদের চোখে
ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং, মাটির উর্বরতা কমে যাওয়া, জলের অযোগ্যতা, প্রাণীর অকাল মৃত্যু,
মানুষের জটিল রোগ-
এসব সমস্যার পিছনে এক বড় ভূমিকা রাখছে এই প্লাস্টিক।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, যদি এর বাড়াবাড়ি বন্ধ করা না যায়-
তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো পাবে এমন একটা পৃথিবী, যেখানে না থাকবে বিশুদ্ধ জল,
না থাকবে উর্বর মাটি, আর না পাবে নিরাপদ খাবার।

প্লাস্টিক বন্ধ মানে শুধু পরিবেশ রক্ষাই নয়, রক্ষা পাবে
মানবসভ্যতাও।
আর দেরি হলে-
হতে পারে এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার পৃথিবীতে নিয়ে আসবে আর এক মহামারী।

কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না কেন?

১. অর্থনৈতিক নির্ভরতা

প্লাস্টিক শিল্প বিশ্ব অর্থনীতিতে বসে আছে এক বিশাল অংশ জুড়ে।
কোটি কোটি মানুষ এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
তাই একেবারে বন্ধ করে দিলে কর্মহীন হয়ে পড়বে লক্ষ লক্ষ মানুষ,
যা সরকারগুলোর জন্যে রাজনৈতিকভাবে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

২. বিকল্পের অভাবঃ

যদিও কাগজ, কাপড়, জুট বা বায়োডিগ্রেডেবল পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে,
তবুও এখনও সেগুলো পর্যাপ্ত সস্তা ও সহজলভ্য হয়নি,
ফলে শিল্পকারখানা ও ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকের পরিবর্তে অন্য কিছু ব্যবহার করতে অনাগ্রহী।

৩. কর্পোরেট লবিঃ

বড় বড় প্লাস্টিক উৎপাদনকারী কোম্পানি ও তেল-গ্যাস শিল্প মিলে,
এক সাংঘাতিক শক্তিশালী লবি তৈরি করেছে।
এরা বিভিন্নভাবে সরকারকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে, চাপ দেয় যেন কঠোর আইন কার্যকর না হয়।
অর্থাৎ মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের অর্থনৈতিক স্বার্থে,
দিনের পর দিন ধরে বলি দেওয়া হচ্ছে প্রকৃতিকে।

৪. জনগণের অভ্যেসঃ

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক, এর শিকড় ছড়িয়েছে এত দূর পর্যন্ত,
যে অনেকে এর বিকল্প নিয়ে ভাবতেই চায় না।
বাজারের ব্যাগ, বোতল, প্যাকেট ইত্যাদি- সবই প্লাস্টিক ছাড়া ভাবা যায় না।
জনগণের এই অভ্যেস ধীরে ধীরে এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে,
এটা বন্ধ হোক, হয়তো অনেকেই চায় না।
হয়তো বন্ধ না হওয়ার জন্যে অনেকে প্রস্তুত আন্দোলন করার জন্যেও।

সরকারের ক্ষতি কি?

সরকারের কাছে প্লাস্টিক শিল্প আজ অনেক বড় এক রাজস্বের উৎস।
উৎপাদন থেকে শুরু করে রপ্তানি- সবকিছুতেই ঘুরে বেড়ায় বিপুল অর্থ।
হঠাৎ একে বন্ধ করে দিলে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
পাশাপাশি প্লাস্টিক শিল্প বন্ধ হলে বেকার হবে হাজার হাজার শ্রমিক, বাড়বে সামাজিক অস্থিরতা।
আর রাজনীতিবিদরা সাধারনত স্বল্পমেয়াদি লাভ-ক্ষতির হিসেবেই নিয়ে থাকেন সিদ্ধান্ত,
যেখানে দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত ক্ষতি তাঁদের কাছে অগ্রাধিকার পায় না।

তবে এটাও ঠিক যে, দীর্ঘমেয়াদে যদি প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ না হয়,
তাহলে সবচেয়ে ব্ড় ক্ষতির মুখে পড়বে সরকার নিজেই।
কেননা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত ব্যয়, কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়া-
এসব শেষমেশ চাপ বাড়াবে সরকারের উপরই।

সমাধান ও করণীয়ঃ

  • বিকল্প পণ্যের ব্যবহার বাড়ানো– কাগজ, কাপড়, জুট বা বায়োডিগ্রেডেবল পণ্যকে সস্তা ও সহজলভ্য করতে হবে।
  • সরকারি কঠোর আইন– একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক যথাসম্ভব নিষিদ্ধ করা জরুরী।
  • রিসাইক্লিং ব্যবস্থা জোরদার– উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্লাস্টিক পুনঃব্যবহার করতে হবে।
  • সচেতনতা বৃদ্ধি– সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে, প্লাস্টিক কেবল পরিবেশ নয়, নীরবে ধ্বংস করছে তাঁদের জীবনকেও।
  • আন্তর্জাতিক সহযোগীতা– প্লাস্টিক একটা বৈশ্বিক সমস্যা, তাই বিশ্বজুড়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

    সবশেষেঃ
    প্লাস্টিক আমাদের সভ্যতাকে অনেক সুবিধা দিয়েছে,
    কিন্তু এখন তা পরিণত হয়েছে ভয়ঙ্কর অভিশাপে।

    এর বিষে আমাদের সাধের একমাত্র ঘর পৃথিবীই যদি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়,
    তবে একে তো করতেই হয় দমন।
    আগামী প্রজন্মের নিরাপদ গ্রহের কথা ভেবে-
    আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, নেওয়া জরুরী এক কঠিন ও গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত।
    অন্যথায়- এভাবেই চলতে থাকলে, আমাদের অবর্তমানে,
    আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম পাবে এক বিষাক্ত, অনুর্বর এবং সাংঘাতিক অ-নিরাপদ গ্রহ।

তন্ময় সিংহ রায়

Join Our Newsletter

We don’t spam! Read our privacy policy for more info.

About Articles Bangla

Check Also

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলঃ মায়ামি, হ্যামিলটন, সান হুয়ানের ত্রিভুজ। গভীর সমুদ্রে রহস্যময় স্টার গেট, জাহাজ ও বিমান নিখোঁজ।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল– সমুদ্রের অদৃশ্য রহস্য ত্রিভুজ!

রহস্যের সামনে নির্বাক সভ্যতাঃ পৃথিবী– এর গর্ভে আজও যে কত বিষ্ময় লুকিয়ে রেখেছে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *